নিজস্ব প্রতিবেদক: শিক্ষা জাতীয়করণ ও শিক্ষাক্ষেত্রে সব ধরনের বৈষম্য দূরীকরণে জাতীয় বাজেট ২০২১-২২-এর ২০ শতাংশ অর্থ বরাদ্দের দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ শিক্ষক ইউনিয়নের নেতারা। গতকাল সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী সভাকক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের পক্ষে বলা হয়েছে, কভিড-১৯ পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শিক্ষা খাত। প্রায় ১৫ মাস ধরে সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক সবাই শিক্ষার ভবিষ্যৎ নিয়ে উৎকণ্ঠায় আছেন।
শিক্ষকরা নানাভাবে অর্থনৈতিক সমস্যায় জর্জরিত। এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা বেতনের সরকারি অংশ পাচ্ছেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় প্রতিষ্ঠানের অংশ পাচ্ছেন না। এমপিওবিহীন প্রায় তিন লাখ শিক্ষক-কর্মচারী কোনো বেতন না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষকদেরও একই অবস্থা।
সম্মেলনে আরও বলা হয়েছে, দেশের ৯৭ শতাংশের বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বেসরকারি। এসব প্রতিষ্ঠানের পাঁচ লাখের বেশি শিক্ষক-কর্মচারী আর্থিক ও সামাজিকভাবে নানা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন।
শিক্ষক নেতাদের দাবি, ১৯৯৪ সালে ইউনেস্কো-আইএলও যৌথভাবে একটি রেজল্যুশনের মাধ্যমে শিক্ষকদের মর্যাদা ও আর্থিক সুবিধাপ্রাপ্তির নির্দেশনা দেয়। সেখানে বলা হয়, শিক্ষকরা হবেন রাষ্ট্রের সবচেয়ে মর্যাদাবান ব্যক্তি এবং তাদের নিরাপত্তা, আর্থিক সুবিধা সর্বোচ্চ হবে। সেখানে সেই রেজল্যুশনে বাংলাদেশসহ ১০০টির বেশি দেশ স্বাক্ষর করেছিল। পাশের দেশ ভারত, শ্রীলঙ্কাও তাতে স্বাক্ষর করে। পাকিস্তানে শিক্ষা খাতে শতকরা ১৮ থেকে ২০ শতাংশ বরাদ্দ দেয়া হয়। কিন্তু বাংলাদেশে প্রতিবছর ১১ থেকে ১২ শতাংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকাকালে টিভি ও অনলাইনে পাঠদান অব্যাহত থাকলেও তা নানা প্রতিকূলতায় এ পাঠদান প্রক্রিয়া তেমন সাফল্য পায়নি। বিশেষ করে অনলাইন পাঠদানের ক্ষেত্রে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কোনো আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তা ও সম্পৃক্ততা নেই।
শিক্ষা খাতে বাজেট নিয়ে বলা হয়, এবারের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। এ মহাদুর্যোগে সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শিক্ষক-কর্মচারী, শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ দেশের সব নাগরিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখনও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার দিনক্ষণ ঠিক হয়নি। তবে যে ক্ষতি হয়ে গেছে তা পূরণে অনেকটা সময়ের প্রয়োজন হবে। প্রয়োজন হবে সুষ্ঠু পরিকল্পনা অনুযায়ী বাজেট বরাদ্দ ও তা বাস্তবায়ন।
এ সময় শিক্ষা বাজেটের পরিধি নিয়ে শিক্ষকদের দাবি-দাওয়ার বিষয়টি তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে রয়েছে শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণ, শিক্ষা খাতে বাজেটের ২০ শতাংশ বরাদ্দ, শতভাগ উৎসব ভাতা, বাড়ি ভাড়া ও চিকিৎসা ভাতা দান। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিওভুক্ত করাসহ ১৬টি দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের সভাপতি আবুল বাশার হাওলাদারের সভাপতিত্বে মহাসচিব জসিম উদ্দিন সিকদার, যুগ্ম মহাসচিব আবুল খায়েরসহ সারাদেশের বিভিন্ন এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন।