শেখ মোহাম্মদ রতন, মুন্সীগঞ্জ: মহামারি কভিড-১৯-এর সংক্রমণ রোধে চলছে কঠোর লকডাউন। সার্বিক পরিস্থিতিতে দিশেহারা নি¤œ আয়ের পরিবারগুলো। অনেকে জীবিকার তাগিদে জীবনযুদ্ধে বিকল্প উপার্জনের মাধ্যম খুঁজে নিচ্ছেন। এর মধ্যে রয়েছে শাপলা বিক্রিও।
গতকাল সোমবার সকালে এমনই দেখা গেছে মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার আড়িয়ালবিল এলাকার গাদিঘাট ও হাঁসাড়ার আলমপুরে। শাপলা কুড়িয়ে দৈনিক একেক জন ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা উপার্জন করছেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, আড়িয়ালবিলজুড়ে শাপলার সমাহার। বিস্তীর্ণ বিল থেকে ছোট কোষা নৌকা বোঝাই করে এসব শাপলা আনা হচ্ছে এলাকার রাস্তার পাশে। পরে আঁটি গুণে গুণে পিকআপ ভ্যানে তোলা হচ্ছে। দাম চুকিয়ে শাপলা ভর্তি ট্রাক ছুটে যাচ্ছে ঢাকার বিভিন্ন পাইকারি বাজারে।
গাদিঘাট এলাকার সুমন খান, মো. মোশারফ, নুর হোসেনসহ অনেকে বলেন, শাপলা কুড়িয়ে আয়ের চেষ্টা করছেন তরা। এখানে প্রায় ৬০ জন শাপলা কুড়ানোর কাজ করছেন। লকডাউনের কারণে কর্মহীন হয়ে পরেন তারা। পরিস্থিতির শিকার হয়ে তারা শাপলা কুড়িয়ে সংসার চালানোর পথ বেছে নিয়েছেন।
হাঁসাড়া এলাকার আলামপুরের আমির হোসেন, শাজাহান, দেলোয়ার হোসেন ও বলাই রাম জানান, চলমান লকডাউনে কোনো খাদ্য সহায়তা পাননি তারা। অনেকটা বাধ্য হয়েই শাপলা কুড়াতে হচ্ছে। এখানে ৩০ থেকে ৪০টি পরিবারের সংসার চলছে শাপলা বিক্রি করে। উপজেলা সদরের ডাকবাংলা মার্কেটের সামনে শাপলা বিক্রেতা আবুল হোসেন বলেন, প্রায় ২০ বছর দিনমজুরের কাজ করি। লকডাউনের কারণে বেকার হয়ে যাই। তাই কামারখোলা বিল থেকে শাপলা কুড়িয়ে এসে প্রতিদিন ডাকবাংলা মার্কেটের সামনে বিক্রি করছেন তিনি।
শাপলার পাইকার সেলিম শেখ বলেন, সিরাজদিখান থেকে এখানে পিকআপ ভ্যান এনেছি শাপলা নিতে। প্রায় এক হাজার আঁটি শাপলা কিনে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে যাচ্ছেন বলে জানান তিনি।
আলামপুর এলাকার জমাইতুল্লাহ ও চান মিয়া জানান, প্রতিদিন বিকালে এসব শাপলা নিতে তারা এখানে আসেন। পরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে বিক্রি করেন।
গাদিঘাট এলাকার ওহাব হাওলাদার বলেন, আড়িয়ালবিল এলাকায় শাপলা কুড়িয়ে কর্মহীন অনেকের সংসার চলছে। তাদের কাছ থেকে এসব শাপলা কিনে নিচ্ছি। এতে উভয় পক্ষেরই উপার্জন হচ্ছে।
জানা গেছে, এখানে ভোর পাঁচ থেকে দুপুর পর্যন্ত বিলে শাপলা কুড়ানো হয়। প্রায় ৭০টি শাপলা হিসেবে অনুযায়ী একটি আঁটি বাঁধা হয়। প্রতি আঁটি শাপলা পাইকাররা কেনেন ১২ থেকে ১৫ টাকায়। দৈনিক একজন কমপক্ষে ৫০ আঁটি শাপলা কুড়াতে পারেন। প্রতিদিন শ্রীনগর থেকে শাপলা বোঝাই করে প্রায় ১০টি পিকআপ ভ্যান ঢাকার বিভিন্ন পাইকারি বাজারে যাচ্ছে।
সুস্বাদু সবজি হিসেবে শাপলার চাহিদা থাকায় আগামী কার্তিক-পৌষ পর্যন্ত শাপলা কুড়াবেন তারা। এ ক্রান্তিলগ্নে শাপলা কুড়ানোর সুযোগ কাজে লাগিয়ে এভাবে কর্মহীন শতাধিক পরিবারের সংসার চলছে।