অলিউর রহমান মেরাজ, নবাবগঞ্জ (দিনাজপুর) : দিনাজপুর জেলার চরকাই সামাজিক বন বিভাগের নবাবগঞ্জ শালবনে কয়েক শতাধিক মানুষ শুকনো পাতা কুড়িয়ে নিজেদের জীবিকা নির্বাহ করছেন। নবাবগঞ্জ বনবিটের জগন্নাথপুর, হরিল্যাখুর, বড় জালালপুর, আলোকধুতি, তর্পনঘাট, রসুলপুর ও খটখটিয়া কৃষ্টপুর মৌজা নিয়ে উদ্যান গঠিত। এ জাতীয় উদ্যান আসলে একটি শালবন। স্থানীয়ভাবে পঞ্চবটীর বন নামেও পরিচিত। ২০১০ সালের ২৪ অক্টোবর নবাবগঞ্জ বনবিটের এ অঞ্চলকে জাতীয় উদ্যান হিসেবে ঘোষণা করা হয়। আয়তন ৫১৭ দশমিক ৬১ হেক্টর বা ১২৭৮ দশমিক ৫০ একর। উত্তরবঙ্গের সবচেয়ে বড় আয়তনের শালবন এটি। প্রতি বছরের মতো ফাল্গ–ন ও চৈত্র মাসে এ বনের শাল গাছগুলো থেকে পাতা ঝরে পড়লে আর সেই পাতা কুড়িয়ে তা বাজারজাত করে শত শত মানুষ জীবিকা নির্বাহ করছেন। ঋতুরাজ বসন্তের আগমনের শুরু থেকেই এ বনের শাল, সেগুন, আকাশমনি গাছসহ অন্যান্য গাছের শুকনো পাতা ঝরে পড়তে শুরু করে। শুকনো পাতাগুলো সংগ্রহ করে বস্তায় ভরে নিজেদের দৈনন্দিন রান্নার কাজসহ আশপাশে এমনকি বাজারজাত করে জীবীকা নির্বাহ করে ওই এলাকার নাম না জানা অনেকে। ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে দিয়েছে অনেকের এ ঝড়ে পরা শালপাতা।
এ শালপাতার যে যত বেশি সংগ্রহ করতে পারে তার আয় তত বেশি হয়। আবার অনেকেই এ পাতা সংগ্রহ করে জমিয়ে রাখেন কারণ তারা তা বৈশাখ মাসের দিকে বাজারজাত করলে এখনকার বাজার মূল্যের চেয়ে দ্বিগুণ মূল্যে বিক্রি করতে পারবেন।
পাতা সংগ্রহকারীরা জানান, প্রতিদিন একজন ১০ থেকে ১৫ বস্তা পাতা সংগ্রহ করতে পারেন। প্রতি বস্তা পাতা এলাকায় ৪০ টাকা করে বিক্রি হয়, যা থেকে আমাদের ৪০০ থেকে প্রায় ৭০০ টাকা আয় করা সম্ভব হয়। আর যাদের ভ্যানগাড়ি কিংবা অন্য কোনো বাহন আছে তারা এ পাতার বস্তাগুলো বাজারে নিয়ে গিয়ে প্রতি বস্তা ৫০-৬০ টাকা দরে বিক্রি করেন। তাদের ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত বাড়তি আয় হয়।
আবার এ পাতাগুলো সংগ্রহ করে জমিয়ে রেখে বৈশাখ মাসে একটু বৃষ্টি শুরুর পর বিক্রি করলে দাম আরও বেশি পাওয়া যায় বাজারে তখন শুকনো পাতার চাহিদাও বেড়ে যায়। প্রায় দুই যুগ ধরে তারা এ শুকনো পাতা কুড়িয়ে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। এ বিশাল শালবনটি তাদের এলাকার দরিদ্র মানুষের জন্য ফাল্গ–ন চৈত্র মাসে আশীর্বাদ হয়ে দেখা দেয়।