Print Date & Time : 2 September 2025 Tuesday 6:53 pm

লাল ফিতার দৌরাত্ম্য সরিয়ে দেয়া হবে: প্রধানমন্ত্রী

শেয়ার বিজ ডেস্ক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকার সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) এবং স্থানীয় বেসরকারি বিনিয়োগ উভয়ের জন্য ব্যবসায়িক পরিবেশ উন্নয়নের ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে। বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) এখন বাংলাদেশের জাতীয় ব্যবসায়িক পরিবেশ কর্মসূচি ‘বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ক্লাইমেট ইমপ্রুভমেন্ট প্রোগ্রাম’ (বিআইসিআইপি) বাস্তবায়ন করছে। এর আওতায় আগামী ৫০ সপ্তাহে ৫০টি সংস্কার এবং আগামী তিন বছরে ১০০টি বিনিয়োগ পরিবেশ সংস্কার করা হবে।

তিনি বলেন, ‘যেন ওই লাল ফিতার দৌরাত্ম্য না থাকে, সেটা সরিয়ে দেয়া হবে। সিদ্ধান্ত হবে, সঙ্গে সঙ্গে বাস্তবায়ন হবে।’

গতকাল শনিবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে তিন দিনব্যাপী ‘বাংলাদেশ বিজনেস সামিট ২০২৩’ উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন তিনি। ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে এ সম্মেলন হচ্ছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটির সহযোগিতায় (বিডা) এফবিসিসিআই এ সম্মেলনের আয়োজন করছে। সূত্র: বাসস।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ ‘বেজা’ ২০৩০ সালের মধ্যে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণের লক্ষ্যে কাজ করছে। এসব অর্থনৈতিক অঞ্চলে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা এবং প্রণোদনাও দেয়া হচ্ছে।

বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয় শক্তিশালী রপ্তানি কৌশল ও শিল্পনীতি বাস্তবায়নের জন্য কাজ করছেÑউল্লেখ করে তিনি বলেন, যা শিল্পের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির পাশাপাশি চমৎকার নীতি নির্দেশনাও দেবে।

মাত্র ১৪ বছরে সবার সহযোগিতায় আওয়ামী লীগ সরকার বাংলাদেশের ব্যাপক পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছেÑউল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, শক্তিশালী সামষ্টিক অর্থনৈতিক মৌলিক বিষয়গুলো এবং বাণিজ্য সংহতকরণ বাংলাদেশকে গত ১০ বছরে গড়ে ৬ দশমিক ৫ শতাংশের বেশি হারে জিডিপি অর্জনে সহায়তা করেছে। এমনকি কভিড-১৯ আঘাত হানার ঠিক আগে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৮ শতাংশের বেশি হারে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়। মাথাপিছু আয় মাত্র এক দশকে তিনগুণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৮২৪ মার্কিন ডলারে। জিডিপির আকার ২০০৬ সালের ৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে বর্তমানে ৪৬৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে দারিদ্র্যের হার ৪১ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশে হ্রাস পেয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, যদি প্রতি বছর গড়ে ৫ শতাংশের বেশি হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন অব্যাহত রাখা যায়, তাহলে আশা করা হচ্ছে ২০৪০ সাল নাগাদ বাংলাদেশ একটি ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতিতে পরিণত হতে সক্ষম হবে।

