Print Date & Time : 27 July 2025 Sunday 12:29 pm

শিমুলিয়া ঘাটে সিএনজি চালকদের কাছে জিম্মি যাত্রী

শেখ মোহাম্মদ রতন, মুন্সীগঞ্জ: গত মঙ্গলবার ভোর থেকে ফেরিযোগে মুন্সীগঞ্জের

শিমুলিয়া ঘাটে এসে রাজধানীতে ছুটছেন হাজার হাজার কর্মজীবী মানুষ। এতে ঢাকাগামী যাত্রীরা গণপরিবহন সংকটে পড়েছেন। ফলে বেশিরভাগ যাত্রীকে গন্তব্যে পৌঁছাতে হচ্ছে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে।

এ সুযোগে শিমুলিয়া থেকে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জ রুটে তিন চাকার এ যানে দুই-তিনগুণ বেশি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। সরেজমিনে

মঙ্গলবার দিনভর এমন চিত্র দেখা গেছে শিমুলিয়া ঘাটে।

সরেজমিনে গিয়ে আরও দেখা গেছে, শিমুলিয়ার এক, দুই ও তিন নম্বর ফেরিঘাটের সামনে সারি সারি সিএনজি নিয়ে অপেক্ষা করছেন চালকরা।

বাংলাবাজার থেকে ছেড়ে এসে শিমুলিয়া ঘাটে ফেরি নোঙরের পর যাত্রীরা নানা ছোট যানবাহন করে ঢাকার বিভিন্ন গন্তব্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করছে।

ছোট যানের মধ্যে ঘাটজুড়ে সিএনজিরই প্রভাব দেখা গেছে। মানুষের চাপ থাকায় ঢাকামুখী যাত্রীরা ঘাটের সীমিতসংখ্যক এসব যানবাহনে উঠে পড়ছেন। এ সুযোগে কোনো সিএনজিতে পাঁচ যাত্রী, কোনোটিতে ছয় যাত্রীও নিতে দেখা গেছে। এসব যানবাহনে স্বাস্থ্যবিধি একবারে উপেক্ষা করা হচ্ছে। আদায় করা হচ্ছে অতিরিক্ত ভাড়া।

ঢাকাগামী যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শিমুলিয়া ঘাট থেকে জনপ্রতি ঢাকার পোস্তগোলায় ১৫০ টাকা, নয়াবাজারে ১৬০ টাকা, সায়েদাবাদে ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা, মোহাম্মদপুরে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা, মুন্সীগঞ্জের মুক্তারপুরে ১০০ টাকা ও নারায়ণগঞ্জে ১৫০ টাকা ভাড়ায় নিয়মিত যাতায়াত করা হয়।

তবে বর্তমানে প্রতিটি রুটে দুই থেকে তিনগুণ বেশি ভাড়া গুনতে হচ্ছে সাধারণ যাত্রীদের। বর্তমানে শিমুুলিয়া ঘাট থেকে পোস্তগোলা ও নয়াবাজারে ৩০০ টাকা, সায়েদাবাদে ৪০০ টাকা, মোহাম্মদপুরে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা, মুন্সীগঞ্জের মুক্তারপুরে ২০০ টাকা ও নারায়ণগঞ্জে ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা দিয়ে যেতে হচ্ছে যাত্রীদের।

শিমুলিয়া থেকে রাকিব হোসেন নামের এক যাত্রী বলেন, ঈদ আনন্দ শেষে তো কর্মস্থলে ফিরতেই হবে। কাজ না করলে জীবন-জীবিকা কীভাবে চলবে? যাওয়ার সময় চরম দুর্ভোগের মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে। এখন ঢাকায় যেতেই হবে। এখন বাধ্য হয়েই বেশি ভাড়া দিতে হচ্ছে।

আমির হোসেন নামের আরেক যাত্রী বললেন, ১০০ টাকার ভাড়া ২০০ টাকা দিয়ে যেতে হচ্ছে। তার পরও সবাই তো জড়োসড়ো হয়ে যাচ্ছে। মানুষকে শুধু শুধু এমন ভোগান্তিতে ফেলে জিম্মি করার কোনো মানে হয় না। এর সুযোগ নিচ্ছেন গাড়িচালকরা।

ইলিয়াস হোসেন নামের আরেক যাত্রী বলেন, সিএনজিচালকদের ব্যবসা তো ভালোই হচ্ছে। আর আমাদের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে, ব্যয়ও হচ্ছে বেশি। এ বিষয়ে কোনো কর্তৃপক্ষের বা পুলিশ প্রশাসনের কোনো তদারকি দেখলাম না।

গোপালগঞ্জ থেকে ঢাকায় যাবেন হোসনে আরা। তিনি বললেন, সরকার গণপরিবহন খুইলা (চালু করে) দিলেই তো পারে। ফেরিতে আসলাম, মানুষের চাপাচাপিতে এখন গাড়িতেও মানুষের চাপ। যাব পোস্তগোলা। ১৫০ টাকার ভাড়া নিতাছে (নিচ্ছে) ৩০০ টাকা।

তবে যাত্রীদের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সিএনজিচালকরা। নয়াবাজার রুটের সিএনজিচালক আজিজুল বলেন, যাওয়ার সময় তো ভালো যাত্রী পাই। আসতে হয় খালি। তাই বেশি ভাড়া না নিলে পোষায় না আমাদের।

আরেক সিএনজি চালক মো. কালাম বলেন, রাস্তায় তিন থেকে চার জায়গায় পুলিশকে টাকা দেয়া লাগে। আমরা কী করুম? ভাড়া বেশি না নিয়া উপায় নাই।

মাওয়া ট্রাফিক পুলিশের ইনচার্জ (টিআই) মোহাম্মদ হিলাল উদ্দিন বলেন, সিএনজিসহ কোনো যানবাহন থেকে পুলিশ কোনো টাকা নেয় না। যদি এমন কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়, তাহলে সেই পুলিশের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।