প্রতিনিধি, মৌলভীবাজার:মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার লাউয়াছড়া বনে আন্তঃনগর উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেনের ইঞ্জিনসহ ট্রেনের দুটি কামরা লাইনচ্যুত হয়ে যায়। চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা ট্রেনটি সিলেটের উদ্দেশে যাচ্ছিল। বনের ভেতর রেললাইনে পড়ে থাকা গাছের সঙ্গে সংঘর্ষে ট্রেনটি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। ইঞ্জিনের পেছনে ছিল খাবারের কামরা ও আরেকটি কামরায় যাত্রীরা। আগের স্টেশনে যাত্রীরা নেমে যাওয়ায় কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
গতকাল শনিবার বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত এ রিপোর্ট লেখা অবধি দুর্ঘটনায় কবলিত ট্রেনের বগির উদ্ধারকাজ চলমান রয়েছে।
গতকাল শনিবার ভোর ৪টা ৫০ মিনিটে চট্টগ্রাম থেকে সিলেটগামী আন্তঃনগর উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেনটি লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ভেতরে লাইনচ্যুত হয়। উদ্যানের ভেতরে গাছ ভেঙে রেললাইনের ওপর পড়লে ট্রেনের ইঞ্জিনের সঙ্গে ধাক্কা লেগে ইঞ্জিনসহ দুটি বগি লাইনচ্যুত হয়। এর ফলে সিলেটের সঙ্গে সারাদেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়।
এ ঘটনায় কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। তবে শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একজন ও কমলগঞ্জে কিছু যাত্রী প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন বলে জানা গেছে।
উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেনের চালক আবুল কাশেম বলেন, ‘লাউয়াছড়া উদ্যানের ভেতরের আঁকাবাঁকা রেললাইন দিয়ে ট্রেন চালিয়ে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ করে ট্রেনের ২০ গজ সামনে একটি বড় গাছ ভেঙে পড়ে। আমি দ্রুত ইমার্জেন্সি ব্রেক চাপি। পরে ট্রেন গাছের সঙ্গে ধাক্কা লেগে থামে। এতে ট্রেনের ইঞ্জিন ও দুটি বগি লাইনচ্যুত হয়।’
শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার উৎপল কুমার সিংহ শেয়ার বিজকে বলেন, ‘শনিবার ভোর ৪টা ৩৫ মিনিটের দিকে শ্রীমঙ্গল স্টেশন থেকে সিলেটগামী উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেনটি ছেড়ে যায়।’
লাউয়াছড়া বনে উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেনের এই দুর্ঘটনার জন্য শ্রীমঙ্গল স্টেশন কর্তৃপক্ষকে দায়ী করছেন ওই ট্রেনের কয়েকজন যাত্রী। যাত্রীরা এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, ‘দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ হাল্কা বৃষ্টি শুরু হয় দিবাগত রাত সাড়ে ৩টা থেকে, কিন্তু শ্রীমঙ্গল স্টেশন থেকে গাড়ি ছাড়ে ৪টা ৩৫ মিনিটের দিকে। যেহেতু লাউয়াছড়া একটি জাতীয় উদ্যান, সেহেতু স্টেশন কর্তৃপক্ষের আগে এই বনের ভেতরের লাইনগুলোর খবরাখবর নিয়ে ট্রেন ছাড়া উচিত ছিল। যেহেতু এটি দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকা।’
এদিকে লাউয়াছড়ায় ট্রেন দুর্ঘটনার জন্য সিলেট থেকে ঢাকাগামী কালনী ও জয়ন্তিকা এক্সপ্রেসের যাত্রা বাতিল করা হয় এবং শ্রীমঙ্গল রেলস্টেশনে সিলেটগামী আন্তঃনগর পারাবত এক্সপ্রেস ট্রেন সিলেট যেতে না পেরে শ্রীমঙ্গলে অবস্থান করে। এসময় সিলেট ও কুলাউড়া অভিমুখী যাত্রীরা বিকল্প উপায়ে তাদের নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছান।
কুলাউড়া রেলস্টেশন মাস্টার মো. রুমান আহমদ শেয়ার বিজকে জানান, ‘যাত্রা বাতিল হওয়া চার ট্রেনের টিকিট ফেরত দিয়ে টাকা নিয়ে যেতে যাত্রীদের এরই মধ্যে জানানো হয়েছে। রেলওয়ের ঢাকাগামী ও সিলেটগামী কালনী এক্সপ্রেস এবং জয়ন্তিকা এক্সপ্রেসের চারটি যাত্রা বাতিল করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। ফলে ট্রেন দুটি ঢাকায় যাওয়া-আসা মিলিয়ে দুবার করে মোট চারবারের যাত্রা বাতিল হলো। শ্রীমঙ্গল থেকে পারাবত এক্সপ্রেস ট্রেনটি ঢাকার পথে চলাচল করবে।’
শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে থানার এসআই মীর সাব্বির শেয়ার বিজকে বলেন, ‘ট্রেনে আমাদের পুলিশ স্কট রয়েছে। এসআই ফখরুলের টিমসহ ফায়ার সার্ভিস ছিল, সবাই মিলে যাত্রীদের নিরাপদ স্থানে যেতে সহযোগিতা করেছি। কোনো হতাহত দেখিনি। যাত্রীদের হাল্কা জখম থাকতে পারে, তবে গুরুত্বপূর্ণ জখমের কোনো যাত্রী আমরা দেখিনি। দুই বগিতে আনুমানিক ৬০ থেকে ৭০ যাত্রী ছিল। বাকি বগিগুলো দাঁড়ানো অবস্থায় ছিল।’
কুলাউড়া রেলস্টেশন সাব অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার আনিসুজ্জামান শেয়ার বিজকে বলেন, ‘সাড়ে ৪টা থেকে ৫টার ভেতর খবর পেয়ে আমরা কুলাউড়া থেকে রওনা হই। আমরা সাড়ে ৬টায় ঘটনাস্থলে পৌঁছেছি। উদ্ধারকাজ চলমান রয়েছে। আমরা আশা করছি তিন থেকে সাড়ে তিন ঘণ্টার ভেতর ট্রেন চলা স্বাভাবিক হয়ে যাবে। আজ ভোরে প্রচণ্ড ঝড় হয়েছে, ঝড়ে গাছ পড়ে ইঞ্জিনের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে।’
এদিকে দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছান শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার শহীদুল হক মুন্সি। তিনি শেয়ার বিজকে বলেন, ‘তার পুরো টিম সার্বিক নিরাপত্তায় নিয়োজিত রয়েছে। উদ্ধারকাজ চলমান রয়েছে। আশা করছি, দ্রুতই উদ্ধারকাজ শেষ করতে পারব।’