গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি এবং জ্বালানি সংকটে কারখানা বন্ধের আশঙ্কা করছেন বস্ত্রকল মালিকরা। মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে বস্ত্রকল মালিকদের সংগঠন বিটিএমএ’র নেতারা বলেছেন, গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির ফলে স্পিনিং মিলগুলোর সুতার উৎপাদন খরচ প্রতি কেজিতে ৪০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। আবার গ্যাসের স্বল্প চাপের কারণে উৎপাদন ক্ষমতার ৫০ শতাংশের বেশি ব্যবহার করতে পারছে না। নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ না থাকায় সৃষ্ট উৎপাদন ক্ষতি, গ্যাস ব্যবহার না করেও অতিরিক্ত বিল এবং অতিরিক্ত নিরাপত্তা জামানত প্রদানের কারণে গত বছরের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের মার্চÑএই ১৫ মাসে স্পিনিং মিলগুলোর প্রায় ৪০০ কোটি ডলার (৪৫ হাজার কোটি টাকা) ক্ষতি হয়েছে।
আগে থেকেই গ্যাস-সংকটে দেশের শিল্পকারখানায় উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এতে বাড়ছে উৎপাদন খরচ। পণ্যের প্রত্যাশিত মানও নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। আগেও শিল্পমালিকরা বলেছেন, গ্যাসের মূল্য বাড়িয়ে হলেও নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস এবং বিদ্যুৎ সরবরাহ চান তারা। কিন্তু সর্বশেষ শিল্প ও ক্যাপটিভ গ্রাহকদের জন্য গ্যাসের দাম এক লাফে ৮৬ শতাংশ বাড়িয়ে প্রতি ইউনিট ৩০ টাকা করা হলেও জ্বালানি সংকট রয়েই গেছে।
জ্বালানি-সংকট নিয়ে এখনও শিল্পোদ্যোক্তারা সীমাহীন কষ্টে আছেন, বস্ত্রকল মালিকদের বক্তব্যে তা উঠে এসেছে। শুধু বস্ত্র নয়, গ্যাস সংকটে সব শিল্পকারখানাই বিপাকে আছে। সিরামিক-টাইলস দেশের অন্যতম সম্ভাবনাময় শিল্প। গ্যাস-সংকটে দু’ভাবে ভুগছে এ শিল্পটি। বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাতে গ্যাসচালিত ক্যাপটিভ জেনারেটরভিত্তিক নিজস্ব বিদ্যুৎকেন্দ্র থাকলেও অনেক প্রতিষ্ঠান গ্যাস-সংকটে প্রতিষ্ঠানের চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারছে না। গ্যাসের প্রয়োজনীয় চাপ না থাকায় উৎপাদনও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। সরবরাহ-সংকট থাকায় বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় গ্যাস দেয়া যাচ্ছে না।
গ্যাস-সংকটে সময়মতো পোশাক উৎপাদন করতে না পারায় রপ্তানিমূল্যও পাওয়া যাচ্ছে না। সব মিলিয়ে গ্যাস-সংকটের দ্রুত সমাধান না হলে শিল্প খাত ভয়াবহ পরিস্থিতিতে পড়বে। বর্তমানে ডলার-সংকট চলছে। কোনোভাবে গ্যাস আমদানি সম্ভব নয়। এ অবস্থায় দেশীয় উৎস থেকে গ্যাস সরবরাহের পথ খুঁজতে হবে। ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা নিষ্পত্তি হলেও সমুদ্রে গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কারের জন্য সেভাবে অনুসন্ধান চালানো হয়নি। যদিও সমুদ্রসীমা নিষ্পত্তির পর মিয়ানমার বেশ দ্রুতই গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার করেছে। শিল্প রক্ষায় আমাদের ভাবতে হবে কোনটি করবÑঅনুসন্ধান ও উত্তোলন করব নাকি আমদানি করব। যেটাই করা হতো তা করতে হবে দ্রুত।
দেশে গ্যাসের মজুতও ফুরিয়ে আসছে। শিগগির নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার না হলে দেশ সম্পূর্ণ উচ্চমূল্যের জ্বালানিনির্ভর হয়ে পড়বে। এতে গ্যাসের দাম বেড়ে যাবে। বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যয়ও বাড়বে। বেড়ে যাবে সব ধরনের পণ্যের উৎপাদনমূল্য। তখন শিল্পে অচলাবস্থা দেখা দেবে। এ থেকে উত্তরণে অভ্যন্তরীণ গ্যাস উৎপাদন বাড়াতে হবে। এ লক্ষ্যে ব্যাপক ভিত্তিতে গ্যাসক্ষেত্রের অনুসন্ধান চালাতে হবে। আমাদের সাগরবক্ষে গ্যাস প্রাপ্তির যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। সেই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হবে। মোটকথা, শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে কারখানায় গ্যাসের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহের বিকল্প নেই।