Print Date & Time : 10 September 2025 Wednesday 1:16 am

লোকসানের হিসাব শুরু: একদিনে বিবিএস কেব্ল্সের দর কমেছে ১০%

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: পুঁজিবাজারে সর্বশেষ তালিকাভুক্ত বিবিএস কেব্লের শেয়ার নিয়ে উল্টো হিসাব কষতে শুরু করছেন বিনিয়োকারীরা। দৈনিক এ শেয়ারের কত শতাংশ দর বাড়লো, এতদিন যারা সেই হিসাব মেলাতেন এখন তারা দর কমার হিসাব করছেন। গতকাল এক দিনেই এ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দর কমে প্রায় ১০ শতাংশ বা ১৪ টাকা ৬০ পয়সা। দিনশেষে প্রতিষ্ঠানটির নাম উঠে আসে দরহ্রাসের তালিকায় প্রথম স্থানে। ফলে হাতে থাকা শেয়ার নিয়ে বিনিয়োগকারীরা এখন দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। দেরিতে তদন্ত কমিটি গঠন করার জন্য বিএসইসির ওপরও ক্ষুব্ধ তারা।

বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে আলাপ করলে তারা জানান, শেয়ারের দর যখন অস্বাভাবিক হারে বাড়তে থাকে তখনই বিএসইসির টনক নড়া উচিত ছিল। কিন্তু তারা কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। তখন পদক্ষেপ নিলে শেয়ারের দর আজ এ পর্যায়ে আসতে পারত না।

এ বিষয়ে আলাপ হয় বিনিয়োগকারী লুৎফর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘শুনেছিলাম, শেয়ারটি ২০০ টাকায় যাবে। সেজন্য ১৪৫ টাকা দরে দুই হাজার শেয়ার কিনেছিলাম। দুই দিন না যেতেই মূল পুঁজি থেকে ১৫ শতাংশের মতো কমে গেছে। এখন এই শেয়ার নিয়ে বড় দুশ্চিন্তায় আছি।’

এ তো গেল বিনিয়োগকারী লুৎফল রহমানের কথা। তার মতো অবস্থা আরও অনেকের।

তবে বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিনিয়োগকারীরা তাদের ভুলের মাশুল দিচ্ছেন। এই শেয়ার অনেক আগেই অতিমূল্যায়িত হয়ে গেছে। বিষয়টি তাদের আগেই বোঝা উচিত ছিল।

জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএসইর এক কর্মকর্তা বলেন, ‘লোকসান হলেই বিনিয়োগকারীদের টনক নড়ে। তখন তারা বিএসইসিসহ আমাদের দোষারোপ করে। এটা ঠিক নয়। কোথায় বিনিয়োগ করছেন, সেটা তাদের আগেই বোঝা উচিত।’

অন্যদিকে ‘বিবিএসই কেব্ল্ ইউনিট-২’ নামে নতুন কোম্পানিটির লোগো ব্যবহার করে বিদেশি উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে চুক্তি করেছে বিবিএস কেব্ল্ লিমিটেড। এটি পৃথক কোম্পানি হলেও ব্যবসা সম্প্রসারণের খবরে পুঁজিবাজারে সদ্য তালিকাভুক্ত বিবিএস কেব্ল্সের শেয়ারের দাম ‘অস্বাভাবিক’ হারে বেড়ে যায়। এটিও বাজারে শেয়ারদরকে প্রভাবিত করেছে। ক্ষতির শিকার হয়েছেন সাধারণ বিনিয়োগকারী। তবে এর পেছনেও কারসাজি রয়েছে বলে মনে করছেন বাজারবিশ্লেষকরা।

এ বিষয়ে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ বলছে, বিবিএস কেব্ল্ লিমিটেড পৃথক কোম্পানি হলেও বিবিএস কেব্্ল্ বেশি পরিচিত। নতুন কোম্পানিকে পরিচিত করানো ও বিজ্ঞাপনের স্বার্থেই বিবিএস কেব্লের লোগো ব্যবহার করা হয়েছে।

বিবিএস কেব্লের প্রধান অর্থ কর্মকতা (সিএফও) আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘চুক্তি হওয়া কোম্পানি আমাদের পৃথক কোম্পানি। বিবিএস কেব্লের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই। তবে বিজ্ঞাপনের স্বার্থে বিবিএস কেব্লের লোগো ব্যবহার করা হয়েছে। এখন এই তথ্য দেখে বিনিয়োগকারী শেয়ার কিনলে আমরা কী করতে পারি? কেবলমাত্র লোগোটিই ব্যবহার করা হয়েছে।’

উল্লেখ্য, প্রতিষ্ঠানটি তালিকাভুক্ত হওয়ার পরপরই শেয়ারের দর কয়েক গুণ বেড়ে যায়। এছাড়া আরও দর বাড়বে বলে বাজারে গুজব ছড়িয়ে দেওয়া হয়। সেইসঙ্গে কোম্পানির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ বিভিন্ন মহলও শেয়ারটি সংগ্রহ করে কৃত্রিম চাহিদা তৈরি করে বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া সেখানে ইনসাইডার ট্রেডিংয়ের ঘটনাও ঘটেছে। জানা গেছে, এমন একজন ইনসাইডার হলেন কোম্পানিটির এমডির বাবা আবদুল হান্নান হাওলাদার। তিনি কোম্পানিটির প্লেসমেন্ট শেয়ারহোল্ডার। তার কাছে রয়েছে মোট শেয়ারের দুই শতাংশ বা ২০ লাখ শেয়ার। তার সঙ্গে প্রাইভেট প্লেসমেন্টের শেয়ারধারীরাও শেয়ারটি কিনতে থাকেন।

প্রসঙ্গত, বিবিএস কেব্ল ২০১৭ সালের ৩১ জুলাই পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। আর তালিকাভুক্তির পর থেকেই শেয়ারটির দর অস্বাভাবিক হারে বাড়তে থাকে। প্রায় প্রতিদিনই শেয়ারটি দরবৃদ্ধির তালিকার শীর্ষে ছিল। লেনদেনের প্রথম দিনে কোম্পানিটি ৯০ টাকা ৩০ পয়সায় লেনদেন শেষ করে। যদিও দিনের এক ভাগে এ শেয়ার ৯৪ টাকায় লেনদেন হয়। আর গত মঙ্গলবার দিনশেষে কোম্পানিটি ১৪৪ টাকায় লেনদেন শেষ করেছে। এর পরই বিএসইসি তদন্ত কমিটি গঠন করে। ফলে গতকাল ১৪ টাকা দর কমে শেয়ার লেনদেন হয় ১৩২ টাকায়।