উচ্চ আদালতে মামলা জট

লিয়াজোঁ অফিস, ফোকাল পয়েন্ট কর্মকর্তা নিয়োগের পরামর্শ

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক: উচ্চ আদালতে বৃহৎ করদাতা ইউনিটের (এলটিইউ) আওতাধীন ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের ১ হাজার ৫১টি মামলা চলমান; যাতে জড়িত রাজস্ব প্রায় ১৮ হাজার ৯৯০ কোটি টাকা। এসব মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করতে অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ের সঙ্গে আন্তঃযোগাযোগ বৃদ্ধির জন্য বৃহৎ করদাতা ইউনিটের লিয়াজোঁ অফিস স্থাপন করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। শুধু এলটিইউ নয়, দেশের সব কর অঞ্চলে ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের বিপুল পরিমাণ মামলা উচ্চ আদালতে চলমান। এসব মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করে রাজস্ব আদায় করতে আদালতের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখতে প্রতিটি কর অঞ্চলে ফোকাল পয়েন্ট কর্মকর্তা নিয়োগের পরামর্শও দেয়া হয়েছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার এলটিইউর সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় এই পরামর্শ দেয়া হয়। এলটিইউর আয়োজনে ‘উচ্চতর আদালতে আয়কর মামলা দাখিল নিষ্পত্তি ও করণীয়’Ñশীর্ষক সভায় সভাপতিত্ব করেন এলটিইউ কমিশনার মো. ইকবাল বাহার। এতে মুখ্য আলোচক ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ মোরশেদ। সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন এনবিআরের সদস্য (লিগ্যাল অ্যান্ড এনফোর্সমেন্ট) আহাম্মদ উল্যাহ এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন সদস্য (কর আপিল ও অব্যাহতি) ইকবাল হোসেন।

মতবিনিময় সভার শুরুতে এলটিইউর সাংগঠনিক কাঠামো, রাজস্ব আদায় ও উচ্চতর আদালতে অনিষ্পন্ন মামলার পরিসংখ্যান বিষয়ে উপস্থাপনা ছিল। সভার মুখ্য আলোচক শেখ মোহাম্মদ মোরশেদ উচ্চতর আদালতে আয়কর সংক্রান্ত রেফারেন্স/রিট মামলা দাখিলের পদ্ধতি ও নিষ্পত্তি সংক্রান্ত কার্যক্রম এবং এ সংক্রান্ত বিষয়ে উদ্ভূত সমস্যা পারস্পরিক সহযোগিতা ও সহজীকরণের ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, উচ্চতর আদালতে রাজস্ব-সংক্রান্ত মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য বিজ্ঞ অ্যাটর্নি জেনারেলের দপ্তরের সঙ্গে আন্তঃযোগাযোগ বৃদ্ধির জন্য বৃহৎ করদাতা ইউনিটের লিয়াজোঁ অফিস স্থাপন করা যেতে পারে। আলোচনায় উঠে আসে বৃহৎ করদাতা ইউনিটের আওতায় এক হাজারের বেশি মামলা জট ও হাজার হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আটকে রয়েছে। যার দ্রুত নিষ্পত্তি হওয়া প্রয়োজন বলে কর কর্মকর্তারা মনে করেন। একই সঙ্গে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির (এডিআর) ওপর গুরুত্বারোপ করেন তারা। আলোচনা শেষে বৃহৎ করদাতা ইউনিটে কর্মরত অতিরিক্ত কর কমিশনার, যুগ্ম কর কমিশনার, উপকর কমিশনাররা উš§ুক্ত আলোচনায় অংশ নেন।

উম্মুক্ত আলোচনা পর্বে বিভিন্ন প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে ‘উচ্চতর আদালতে আয়কর মামলা দাখিল নিষ্পত্তি ও করণীয়’ বিষয়ে কর্মকর্তারা সম্যক জ্ঞান লাভ করেন। প্রধান অতিথি ও বিশেষ অতিথি ভবিষ্যতে এ ধরনের মতবিনিময় সভা অব্যাহত রাখার অনুরোধ করেন এবং ২০৪১ সালে উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে জাতীয় রাজস্ব আহরণ ত্বরান্বিত করতে এই মতবিনিময় সভা ফলপসূ ভূমিকা রাখবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

এলটিইউর হিসাব অনুযায়ী, উচ্চ আদালতে ১০৫১টি মামলা বিচারাধীন। এতে জড়িত করের পরিমাণ ১৮ হাজার ৯৯০ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৮৭০টি রেফারেন্স মামলায় ১৭ হাজার ৩২৮ কোটি টাকার কর জড়িত। যার মধ্যে করদাতা কর্তৃক রেফারেন্স মামলা রয়েছে ৪৭৬টি। এর মধ্যে বিতর্কিত জড়িত রাজস্বের পরিমাণ ৮ হাজার ৭১৮ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। কর বিভাগ কর্তৃক রেফারেন্স মামলার সংখ্যা ৩৯৪টি, যাতে বিতর্কিত জড়িত রাজস্বের পরিমাণ ৮ হাজার ৫৩৯ কোটি ৯০ লাখ। আর বিতর্কিত কর প্রত্যর্পণের পরিমাণ ৭০ কোটি ৩৯ লাখ টাকা।

অন্যদিকে, ১১৬টি রিট মামলা রয়েছে, যাতে বিতর্কিত জড়িত রাজস্বের পরিমাণ ৬১৬ কোটি ৩৩ লাখ টাকা ও বিতর্কিত কর প্রত্যর্পণের পরিমাণ ৯ কোটি ১৯ লাখ টাকা। আর ৬৫টি লিভ টু আপিল মামলায় জড়িত রাজস্বের পরিমাণ এক হাজার ৩৬ কোটি ২৪ লাখ টাকা।