লালমনিরহাটের হাইওয়ের সরু সড়কে শত ঝঞ্ঝা

ফারুক আলম, লালমনিরহাট: দেশের অন্যতম বৃহৎ স্থলবন্দর লালমনিরহাটের বুড়িমারী। সারাদেশের সঙ্গে সড়ক পরিবহনের একমাত্র বৈধ যোগাযোগমাধ্যম সড়ক বিভাগের এ হাইওয়ে। লালমনিরহাটের সড়ক ও জনপদের ১৮০ কিলোমিটার সড়কের ১২১ কিলোমিটারের হাইওয়ে ব্যবহার হয় আমদানি-রপ্তানি কাজে। বুড়িমারী স্থলবন্দরের ৯৮ শতাংশ আমদানি পণ্য পাথর; যা আসে ভারত, ভুটান ও নেপাল থেকে। এছাড়া পাট, বাঁশ, ভুট্টা, ধান সহজে পচনযোগ্য শাকসবজি স্থানীয় হাটবাজার থেকে যায় সারাদেশে। আন্তঃজেলার আমদানি-রপ্তানিও চলে এ মহাসড়কে। ফলে সড়কটির গুরুত্ব অপরিসীম। পুরো সড়কে খাদাখন্দে ভরা থাকায় আমদানি-রপ্তানি কাজের প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়িয়েছে সড়কটি। একমাত্র ভরসাই একমাত্র প্রতিবন্ধকতা। সড়কটি দিয়ে ৩০ চাকার ট্রাক, নৈশকোচসহ প্রতিদিন দুই হাজারের অধিক ভারী যান চলে।

এ সড়কটিতে রয়েছে নানা প্রতিবন্ধকতা। অগণিত রেল ক্রসিং। গেটম্যান, গেটবার লক্ষ্য করা যায় না। ২০০-এর বেশি বাঁক। যেগুলোয় প্রায় দিনই ঘটছে দুর্ঘটনা। হাতিবান্ধার বড়খাতা, হাতিবান্ধা, কালীগঞ্জ, ভুল্যারহাট, আদিতমারী, লালমনিরহাট সদর ও পাটগ্রামসহ সব স্থান ও উপজেলাজুড়ে খানাখন্দে ভরা। অল্প বৃষ্টির স্বল্প পানি সরানোর জন্য নেই ড্রেনেজ ব্যবস্থা। নেই রোড ডিভাইডার। স্কুল-কলেজের সামনে নেই জেব্রা ক্রসিং, ফুটওভার ব্রিজ। যার ফলে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। মৃত্যু, পঙ্গুত্ব, ছোট বাহন বিকল হচ্ছে। বড় ট্রাক ও নৈশকোচ ঢুকে যাচ্ছে বসতভিটাসহ সড়কের ঢালুতে।

সড়ক ও জনপদ বিভাগের তথ্যমতে, হাইওয়ে ওয়াস আউট (ধুয়ে বিলিন হওয়া) হয়নি। এ সড়কটি দিয়ে ভারী যানবাহন চলার কারণে ক্ষতি হয়। কী পরিমাণ ক্ষতি হলো, এটা নিরূপণের মতো টুলস আমাদের কাছে নেই। আর আমরা সেভাবে অ্যাটাচমেন্টও করি না। যেখানেই ক্ষতি, সেখানেই ক্ষুদ্র মেরামত। সেগুলো ইট, বালুর বস্তা, বাঁশ দিয়ে আপাতত রক্ষা। এ কাজগুলো সওজ বিভাগ নিজেরাই করে থাকে। ইট, বালু, মাটি, লেবার সবকিছুই আমাদের রেডি থাকে। যেখানে যখন সমস্যা হচ্ছে, সেখানেই তারা কাজ করছে।

বড় গাড়ির চালকরা বলছেন, চাকা নষ্ট হয়। রাস্তার পরিস্থিতি ভালো নয়। গাড়ি চালাতে কষ্ট হয়। চাকা ডুবে যায়। দুর্ঘটনার হার বৃদ্ধি পেয়েছে।

মোটরবাইক চালক হাসান আলী বলেন, মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে চলাচল করতে হচ্ছে জীবন-জীবিকার জন্য। বুড়িমারী একটা স্থলবন্দর। বন্দরে চলাচলের জন্য এ রাস্তা নয়। একটু বৃষ্টি হলে যেন মাছ চাষ করা যায়।

স্থানীয় পুরোহিত সঞ্জ অধিকারী বলেন, প্রতি মুহূর্তে দুর্ঘটনা ঘটছে। সন্ধ্যার পর চলাচল করা যায় না। বড় বড় পাথরের গাড়ি চলে। নাইট কোচ চলে।

তবে সড়ক ও জনপথ বিভাগ বলছে, লালমনিরহাটের হাইওয়ে সড়কটি জেলা পরিষদ করেছিল। কালের বিবর্তনে সেটা এখন সড়ক বিভাগের। এর পুরো জায়গা জনগণের। সড়ক বিভাগ উন্নয়ন প্রকল্প ছাড়া জমি অধিগ্রহণ করতে পারে না। পুরোনো সড়কের ২৩ ফুট ব্যবহার হচ্ছে। চলতি মাসে ১৬টি বাজার স্পটে ৪ কিলোমিটার সরকের কাজ হবে; যা হবে কংক্রিটের। বিটুমিনের ন্যাচার এ সড়কে  নেই। তবুও তারা ৬ কিলোমিটার সড়কের কাজ করবে বিটুমিন দিয়ে। বছরের শেষ নাগাদ জেলা শহরে প্রবেশদ্বারে মহেন্দ্রনগর থেকে এয়ারপোর্টের পাশ দিয়ে বাইপাশ সড়ক হবে। লালমনিরহাট থেকে সাপ্টিবাড়ি পর্যন্ত ৭.৩ মিটারের সড়ক প্রশস্ত করা হবে। এটা নভেম্বরেই টেন্ডার করবে। বর্তমানে ৩৪ কোটি টাকার কাজ শুরু হবে। সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী খালিদ সাইফুল্লাহ সরদার বলেন, তিনভাবে কাজ করা হচ্ছে তিন বছর পরপর। প্রাণান্তর চেষ্টা করছি রাস্তাটি ভালো রাখার। আমি পাটগ্রাম থেকে ভিজিট করছি। প্রতিদিন তিনটি গাড়ি কাজ করছে। একজন মানুষও যেন খারাপ রাস্তা দিয়ে না চলাচল করে। টিমকে সেভাবেই বলা হয়েছে।