লালমনিরহাটে বাড়ছে চুরি-ছিনতাই

ফারুক আলম, লালমনিরহাট: লালমনিরহাটে প্রতিদিনই চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। বাসাবাড়ি থেকে স্বর্বস্বটুকুও হারাচ্ছেন। বাড়িতে রাখা নগদ টাকা, গহনাই চুরি হচ্ছে। তথ্য মতে, গত ১৫ দিনে লালমনিরহাট সদর ও আদিতমারি উপজেলায় ৩০টির বেশি বাড়ি চুরি গেছে। পুলিশের পক্ষ থেকে রাত ১২টার পরে বাজার বন্ধ নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে কয়েকজন সন্দেহভাজনকে আটক করেছে পুলিশ। এখন পর্যন্ত চুরির সঙ্গে সম্পৃক্ততা প্রমাণ হয়নি। এতে জেলাবাসী আতঙ্কিত। জেলার মাদক, জুয়াড়িদের দায়ী করছেন সচেতন মহল ও বিশেষজ্ঞরা।

পুলিশের পক্ষ থেকে সন্দেহভাজনদের আটক এবং ছেড়ে দেয়ার ঘটনা ঘটছে। এতে উভয় সংকটে রয়েছে জেলাবাসী। প্রতিদিনই কোনো না-কোনো মানুষকে আটক করা হচ্ছে। সর্বশেষ ২২ জুলাই আদিতমারীর সৈনিক পাড়া থেকে এখলাস নামের একজনকে পুলিশের হাতে তুলে দেয় বিক্ষুব্ধ জনতা।

জানা যায়, এখলাসের বাড়ি সিলেটে। কয়েক বছর আগে হাঠাৎ আদিতমারীর নামুড়ী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বিশাল বাড়ি করেন। এলাকায় বিভিন্ন উন্নয়ন কাজের কথা বলেন। চড়া মূল্যে জমি কেনেন। বাড়ির ভেতরে মাঝে মাঝেই বড় বড় খাওয়াদাওয়ার আসর বসান। যেখানে এলাকার কোনো লোকই থাকেন না। এলাকাবাসীর সঙ্গেও কোনো সম্পর্ক রাখেন না বলে জানান এলাকাবাসী।

এখলাসের আটকের বিষয়ে আদিতমারী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোজাম্মেল হক বলেন, আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করছি।

চুরি হয়েছে এমন বাড়ির মালিক, পাড়া মহল্লার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বেশিরভাগ চুরি হচ্ছে ১৫ থেকে ২০ মিনিটের মধ্যেই। এখন আর কেউ বাড়ি ছেড়ে হাঁটতে, নাশতা করতে, বাজার করতে বের হচ্ছেন না। বাড়ি থেকে বের হলেই চুরি হবে, এমন আতঙ্ক চেপে বসেছে।

কামরুনেছা মহাবিদ্যালয়ের শিক্ষক রাশেদ রহমান বলেন, সন্ধ্যা ৮.৩০ মিনিটে বাজারে যাই। কিছুক্ষণ পর বাড়ি ফিরে দেখি গেট, দরজা, আলমিরারসহ সব কিছুর তালা ভাঙা। নগত ১০ হাজার টাকা ও ২ ভরি স্বর্ণালঙ্কার চুরি হয়েছে। একজন এসআই আর কনস্টেবল এসে দেখে গেছেন। আর কোনো তৎপরতা দেখছি না।

স্থানীয় শিক্ষক মাহসিনুল হক বলেন, ভবঘুরে লোক বাজারে ঘোরাফেরা করে। বেকারত্ব একটি কারণ। মাদক-নেশার টাকার জোগান হচ্ছে না। এমন সব কারণে চুরি বাড়ছে। একই সময়ে, একই স্টাইলে চুরি হচ্ছে। চোরদের টার্গেট স্বর্ণালঙ্কার আর নগদ টাকা।

এ বিষয়ে লালমনিরহাট জেলা পুলিশের এডিশনাল এসপি রবিউল ইসলাম বলেন, এটার বিষয়ে আমরা কাজ করছি। প্রথমে যে ভাবে বেড়েছিল এখন তা কমছে।

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এ বি এম নুরুল্লাহ বলেন, গ্রাম থেকে শহর পর্যন্ত জুয়া বেড়েছে। জুয়াকেন্দ্রিক মাদকসহ ছোট ছোট অপরাধ বেড়েছে। এগুলোর পেছনে কারণ যদি দেখি, সামাজিক কন্ট্রোল কমে গেছে। যে সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ করার কথা, সেগুলোগুলো কাজ করতে পারছে না। যে ট্রাডিসনগুলো আমাদের ধরে রাখত সেগুলো হারিয়ো গেছে। তিনি বলেন, মোবাইলে পাবজি বা জুয়া খেলে অনেক কিছু হারাচ্ছে, কিন্তু পরিবার জানতেই পারছে না। ন্যাশনাল প্রাইড তৈরি করতে হবে। কীভাবে ফেইদ, প্রাইড অব ন্যাশন তৈরি করা যায় তার ওপর কাজ করতে হবে। যার কিছু হারাবার নেই, সেই বেশি ভয়ঙ্কর। তাদের বিনোদনের মাধ্যম-মাঠ নেই। তারা জুয়া মাদকে বিনোদন খুঁজছে। বিনোদন, বেকার সমস্যার সমাধানসহ রাষ্ট্রের কাজে তাদের যুক্ত করতে হবে। পারিবারিক বন্ধন বাড়াতে হবে।