পেটের ডান দিকে ওপরের অংশে বাড়তি চাপ লাগা, ব্যথা হওয়া কিংবা চাকা অনুভব করাÑপ্রাথমিক অবস্থায় এমন উপসর্গ থাকতে পারে। অনেক সময় যকৃৎ বড় হয়ে গিয়ে জন্ডিস হতে পারে। পেটের ওপরের ডান অংশে লিভার বা যকৃতের অবস্থান। খাবার হজমের জন্য বিপাকক্রিয়া ঘটে যকৃতে। যকৃৎ হজমে সহায়ক পিত্তরস তৈরি করে। শরীরের বিভিন্ন বর্জ্য নিষ্কাশনে ভূমিকা রাখে। অতিরিক্ত চিনিকে যকৃৎ গ্লাইকোজেন হিসেবে জমা রাখে, যা সঞ্চিত শক্তির অন্যতম উৎস। অনেক সময় পেটের আলট্রাসনোগ্রাম করলে দেখা যায়, যকৃতের আকার বড় হয়ে গেছে। তখন মনে প্রশ্ন জাগে, যকৃৎ কেন বড় হয়?
কারণ জানা জরুরি: হেপাটাইটিস এ, বি, সি, ডি এবং ই ভাইরাসের সংক্রমণে যকৃৎ বড় হতে পারে। এ ছাড়া শরীরে হারপিস সিম্পলেকস, ইবস্টেন বার ও সাইটোমেগালো ভাইরাসের সংক্রমণ হলেও যকৃৎ বড় হয়।
ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণ যেমন সালমোনেলা টাইফি, মাইকোব্যাকটেরিয়াম টিউবারকিউলোসিস প্রভৃতির কারণে যকৃৎ বড় হতে পারে। কিছু ছত্রাকের সংক্রমণেও যকৃৎ বড় হয়ে থাকতে পারে।
শরীরের বিপাকপ্রক্রিয়ায় জটিলতা দেখা দিলেও যকৃৎ বড় হয়ে যায়। যকৃতে অতিরিক্ত চর্বি জমা হলে চিকিৎসায় বিলম্ব হলে ক্যানসার হতে পারে। তখন যকৃৎ বড় হয়ে যায়। অন্যান্য জায়গার টিউমার কিংবা ক্যানসার যকৃতে ছড়িয়ে পড়তে পারে। তখন যকৃৎ বড় হতে পারে। সিস্ট, টিউমার কিংবা ক্যানসার হলেও যকৃৎ স্বাভাবিকের চেয়ে বড় হয়। ফুসফুস, হƒৎপিণ্ড ও রক্তনালির কিছু রোগের কারণেও অতিরিক্ত রক্ত জমে যকৃৎ বড় হতে পারে। দীর্ঘদিন মদ্যপানেও যকৃৎ বড় হয়।
উপসর্গ: অনেক সময় যকৃৎ বড় হয়ে গেলেও তেমন কোনো উপসর্গ দেখা যায় না। ফলে বোঝা যায় না, যকৃতের সমস্যা কি না। পরীক্ষার মাধ্যমে এ সমস্যা শনাক্ত হয়। তবে পেটের ডান দিকে ওপরের অংশে বাড়তি চাপ লাগা, ব্যথা হওয়া কিংবা চাকা অনুভব করাÑপ্রাথমিক অবস্থায় এমন উপসর্গ থাকতে পারে।
যকৃৎ বড় হয়ে গিয়ে জন্ডিস হতে পারে। এ কারণে চোখসহ পুরো শরীর হলুদাভ হওয়া, রক্ত বমি ও রক্ত পায়খানা হওয়া, চুলকানি দেখা দেয়া, পেট ও পায়ে পানি আসার মতো উপসর্গ থাকতে পারে।
করণীয়: শুরুতেই যকৃৎ বড় হওয়ার প্রকৃত কারণ শনাক্ত করতে হবে। এজন্য পরিপাকতন্ত্র ও যকৃৎ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।
ডা. মোহাম্মদ জাকির হোসেন
সহযোগী অধ্যাপক, পরিপাকতন্ত্র, লিভার ও প্যানক্রিয়াস বিভাগ
স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