শেয়ার বিজ ডেস্ক: চরম অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে শ্রীলঙ্কা শাটডাউনের সম্মুখীন হতে পারে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর নন্দলাল ওয়েরাসিংহে। তার দাবি, শিগগির স্থিতিশীল সরকার গঠন না হলে গোটা দেশ শাটডাউন তথা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসির নিউজনাইট প্রোগ্রামে তিনি এই হুঁশিয়ারি দেন।
শাটডাউনের অর্থ কোনো কিছু বন্ধ হয়ে যাওয়া। এছাড়া বিবিসির পৃথক এক প্রতিবেদনে কোনো রাষ্ট্র শাটডাউনের অর্থ ওই দেশের সরকারি কর্মকাণ্ডে অচলাচস্থা বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আবার কোনো কোনো অভিধানে শাটডাউন মানে সবকিছু বন্ধ হয়ে যাওয়া। অর্থাৎ জরুরি সেবা (ওষুধ, ফায়ার সার্ভিস, গণমাধ্যম) ছাড়া অফিস-আদালত, বাজারঘাট, গণপরিবহনসহ সব বন্ধ হয়ে যাওয়া। আবার কোথাও কোথাও শাটডাউন মানে স্থবিরতাও বোঝানো হয়েছে।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলমান আর্থিক ও জ্বালানি সংকট কাটাতে প্রয়োজনীয় পেট্রোলিয়ামের জন্য পর্যাপ্ত বৈদেশিক মুদ্রা পাওয়া যাবে কি না তা নিয়ে ‘অনেক অনিশ্চয়তা’ রয়েছে বলে জানিয়েছেন শ্রীলঙ্কান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর। কেননা আন্তর্জাতিক বেলআউট প্যাকেজ পাওয়ার বিষয়ে অগ্রগতি একটি স্থিতিশীল প্রশাসনের ওপর নির্ভর করে।
১৯৪৮ সালে ব্রিটেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে শ্রীলঙ্কা। কভিড-১৯ মহামারি, জাতীয় অর্থনীতি পরিচালনায় সরকারের অদক্ষতা, বিশ্বজুড়ে জ্বালানির দাম বেড়ে যাওয়া ও রাষ্ট্রীয় কোষাগারে বৈদেশিক মুদ্রার মজুত তলানিতে নেমে যাওয়ায় শ্রীলঙ্কায় বিপর্যয়কর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
জ্বালানি, খাবার ও ওষুধের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রীর আমদানি মূল্য পরিশোধ করতে পারছে না শ্রীলঙ্কা। ডিজেলের সরবরাহ অনিয়মিত হয়ে পড়ায় প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারছে না শ্রীলঙ্কার বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলো। এ কারণে গত কয়েক মাস ধরে সেখানে দিনের বেশিরভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকছে না।
ফলে নজিরবিহীন এই সংকটের জন্য রাজাপক্ষে পরিবারসহ দেশটির ক্ষমতাসীন সরকারকে দায়ী করে গণ-আন্দোলন প্রকট আকার ধারণ করেছে। আন্দোলনের কারণে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে আগেই পদত্যাগ করেছিলেন মাহিন্দা রাজাপক্ষে। এমনকি এই পরিবারের অন্য সদস্যরাও সরকার থেকে সরে এসেছিলেন। বাকি ছিলেন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে। গত বুধবার তার পদত্যাগের কথা থাকলেও দিনের আলো ফোটার আগে সামরিক বিমানে চড়ে দেশ ছেড়ে মালদ্বীপে পাড়ি জমান তিনি। পরে বৃহস্পতিবার ই-মেইলে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে তিনিও আনুষ্ঠানিকভাবে রাষ্ট্রপ্রধানের পদ ছাড়েন।
তবে এরপরও শ্রীলঙ্কাজুড়ে আন্দোলন-বিক্ষোভ কমার বা স্থিতিশীলতা ফিরে আসার কোনো লক্ষণ নেই। গতকাল শুক্রবার ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে। এর আগে জরুরি অবস্থা জারি করেন তিনি।
গত এপ্রিলে শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব নেন নন্দলাল ওয়েরাসিংহে। তিনি জানান, স্থিতিশীল প্রশাসন ছাড়া কীভাবে প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো সরবরাহ করা যায় সে সম্পর্কে তিনি ‘কোনো পথ দেখতে পাচ্ছেন না। তিনি বলেন, আমরা সম্ভবত চলতি মাসের শেষ পর্যন্ত ডিজেলের অন্তত তিনটি চালান ও পেট্রোলের একটি বা দুইটি চালানের জন্য অর্থায়ন করতে সক্ষম হয়েছি। তবে এর বাইরেও এই দেশের জন্য অপরিহার্য পেট্রোলিয়াম অর্থায়নের জন্য আমরা পর্যাপ্ত বৈদেশিক মুদ্রা সরবরাহ করতে সক্ষম হবো কি না তা নিয়ে অনেক অনিশ্চয়তা রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, যদি তা না হয়, তাহলে গোটা দেশ বন্ধ (শাটডাউন) হয়ে যাবে। তাই আমার এমন একজন প্রধানমন্ত্রী, প্রেসিডেন্ট ও মন্ত্রিপরিষদ দরকার, যারা (প্রয়োজনীয় সব) সিদ্ধান্ত নিতে পারেন… আর এটি ছাড়া, সব মানুষ কষ্ট পেতেই থাকবে।’
অবশ্য স্থিতিশীল সরকার পেলে শ্রীলঙ্কা শিগগির সংকট কাটিয়ে উঠতে পারবে বলেও আশাবাদী গভর্নর। তিনি বলেন, একবার একটি স্থিতিশীল সরকার প্রতিষ্ঠিত হলে শ্রীলঙ্কা এই সংকট থেকে ‘তিন বা চার বা পাঁচ মাসের মধ্যে’ বেরিয়ে আসতে পারে।
শ্রীলঙ্কায় চলমান অর্থনৈতিক সংকট ও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্যহীনতার কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরকেও দেশটির সম্ভাব্য নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেখা হচ্ছে। তবে তেমন সম্ভাবনা বাতিল করে দিয়েছেন নন্দলাল ওয়েরাসিংহে নিজেই। তার ভাষায়, কোনো রাজনৈতিক পদ গ্রহণে আমার কোনো আগ্রহ নেই।