শরণার্থী আসা বাড়ায় জার্মানিতে আশ্রয়ের অধিকার নিয়ে বিতর্ক

শেয়ার বিজ ডেস্ক: জার্মানিতে আশ্রয়ের আবেদন বাড়তে থাকায় কয়েকজন রাজনীতিবিদ আবেদনের সংখ্যা সীমিত করা বা আবেদন করার অধিকার একেবারে বাতিলের আহ্বান জানিয়েছেন। তবে জার্মান সংবিধানে আশ্রয়ের অধিকারের কথা বলা আছে। খবর: ডয়চে ভেলে।

বিরোধী দল খ্রিস্টীয় গণতন্ত্রী পার্টি সিডিইউর শীর্ষস্থানীয় নেতা ইয়েন্স স্পান সম্প্রতি বলেন, ‘সম্পূর্ণ অনিয়ন্ত্রিত আশ্রয়-অভিবাসন থেকে জার্মানির বিরতি দরকার।’ তিনি বলেন, ‘যুদ্ধ বা সহিংসতার শিকার ব্যক্তিদের ইন্টিগ্রেট করতে সময় ও সম্পদ লাগে।

সেটা ভালোভাবে করা তখনই সম্ভব যদি অতিরিক্ত আশ্রয়প্রার্থীর সংখ্যা নাটকীয়ভাবে কমে যায়।’ জাতিসংঘের হিসাবে বর্তমানে বিশ্বজুড়ে শরণার্থীর সংখ্যা সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে। জার্মানিতে আশ্রয়ের আবেদন বাড়ছে। এ বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত এক লাখ ৭৫ হাজার ২৭২ জন জার্মানিতে আশ্রয়ের আবেদন করেছেন।

গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এ সংখ্যা প্রায় ৮০ শতাংশ বেশি। অধিকাংশ আবেদনই সিরিয়া, আফগানিস্তান ও তুরস্কের মানুষদের। ২০২২ সালের তুলনায় এ বছর তুর্কিদের আবেদন প্রায় তিন গুণ বেড়েছে।

বর্তমান জোট সরকারের নেতৃত্ব দেওয়া দল সামাজিক গণতন্ত্রী এসপিডি পার্টির সাবেক প্রধান সিগমার গাব্রিয়েল জার্মানির আরএনডি মিডিয়া গোষ্ঠীকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আশ্রয়ের অধিকার বাতিলের পক্ষে মন্তব্য করেছেন।

এদিকে জার্মানির অভিবাসনবিরোধী দল এএফডি ২০১৫ সাল থেকেই আশ্রয়ের অধিকার বাতিলের পক্ষে বক্তব্য দিয়ে আসছে। সাম্প্রতিক সময়ে এ দলের প্রতি সমর্থন বেড়েছে। সবশেষ জরিপ অনুযায়ী, জার্মানির দ্বিতীয় বৃহত্তম দল এখন এএফডি।

সংবিধানে আশ্রয়ের অধিকার
জার্মানি বিশ্বের কয়েকটি দেশের একটি, যার সংবিধানে এমন অধিকারের কথা বলা আছে। ১৬এ ধারা বলছে, ‘রাজনৈতিকভাবে নির্যাতিত ব্যক্তিদের আশ্রয়ের অধিকার রয়েছে।

’ তবে ১৯৯৩ সালে ধারাটি সংশোধন করা হয়। সংশোধিত ধারা বলছে, একজন মানুষ তখনই জার্মানিতে আশ্রয়ের আবেদন করতে পারবেন, যদি তিনি তথাকথিত নিরাপদ তৃতীয় দেশের মাধ্যমে না আসেন।
গত জুলাইতে সিডিইউর সংসদ সদস্য টর্স্টেন ফ্রাই একজন ব্যক্তির আশ্রয়ের অধিকার বাতিলের পরামর্শ দিয়েছিলেন। এর পরিবর্তে তিনি জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার মাধ্যমে প্রতি বছর তিন থেকে চার লাখ শরণার্থী ঠিক করে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পাঠানোর প্রস্তাব করেছিলেন।

তবে জার্মানির বর্তমান জোট সরকার এ অধিকার বাতিল সমর্থন করবে বলে মনে হয় না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ন্যান্সি ফ্যাজা বুধবার স্পিগেল ম্যাগাজিনকে বলেন, ‘আমি একজন ব্যক্তির আশ্রয়ের অধিকার বাতিলের একেবারে বিপক্ষে।’

ভেল্ট সংবাদপত্রকে জোটসঙ্গী সবুজ দলের অভ্যন্তরীণ নীতি বিষয়ক মুখপাত্র লামিয়া কাদ্দোর বলেছেন, ‘অভিবাসন সীমিত করার জন্য মানবাধিকার স্থগিত করা’ একটি ‘সমাধান’ হতে পারে না।

তবে জার্মান সরকার দেশটিতে নতুন শরণার্থী আসার সংখ্যা কমানোর চেষ্টা করছে। সে জন্য তারা ইউরোপীয় ইউনিয়নের আশ্রয় আইন সংস্কারের পক্ষে চেষ্টা চালাচ্ছে।

জার্মানি চাইছে, যাদের আশ্রয় আবেদন অনুমোদন পাওয়ার সুযোগ কম, তাদেরকে যেন ইইউ সীমান্তের বাইরে থেকেই পাঠিয়ে দেওয়া সম্ভব হয়। তাহলে জার্মানিতে আশ্রয়প্রার্থী আসার সংখ্যা কমবে।