তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিতে ফেসবুক এক জনপ্রিয় যোগাযোগমাধ্যমের নাম, যা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির দুনিয়ায় যুক্ত করেছে এক নতুন মাত্রা। বিশ্বের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তের দেশগুলোর মানুষ যুক্ত হতে পারছে এই যোগাযোগমাধ্যমে, যাতে বিশ্বায়ন প্রক্রিয়া যেন এখন ডালভাতের মতো অতি সাধারণ একটি ব্যাপার হয়ে গেছে। বিশ্বের নানা দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, অর্থনীতি, শিক্ষা ও চিকিৎসা ব্যবস্থা, খাদ্যাভ্যাস, জীবনযাপনের ধরন ইত্যাদি পরিচিতি পাচ্ছে বিভিন্ন দেশের জনগোষ্ঠীর মাঝে, যার ফলে বিশ্বের যেকোনো প্রান্তের তথ্য পেতে আর বেগ পেতে হয় না।
বর্তমানে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন শিক্ষামূলক কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করছে ফেসবুক ব্যবহার করে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো তাদের বিজ্ঞপ্তি খুব সহজেই প্রচার করছে ফেসবুক প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে। মুমূর্ষু রোগীর জন্য রক্তের সন্ধান, আর্থিক সাহায্য প্রার্থনাÑএ ধরনের কাজগুলোও অতি অল্প সময়ে বহু মানুষের কাছে ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে এই যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে। আবার বিভিন্ন পণ্য ও সেবার প্রচারণা, ক্রয়-বিক্রয়, বিভিন্ন কর্মসংস্থানের নিয়োগ, বিজ্ঞপ্তি প্রচার প্রভৃতি সম্পাদনেও ফেসবুক রাখছে ব্যাপক অবদান। বহুসংখ্যক ব্যবসায়ী তাদের ব্যবসার কাজকর্ম পরিচালনা করছেন এই যোগাযোগমাধ্যমে, যা আমাদের দেশের অর্থনীতির জন্য বেশ ভালো একটি সংযোজন। বর্তমানে ফেসবুকে রিলস আপলোড করে বহু মানুষ আয়ও করতে পারছেন। দেশি-বিদেশি বহু সংবাদমাধ্যম তাদের সংগৃহীত সংবাদ পরিবেশন করছে ফেসবুকে, যা আমাদের তথ্যপ্রাপ্তির প্রক্রিয়াকে করেছে সহজ থেকে সহজতর। বিনোদন লাভের ক্ষেত্রেও ফেসবুকের যেন জুড়ি নেই। বর্তমানে প্রায় সব বয়সের মানুষই ব্যবহার করছে ফেসবুক।
এতসব সুবিধা ও ভালো দিক থাকা সত্ত্বেও ফেসবুকের কিছু ক্ষতিকর দিকও রয়েছে। যেসব বিষয়ের কুফল আমরা উপলব্ধি করতে শুরু করেছি। প্রথমত, ফেসবুকে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের মূল্যবান সময়ের বিরাট একটা অংশ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বিশেষত শিক্ষার্থীরা তাদের পড়াশোনার সময় নষ্ট করে ব্যবহার করছে ফেসবুক। আবার বিভিন্ন দেশের অশ্লীল ভিডিও কনটেন্ট ও পোশাক-আশাকের নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতিতে। সম্প্রতি ফেসবুক প্ল্যাটফর্মে সংযোজিত রিলস বা স্বল্পদৈর্ঘ্যরে ভিডিওগুলোয় অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়ছে। কোনো ব্যক্তির ছোট ছোট ভুল অনেক সময় খুব বড় করে প্রচার করা হচ্ছে ফেসবুকে। এর ফলে সে ব্যক্তির সম্ভ্রমহানি ঘটছে। আবার গুজব ছড়িয়ে বিড়ম্বনা ঘটানোর জন্যও দোষী হচ্ছে এই প্ল্যাটফর্ম। কেননা বহু ব্যবহারকারীর সংযুক্তি থাকার কারণে কোনো সত্য কিংবা অসত্য তথ্য খুব দ্রুতই ছড়িয়ে পড়ে ব্যাপকভাবে। তাছাড়া বিভিন্ন প্রতারক শ্রেণি তাদের ফাঁদ পেতে রেখে প্রতারণাও করছে ফেসবুকে ব্যবহার করে। নানা ধরনের অপরাধজনক ও ঘৃণ্য কর্মকাণ্ড অনেকেই ফলাও করে প্রচার করছে এতে, যা মানুষকে অপরাধজগতে ধাবিত করতে প্রভাবক হিসেবে কাজ করছে। আবার ফেসবুক ব্যবহারে কোনো বাঁধাধরা বয়সসীমা বা বিধিনিষেধ না থাকায় কোমলমতি শিশু-কিশোররাও জড়িয়ে পড়ছে ফেসবুকের ভালো-মন্দের সংমিশ্রণে। যে সময়ে তারা মাঠে মাঠে দৌড়ে বেড়াবে, খেলাধুলা করবে, সে সময়টা ব্যয় করছে ফেসবুকে স্ক্রল করে। ফেসবুক আসলে যোগাযোগ প্রযুক্তির চরম উৎকর্ষের এই যুগে একটি আশীর্বাদ বটে। তবে আমরা অর্থাৎ ব্যবহারকারীরা এটিকে রূপান্তরিত করেছি আশীর্বাদ আর অভিশাপের সংমিশ্রণে। কাজেই আমাদের সতর্ক হতে হবে। এ প্ল্যাটফর্মের কোন বিষয় বা দিকগুলো আমাদের জ্ঞানের পরিধিকে প্রসারিত করে, আর কোন বিষয়গুলো আমাদের ক্ষতিসাধন করে, তা শনাক্ত করতে হবে আমাদেরই, যাতে এটি সর্বদা এবং সর্বাবস্থায় আমাদের জন্য কেবল আশীর্বাদ বয়ে আনে।
সাইদুর রহমান শাহিদ
শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়