লোডশেডিংয়ে দক্ষিণ আফ্রিকায় ক্ষুদ্র ব্যবসা ধসের পথে

শেয়ার বিজ ডেস্ক: দক্ষিণ আফ্রিকায় ভয়াবহ বিদ্যুৎ বিপর্যয়ে পড়েছে। প্রতিদিনের লোডশেডিংয়ে জনজীবন যেমন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে, তেমনি দেশটির ক্ষুদ্র ব্যবসাগুলো পর্যাপ্ত বিদ্যুতের অভাবে ধ্বংসের পথে। লোডশেডিং এমন চরমে পৌঁছেছে যে, দিনে কমপক্ষে ১০ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে না। এতে ছোট ছোট ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে এবং প্রতিষ্ঠান লোকসানের বোঝা বাড়াচ্ছে। খবর: আল জাজিরা।

দক্ষিণ আফ্রিকার সংসদ ভবনের কাছে ‘কেপটাউন’ এলাকাটি গত পাঁচ বছর ধরে ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ, গবেষক ও স্থানীয়দের জন্য একটি জনপ্রিয় মিলনস্থল হিসেবে পরিচিত লাভ করেছে। ফলে এই এলাকায় ক্ষুদ্র ব্যবসার কেন্দ্রস্থল হিসেবে পরিণত হয়েছে। কিন্তু গত দুই বছরের কম সময়ে কভিড-১৯ মহামারির পর থেকে এখানে অনেক ক্ষুদ্র ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেছে।

স্থানীয় একটি ক্যাফের মালিক প্রিস্কা হোরাঙ্গো, যিনি দৈনিক ১২ ঘণ্টার বেশি কাজ করেন এমনকি দোকানে তিনজন কর্মচারী খাটান তিনি বলেন, কভিড-পরবর্তী লোডশেডিংয়ে ব্যবসা বন্ধের উপক্রম। তিনি আশঙ্কা করছেন, সামনে অস্তিত্ব সংকটের মুখোমুখি।

সরকারি হিসেবে, ২০২২ সাল থেকে সারাদেশে প্রতিদিন কমপক্ষে ১০ ঘণ্টা করে ‘ব্লাকআউট’ বা লোডশেডিং হয়েছে।

ক্যাফের মালিক প্রিস্কা হোরাঙ্গো বলছেন, ‘বিদ্যুৎ ফিরে আসা পর্যন্ত আপনাকে অপেক্ষা করতে হবে… আমরা একটি জেনারেটরের খরচ বহন করতে পারি না, তাই অনেক গ্রাহক হারাই।’

অন্য একজন বিউটিশিয়ান নাদিন ইকানি, যিনি গত ১৫ বছর ধরে এখানে ব্যবসা করে আসছেন, তিনিও একই আশঙ্কার কথা বলছেন। তিনি বলছেন, ‘আমি লোডশেডিংয়ে সময়ে আগে এক-তৃতীয়াংশ উপার্জন করছি, এখন আমার গ্রাহকরা চিৎকার করছে, ফলে সপ্তাহে দীর্ঘসময় কাজ করতে হয়’। এদের মতো বহু ছোট ছোট ব্যবসায়ী নিজেদের ব্যবসা গুটিয়ে ফেলছেন।

বিশেষজ্ঞরা ইতোমধ্যে সতর্ক করে দিয়েছেন, বিদ্যুতের এমন বিপর্যয় অব্যাহত থাকলে অনেকের চাকরি হারাতে হবে। দক্ষিণ আফ্রিকায় ছোট ব্যবসাকে অর্থনীতির ‘প্রাণ’ বলা হয়। কারণ এই ছোট ব্যবসা দেশটির মোট জিডিপির এক-তৃতীয়াংশ অবদান রাখে।

তথ্যমতে, দক্ষিণ আফ্রিকা তার জ্বালানি চাহিদার ৮০ শতাংশ কয়লার ওপর নির্ভরশীল। রাষ্ট্রীয় পাওয়ার কোম্পানি ‘এসকম’ দেশটির ৯০ শতাংশ বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাচ্ছে। তবে ২০০৮ সাল থেকে এসকম নিয়ম করে লোডশেডিং বাড়াচ্ছে। কারণ এসকম ধীরে ধীরে বিদ্যুৎ সরবরাহ কমিয়ে দিচ্ছে। ফলে চাহিদার তুলনায় লোডশেডিং বাড়ছে।

বিদ্যুতের এ সংকটকে রাষ্ট্রীয় সংস্থাটি ‘স্টেজ-৬’ হিসেবে উল্লেখ করছে, যেখানে দিনের অর্ধেক সময় বিদ্যুৎ থাকবে না।

বিশ্লেষকরা বলছেন, বছরের পর বছর ধরে কয়লা প্লান্টের রক্ষণাবেক্ষণে কম বিনিয়োগের ফলে সরবরাহ কমে গেছে এবং অতিরিক্ত চাপের কারণেও নতুন নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র ভেঙে পড়েছে। উপরন্তু, রাষ্ট্রীয় সংস্থা এসকমের সরকারি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৪০০ বিলিয়ন রেন্ড (২২ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার)। যার কারণে গত বছর কয়েক দফা শ্রমিক ধর্মঘটও হয়েছিল।

দেশটির প্রভাবশালী ব্লাক বিজনেস কাউন্সিল (বিবিসি) সম্প্রতি এক গবেষণায় বলছে, ‘ক্রমবদ্ধমান বিদ্যুৎ সংকট দেশের সব সামাজিক ও ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডের ধ্বংসের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে’। দেশটির খনিজসম্পদ ও জ্বালানিমন্ত্রী এ মাসের শুরুতে সংসদকে জানিয়েছেন, বিদ্যুৎ সংকটে প্রতি মাসে দেশটিতে এক বিলিয়ন রেন্ড ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবে, বিশ্বব্যাক এক প্রতিবেদনে বলছে, ২০২২ সালে দেশটিতে বিদ্যুৎ ঘাটতির কারণে ২৪ বিলিয়ন ডলার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

শ্রমিকরা বলছেন, লোডশেডিংয়ে কারণে তাদের জীবনযাত্রার মান অবনতি হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রায় দেশটির অর্ধেক মানুষ বেকার হয়ে পড়েছে। বিদ্যুৎ গ্যাস ও পানির দাবিতে সম্প্রতি দেশটিতে ব্যাপক বিক্ষোভ করেছে সাধারণ মানুষ।

গত বৃহস্পতিবার জাতির উদ্দেশে ভাষণে দেশটির প্রেসিডেন্ট বলছেন, লোডশেডিং সমস্যা সমাধানে তার সরকার চেষ্টা করছে। যদিও বিশেষজ্ঞরা বিদ্যুৎ সমস্যা সমাধানের জন্য সোলার সিস্টেম ও নবায়নযোগ্য বিদ্যুতের পরামর্শ দিয়েছেন। একই সঙ্গে এসকমকে কয়লানির্ভরতা কমিয়ে আনার পরামর্শও দিয়েছেন।