Print Date & Time : 2 August 2025 Saturday 7:51 pm

‘লাম্পি স্কিন ডিজিজ’ ভাইরাস ছড়াচ্ছে রংপুরে

জে আই সমাপ্ত, লালমনিরহাট: প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের মধ্যেই ভয়ঙ্কর আরেক ভাইরাস ‘লাম্পি স্কিন ডিজিজ’ দেখা দিয়েছে রংপুরে। ইতোমধ্যে রংপুর বিভাগের আট জেলায় এ ভাইরাসে অর্ধ লক্ষাধিক গরু আক্রান্ত হয়েছে, আর মারা গেছে প্রায় তিন শতাধিক। এ রোগের প্রতিষেধক না থাকায় দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন এলাকার মানুষ।

সরেজমিন দেখা যায়, ‘লাম্পি স্কিন ডিজিজ’ নামে এই ভাইরাস বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে। তবে গ্রামগুলোয় প্রাণিসম্পদ দপ্তরের কোনো তৎপরতা না থাকায় সঠিক পরামর্শ ও চিকিৎসার অভাবে দিন দিন বাড়ছে আক্রান্ত গরুর সংখ্যা। মারা যাচ্ছে প্রতিনিয়ত গরু। নিরুপায় হয়ে গ্রাম্য পশু ডাক্তারদের কাছে চিকিৎসা নিতে গিয়ে দিতে হচ্ছে গরুপ্রতি দুই থেকে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত বাড়তি খরচ। অথচ চিকিৎসা করেও সুস্থ হচ্ছে না গরু, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষক।

রংপুর বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, উত্তরের আটটি জেলার প্রতিটি উপজেলায় এখন অধিকাংশ গবাদি পশু এ ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে। কোনো প্রতিষেধক না থাকায় পালিত গরু নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন এই অঞ্চলের মানুষ। অনেকে না বুঝেই পল্লি চিকিৎসককে মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে হচ্ছেন ক্ষতিগ্রস্ত। তবে একমাত্র সচেতন থাকাই এই রোগের প্রতিকার বলে দাবি প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের।

রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার ইকরচালির কৃষক খলিল জানান, তার তিনটি গরু আক্রান্ত হয়েছে। আসন্ন কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে যতœ করে গরু বড় করেছি একটু বেশি দাম পাওয়ার আশায়। কিন্তু গরুর সারা শরীরে গোটা গোটা দানার মতো ফুলে যাওয়ায় কোরবানির হাটে দাম পাওয়া যাবে না বলে আশঙ্কা তার।

একই এলাকার কৃষক সালাম জানান, এ ভাইরাসে গরু-বাছুরগুলো আক্রান্ত হলে দুই থেকে তিন দিনের মধ্যেই মারা যাচ্ছে। তাদের এলাকায় গত কয়েক দিনে সাতটি গরু ও বাছুর মারা গেছে।

লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার খামারি শাহ আলম জানান, তার পালিত ১০টি গরুর মধ্যে চারটি গরু এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। প্রাণিসম্পদ দপ্তরের কোনো চিকিৎসক এলাকায় না আসায় তিনি নিরুপায় হয়ে লালমনিরহাট জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরে গরু নিয়ে যায়। কিন্তু তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়ায় তিনদিন পরেই মারা যায় তার গরু।

এছাড়া আদিতমারী উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের কৃষক ফারুক, আশরাফুল আলমসহ একাধিক কৃষকের অভিযোগ, এ ভাইরাসে গরু আক্রান্ত হওয়া থেকে আজ পর্যন্ত প্রাণিসম্পদ বিভাগের কোনো চিকিৎসক দেখতে বা পরামর্শ দিতে আসেনি। ফলে নিরুপায় হয়ে গ্রাম্য পশু ডাক্তারদের চিকিৎসা নিতে গিয়ে দিতে হচ্ছে গরুপ্রতি দুই থেকে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ। অথচ চিকিৎসা করেও সুস্থ হচ্ছে না গরু।

রংপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. এএসএম সাদেকুর রহমান জানান, তাদের অফিসে প্রতিদিনেই আক্রান্ত গরু নিয়ে আসছেন খামার মালিক ও কৃষকরা। যথাসাধ্য চিকিৎসা সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছেন তারা। তবে মশা-মাছির আক্রমণ থেকে রক্ষা ও পরিচর্যা করতে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে খামার মালিক ও কৃষকদের।

লালমনিরহাট জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. সাইদুর রহমান জানান, ‘লাম্পি স্কিন ডিজিজ’ ভাইরাসে আক্রান্ত প্রতিটি গবাদিপশু সরেজমিন পরিদর্শন করে চিকিৎসা নিশ্চিত করার জন্য মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। পাশাপাশি ভাইরাসের বিস্তার রোধে জরুরিভিত্তিতে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে। তবে জনবল সংকট থাকায় কিছুটা সমস্যা হচ্ছে।

রংপুর বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ডা. মো. হাবিবুল হক জানান, এ ভাইরাসে আক্রান্ত রোগের প্রকৃত কোনো ওষুধ নেই। এ রোগটি এর আগে ঝিনাইদহে দেখা দিয়েছিল। এখন রংপুর বিভাগের প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় ছড়িয়ে পড়েছে। এ পর্যন্ত প্রায় এক লাখ গরুকে চিকিৎসা সেবা দিয়েছি। তবে কৃষকদের সচেতনতা বাড়াতে হবে। আক্রান্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নিকটস্থ প্রাণিসম্পদ হাসপাতালে আক্রান্ত গরু আনা হলে চিকিৎসা দিয়ে রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব বলে তিনি জানান।