Print Date & Time : 16 September 2025 Tuesday 8:08 pm

লালমনিরহাটে কমছে বীজের আমদানি নির্ভরতা

ফারুক আলম, লালমনিরহাট: প্রতি বছর ধানের উৎপাদন, বিক্রি, চাষাবাদের খরচ মেটানো ও দুর্যোগ মোকাবিলা করে নাজেহাল কৃষক। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে কৃষিসংশ্লিষ্ট সরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি দেশি-বিদেশি নানা উন্নয়ন সংস্থা কাজ করছে। ধানের সঙ্গে সাথি ফসল থেকে শুরু করে মাছ চাষ করছেন কৃষকরা।

এরই ধারাবাহিকতায় গত বছর থেকে লালমনিরহাটে স্থানীয় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা নজীর, কৃষি দপ্তর ও হার্ভেস্ট প্লাস বাংলাদেশ জিংকসমৃদ্ধ ব্রি-৭৪ আর ব্রি-৮৪-এর চাষ বাড়াতে কাজ করছে।

কৃষি দপ্তর বলছে, গত বছর মোট ধান উৎপাদনের দুই শতাংশ এ জাতের ধান চাষ হয়েছে। চলতি বছর জেলা কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, এবার লালমনিরহাটের ৪৭ হাজার ৬৫০ হেক্টর ধানি জমির মধ্যে ৩ হাজার ৮২০ হেক্টর জমিতে ব্রি ধান-৭৪ চাষ করা হয়েছে, যা মোট ধান উৎপাদনের ৯ শতাংশ।

এ ধান চাষাবাদে জড়িতদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ব্লাস্ট ও পোকামাকড়ের উৎপাত আর হাইব্রিড জাতের ধান বীজের আমদানি-নির্ভরতা কমাতে লালমনিরহাটে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে জিংকসমৃদ্ধ ব্রি ধান-৭৪। দ্রুত উৎপাদন জাতের উচ্চ ফলনশীল এ ধান চাষে যেমন সার ও কীটনাশক কম লাগে, তেমনি উৎপাদিত ধান থেকে সংরক্ষণ করা যায় বীজ। আর আগাম কাটামারা হওয়ায় নানাভাবে লাভবান হচ্ছেন কৃষক।

ধান গবেষণা কেন্দ্রে উদ্ভাবিত স্বল্পমেয়াদি জাত ব্রি-৭৪। ভিটামিন ও জিংকসমৃদ্ধ অধিক ফলনশীল এ ধান উৎপাদনে সময় লাগে প্রায় চার মাস। ফলে একই জমিতে বছরে তিনবার ফসল চাষ করা যায়। আর এ ধানে ব্লাস্ট ও পোকামাকড়ের উৎপাতও কম। তাই লাভবান হচ্ছেন কৃষক। অন্য ধানের তুলনায় ব্রি-৭৪ উৎপাদনে খরচ কম, দাম বেশি।

কালিগঞ্জ উপজেলার মদাতী ইউনিয়নের কৃষক দুলু মিয়া বলেন, অন্য জাতের ধান চাষে অনেক ঝুঁকি। ব্রি-৭৪ চাষে ব্লাস্ট ও মাজড়াসহ অন্য পোকার আক্রমণ নেই বললে চলে। কৃষক ফজিলা বানু বলেন, অন্য ধান চাষে লেবার খরচ বেশি। আমাদের মতো গরিব কৃষক এ ধান চাষ করে বেশি মুনাফা করছেন।

কৃষক মিজানুর রহমান বলেন, আমাদের জমিগুলো আলু ও তামাক চাষ করার পর পড়ে থাকে। সেই জমিতে অন্য ফসল চাষ করা যায় না। কিন্তু আমরা খুব কম সময় ও কম খরচে ব্রি-৭৪ ধান চাষ করছি। এর বীজ আমরা নিজেরাই সংরক্ষণ করছি।

এ ধানের উদ্ভাবক দলের প্রধান ড. খায়রুল বাশার। তিনি ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক ও হার্ভেস্ট বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর। তিনি বলেন, মানুষের শরীরে যে পরিমাণ জিংকের প্রয়োজন তার প্রায় ৭০ ভাগ পাওয়া যায় ব্রি-৭৪ থেকে।

নজীরের নির্বাহী পরিচালক বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল হক সরকার বলেন, মঙ্গাপীড়িত এ জনপদের মানুষ উচ্চমাত্রার জিংকসমৃদ্ধ ব্রি-৭৪-এর ভাত খেয়ে স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে পারবে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের শিশুদের শক্তি ও মেধা বিকাশে কাজ করবে। এ কারণে আমরা ব্রি-৭৪ চাষে উৎসাহ দিচ্ছি। কৃষিবিদরা বলেন, হাইব্রিড ধানের বীজ আমদানিনির্ভর। কিন্তু ব্রি ধান-৭৪-এর বীজ কৃষক নিজেরাই সংরক্ষণ করে চাষাবাদ করতে পারবেন।

জেলা কৃষি বিভাগের উপপরিচালক শামীম আশরাফ বলেন, অন্য ধান হেক্টরে উৎপাদিত হয় পাঁচ থেকে ছয় টন। ব্রি-৭৪-এর উৎপাদন সাত টনের বেশি।