রূপকল্প-২০৪১ অনুযায়ী তার সরকার এফডিআইসহ বেসরকারি বিনিয়োগকে উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনের প্রধান হাতিয়ার হিসেবে নিয়েছে উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, আমরা ২০৩১ সালের মধ্যে জিডিপিতে বেসরকারি বিনিয়োগের অনুপাত ৩১ দশমিক চার-তিন শতাংশে উন্নীত করতে চাই। বাংলাদেশে এখন জ্বালানি, পানি, লজিস্টিকস ও পরিবহন খাতে ৩৫০ বিলিয়ন ডলারের অবকাঠামো গড়ার সুযোগ রয়েছে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোয় ডিজিটাল খাত বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২০২২ সালে আইসিটি খাতে প্রায় ১ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয় হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, ২০২৫ সাল নাগাদ এ খাতে রপ্তানি আয় ৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হবে। পাশাপাশি বাংলাদেশে প্রায় ৬ লাখ ৫০ হাজার ফ্রিল্যান্সার রয়েছেন, যা বিশ্বব্যাপী অনলাইন শ্রমের দ্বিতীয় বৃহত্তম সরবরাহকারী।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার ৩৮টি হাই-টেক পার্ক নির্মাণ করছেÑযেগুলো বিদেশি বিনিয়োগের জন্য উš§ুক্ত রাখা হয়েছে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন, সৌদি বাণিজ্যমন্ত্রী ড. মাজিদ বিন আবদুল্লাহ আল কাসাবি, ভুটানের শিল্প, বাণিজ্য ও কর্মসংস্থানমন্ত্রী কর্মা দরজি, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার উপমহাপরিচালক রাষ্ট্রদূত জিয়াংচেন ঝাং, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি এবং প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। স্বাগত বক্তব্য দেন এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রার ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্র ও প্রদর্শিত হয়।

এদিকে গতকাল ময়মনসিংহের ঐতিহাসিক সার্কিট হাউস মাঠে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিএনপি বলে বাংলাদেশটাকে নাকি আমরা ধ্বংস করে দিচ্ছি। এই যে এতগুলো প্রকল্প উদ্বোধন করলাম, এগুলো ধ্বংসের নমুনা কি? তা আপনারাই বলুন। তারা তো এতিমদের টাকা মেরে খায়। তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা চলমান। আমরা বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াই, তারা এসে কমায়। আমরা প্রতিটি ঘর আলোকিত করতে চাই। আমরা যদি ডিজিটাল বাংলাদেশ না করতাম তাহলে তারা এতকিছু বলতে পারত না। ২০২১ সালে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে, তা আমাদের ধরে রাখতে হবে। এখন আমাদের লক্ষ্য স্মার্ট বাংলাদেশ করার।’

২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এসে লুটেপুটে খায়, সে সময় খাদ্য ঘাটতি ছিল উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘আল্লাহর রহমতে এখন আর খাদ্য ঘাটতি নেই। এক কোটি মানুষকে আমরা মাত্র ৩০ টাকা কেজিতে চাল কিনতে পারার সুযোগ করে দিয়েছি। অনেককে ১০ টাকা কেজিতে চাল দিচ্ছি। আবার যাদের একেবারে সামর্থ্য নেই তাদের বিনামূল্যে চাল দেয়া হচ্ছে। আমরা চাই কোনো মানুষ কষ্ট না পাক।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘খাদ্য ঘাটতি দূর করতে এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি থাকবে না। নিজেদের খাদ্য নিজেদের উৎপাদন করতে হবে। যাতে করে আমাদের কারও কাছে হাত পাততে না হয়। আমাদের মাটি উর্বর, তাই আমরা নিজেরা ফসল ফলাব। আমার নিজের সব অনাবাদি জমি চাষের আওতায় এনেছি। মূল কথা হচ্ছে, উৎপাদন বাড়াতে হবে। ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল করে দিচ্ছি, সেখানে যুবসমাজের কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে। বিনা জামানতে যুবসমাজকে ঋণ দেয়া হচ্ছে, যাতে করে তারা অন্যদের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিতে পারে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ময়মনসিংহ চমৎকার একটি বিভাগ, যেখানে শিক্ষা-স্বাস্থ্য-কৃষি-খাদ্য উৎপাদন সবকিছুতেই এগিয়ে যাবে। আমরা ময়মনসিংহ বিভাগ করেছি। যদি করোনাভাইরাস না হতো, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ না থাকত তাহলে এই বিভাগের কার্যক্রম আরও উন্নত হতো। বিভাগ হিসেবে ময়মনসিংহে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় হবে। আমরা তা করে দেব। মানুষের জন্য আমাদের কাজ করাই মূল লক্ষ্য।’

প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের আগে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এহতেশামুল আলমের সভাপতিত্বে জনসভায় আরও বক্তব্য দেনÑআওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওয়াবদুল কাদের, প্রেসিডিয়াম সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক ও শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।