নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রাত্যহিক লেনদেনের ওপর নয়, বছরের সর্বোচ্চ ব্যালান্সের ওপর বর্তমানে প্রচলিত আবগারি শুল্ক দ্বিগুণ হচ্ছে। আসন্ন ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে এমন প্রস্তাব আসছে। এক বছরের মধ্যে একজন গ্রাহকের হিসাব থেকে যত লেনদেন হয়, তার মধ্য থেকে সর্বোচ্চ পরিমাণের ওপর নির্দিষ্ট হারে আবগারি শুল্ক কাটা হয়। আগামী অর্থবছর থেকে এ শুল্ক দ্বিগুণ করার প্রস্তাব থাকছে আসন্ন বাজেটে। এ শুল্ক সর্বনি¤œ ৫০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১৫ হাজার টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব চূড়ান্ত করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এ নিয়ে গ্রাহকদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
এবিআর প্রদত্ত আবগারি শুল্ক বাড়ানোর প্রস্তাব নিয়ে বেশ কয়েক দিন ধরে আলোচনা-সমালোচনা চলছে। কেউ মনে করছেন, ব্যাংকের প্রতি লেনদেনে অর্থ কেটে নেওয়া হবে, আবার কেউ বলছেন- আগের চেয়ে এবার তা বাড়িয়ে নেওয়া হবে। তবে প্রকৃত বিষয় হলো, বছরে একবার আবগারি শুল্ক নেয় সরকার। এবারও তাই নেওয়া হবে, তবে তা আগের চেয়ে বাড়িয়ে দ্বিগুণ করার প্রস্তাব করেছে এনবিআর। তবে তা লেনদেনের ওপর নয়, এক বছরের লেনদেনের মধ্যে যে সময় সর্বোচ্চ ব্যালেন্স থাকবে সেই ব্যালান্সের ওপর শুল্ক কাটা হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনবিআরের এক সদস্য শেয়ার বিজকে বলেন, ব্যাংক লেনদেনের ওপর আবগারি শুল্ক কর্তনের কোনো সুযোগ নেই। মূলত বছরে একবারই এটা কর্তন করা হয়। তবে তা লেনদেনের ভিত্তিতে নয়, বরং সর্বোচ্চ ব্যালান্সের ওপর ভিত্তি করে এটি কর্তন করা হয়।
তথ্যমতে, সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত জমা দেওয়া বা উঠানো হলো কোনো ধরনের শুল্ক নেওয়া হবে না। তবে ২০ হাজার এক টাকা থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত ক্রেডিট ও ডেবিট (যেটি বেশি হবে) ব্যালান্সের ওপর আবগারি শুল্ক ২০০ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। বর্তমানে আলোচিত ব্যালেন্সে ১৫০ টাকা আবগারি শুল্ক নেওয়া হয়।
এদিকে এক লাখ এক টাকা থেকে দশ লাখ টাকা পর্যন্ত ক্রেডিট ও ডেবিট ব্যালেন্সে ৫০০ টাকা বর্তমানে আবগারি শুল্ক নেওয়া হয়। আগামী বাজেটে তা দ্বিগুণ করে এক হাজার টাকা নেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। দশ লাখ এক টাকা থেকে এক কোটি টাকা পর্যন্ত ক্রেডিট অথবা ডেবিট ব্যালান্সের আবগারি শুল্ক নেওয়া হয় এক হাজার ৫০০ টাকা। আগামী বাজেটে তা দ্বিগুণ করে তিন হাজার টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এক কোটি এক টাকা থেকে পাঁচ কোটি টাকা পর্যন্ত ক্রেডিট বা ডেবিট ব্যালান্সে আবগারি শুল্ক নেওয়া হয় সাত হাজার ৫০০ টাকা। আগামী বাজেটে আবগারি শুল্ক বাড়িয়ে ১৫ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। পাঁচ কোটি এক টাকা থেকে তদূর্ধ্ব ক্রেডিট অথবা ডেবিট ব্যালান্সে বর্তমানে ১৫ হাজার টাকা আবগারি শুল্ক নেওয়া হয়। আগামী বাজেটে এ শুল্ক বাড়িয়ে দ্বিগুণ অর্থাৎ ৩০ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
এ সম্পর্কে খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ শেয়ার বিজকে বলেন, সামনে বাজেট। আর এ মুহূর্তে আবগারি শুল্ক বাড়ানোর খবরে গ্রাহকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়বে এটাই স্বাভাবিক। তবে বাজেট ঘোষণা করা হোক, দেখা যাক তাতে যদি আবগারি শুল্ক বাড়ানো হয় তখন এ বিষয়ে কথা বলা যাবে।
তিনি আরও বলেন, যদি আবগারি শুল্ক বাড়ানো হয় তাহলে গ্রাহকদের মধ্যে অসন্তুষ্টি বাড়বে।
এনবিআর সূত্রে জানা যায়, ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরের বাজেটে দেশের বাইরে যাতায়াতের জন্য বিমানে উঠতে গেলেও দ্বিগুণ আবগারি শুল্ক দিতে হবে প্রত্যেক ফ্লাইটে। চলতি অর্থবছরে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট ও কানেকটিং ফ্লাইটের প্রতি সিটে প্রত্যেকবারের ক্ষেত্রে ৫০০ টাকা, এক হাজার টাকা এবং এক হাজার ৫০০ টাকা করে আবগারি শুল্ক আরোপ করা আছে। আগামী বাজেটে এগুলো পর্যায়ক্রমে ৫০০ টাকা, দুই হাজার টাকা এবং তিন হাজার টাকা করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরের বাজেটে এনবিআরের চূড়ান্ত করা শুল্ক প্রস্তাবে এরই মধ্যে সই করেছেন অর্থমন্ত্রী এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান।