চঞ্চল রহমান: বেশ কিছুদিন ধরেই বাঁ হাতের চোটে ভুগছিলেন। তাতে এশিয়া কাপের স্কোয়াডে থাকা নিয়েই শঙ্কা ছিল। তবে মনের শক্তি আর দেশের টানে ২২ গজে ব্যাট হাতে নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তামিম ইকবাল। গত পরশু কথা রেখেছিলেন তিনি। কিন্তু দ্বিতীয় ওভারেই সুরঙ্গা লাকমালের শেষ বলে আবার পুরোনো চোটে পড়েন। এক পর্যায়ে মাঠ ছেড়ে তার জায়গা হয় হাসপাতালে। স্ক্যান রিপোর্টে মেলে দুঃসংবাদ। ২-৩ মাস খেলতে পারবেন না। কিন্তু দলের প্রয়োজনে কারও কথা না শুনে শেষদিকে আবার ব্যাট হাতে মাঠে নামেন তামিম। তাতে অবাক হয়ে যান সবাই। এটা কী করে সম্ভব? তবে দলের প্রয়োজনে তার এমন সাহসী সিদ্ধান্ত ঠিকই লাখো হৃদয় ছুঁয়েছে।
তামিম ব্যাট হাতে নেমেই সেই সুরঙ্গা লাকমালের বল মোকাবিলা করেন। ডান হাতে বেশ আস্থার সঙ্গে খেলেন তিনি। কোনো রান নেননি। সে সময় আসলে এ বাঁহাতি অন্য প্রান্তে থাকা মুশফিকুর রহীমকে দারুণ সঙ্গ দিয়েছিলেন। এক পর্যায়ে তাদের ১০ম উইকেট জুটি ২.৩ ওভারে দলীয় স্কোরবোর্ডে যোগ করে ৩২ রান। তাতে লঙ্কানদের সামনে ২৬১ রানের চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেয় বাংলাদেশ। পরে মাশরাফি বিন মুর্তজা, মোস্তাফিজুর রহমান ও মেহেদি হাসান মিরাজদের অসাধারণ বোলিং তোপে হাথুরুর শিষ্যেরা মাত্র ১৩৪ রানে গুটিয়ে যায়। টাইগাররা ১৩৭ রানের বিশাল জয়ে এশিয়া কাপের পথচলা শুরু করে। তবে সবকিছু পেছনে ফেলে সবার মুখে শুধুই তামিমবন্দনা। কিন্তু কেনইবা সেটা হবে না?
ভাঙা হাতে ব্যাটিংয়ে নামার নিদর্শন বিশ্বক্রিকেট খুব একটা দেখেনি। তবে গত পরশু তামিম যেটা দেখালেন, তা সত্যিই প্রশংসাযোগ্য। ম্যাচ-পরবর্তী পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে তামিমের সাহসিকতা ও নিবেদনের প্রসঙ্গ তোলেন ধারাভাষ্যকার রমিজ রাজা। সে সময় সতীর্থকে নিয়ে মাশরাফি গর্ব করে বলেন, ‘আমি শুধু ওকে নিয়ে একটা কথাই বলতে পারিÑলোকের উচিত ওকে মনে রাখা। এখানে যে কোনো কিছু ঘটতে পারত, যা ওর ক্যারিয়ারে প্রভাব ফেলতে পারত।’
তামিমকে ব্যাটিংয়ে পাঠানোর সিদ্ধান্তটা নাকি দলেরই ছিল। তবে এ সিদ্ধান্তে অধিনায়ক মাশরাফির অনুপ্রেরণা ছিল সবচেয়ে বেশি। অষ্টম উইকেট পড়ার পর সিদ্ধান্ত হয় আরেক উইকেট পড়লে এবং মুশফিক যদি স্ট্রাইকে থাকেন, তাহলে তামিম মাঠে ফিরবেন। সহজ হিসাবÑমুশফিক স্ট্রাইকে থাকলে তামিমকে চোটগ্রস্ত আঙুল নিয়ে ব্যাট করার ঝুঁকি নিতে হবে না। তামিম ননস্ট্রাইকে থেকে মুশফিককে সঙ্গ দেবেন আর মুশফিক একা ব্যাটিং করে বাকি কাজটুকু সারবেন। কিন্তু সে হিসাবটাই কঠিন হয়ে দাঁড়ায় ৪৭তম ওভারের পঞ্চম বলে। মুশফিকের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউটে কাটা পড়েন মোস্তাফিজুর রহমান। মুশফিক তখন ননস্ট্রাইকে। আর ওভারের এক বল বাকি। অধিনায়ক মাশরাফির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তখন আর মাঠে নামার কথা নয় তামিমের। আর ২২৯ রানেই গুটিয়ে যাওয়ার কথা বাংলাদেশের। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তেমনটা হতে দেননি তামিম। নিজের সিদ্ধান্তে সবাইকে অবাক করে মাঠে নেমে পড়েন তিনি। এরপর পরের ঘটনা তো ইতিহাস।
মাশরাফির অনুপ্রেরণায়ই ভাঙা হাতে ব্যাটিংয়ে নামেন। ম্যাচ শেষে এ ব্যাপারে এই বাঁহাতি বলেন, ‘মোস্তাফিজ ওই ওভারের পঞ্চম বলে আউট হওয়ায় মুশফিক ননস্ট্রাইকে ছিল। সিদ্ধান্তটা তাই আমাকে নিতে হয় এবং আমি একটা বলের মুখোমুখি হয়ে মুশফিককে স্ট্রাইকে পাঠাতে চেয়েছি। মাশরাফি ভাই (মাঠে ফেরার) আত্মবিশ্বাস জুগিয়েছেন। সারাক্ষণ আমার সঙ্গে কথা বলেছেন এবং ব্যান্ডেজ করা আঙুলের জন্য গ্লাভসও কেটে দিয়েছেন। কিন্তু মুশফিক তখন ননস্ট্রাইকে থাকায় সিদ্ধান্তটা আমাকে নিতে হয়েছে।’
তামিমের এমন সাহসী সিদ্ধান্তে মাশরাফি অভিভূত, ‘আমি আসলে তামিমকে বলার জন্য কোনো ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না। তামিমকে হ্যাটস অফ, সে ওই সময় ব্যাট করতে গেছে। আরেকটি ব্যাপার হচ্ছে, তামিম সে সময় ব্যাট করতে নামায় মুশফিকও আত্মবিশ্বাস পেয়েছে ওই ৩০-৩২ রান করার জন্য।’
তবে ইনিংসের মেরুদণ্ড ছিল যে জুটির, সেটির কথাও ভোলেননি মাশরাফি। মুশফিক ও মিথুনের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন তিনি, ‘চাপের মধ্যে ওরা সত্যিই খুব ভালো ব্যাট করেছে। প্রথম ওভারে দুই উইকেট হারালে সব সময়ই চাপ থাকে। তামিমও ব্যাট করতে পারেনি। তারপরও মুশফিক ও মিঠুন যেভাবে ব্যাট করেছে, সেটা ছিল দারুণ।’