Print Date & Time : 6 July 2025 Sunday 7:58 pm

শিল্পোন্নত দেশের ভর্তুকির ৫০% দিয়ে এনার্জি ফান্ড গঠনের প্রস্তাব

নিজস্ব প্রতিবেদক: শিল্পোন্নত দেশগুলোর প্রদত্ত সরকারি ভর্তুকির ৫০ শতাংশ তহবিল স্বল্পোন্নত দেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানি, জলবায়ু অভিযোজন ও ক্ষয়-ক্ষতি মোকাবিলায় ব্যয়, গ্লোবাল রিনিউয়েবল এনার্জি ফান্ড (গ্রেফ) প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানানো হয়েছে। গবেষণা, অ্যাডভোকেসি ও সক্ষমতা উন্নতিবিষয়ক প্রতিষ্ঠান চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভ আয়োজিত ‘দ্বিতীয় ঢাকা নবায়নযোগ্য জ্বালানি অর্থায়ন শীর্ষক টক’ চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভ প্রস্তাবিত নবায়নযোগ্য জ্বালানি এবং অর্থায়নবিষয়ক অনুসন্ধানী পুরস্কার ২০২৩ প্রদান অনুষ্ঠানে এ আহ্বান জানানো হয়। গতকাল শনিবার রাজধানীর একটি হোটেলে এই পুরস্কার প্রদান করা হয়। এই অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্য হলো জীবাশ্ম জ্বালানিতে ভর্তুকির পরিবর্তে নবায়নযোগ্য জ্বালানিবিষয়ক প্রকল্পগুলোর জন্য অর্থায়নের ওপর আলোচনা এবং এ-বিষয়ক নীতি পর্যালোচনা ও দিকনির্দেশনা প্রণয়ন।

দ্বিতীয় ঢাকা নবায়নযোগ্য জ্বালানি অর্থায়ন শীর্ষক আলোচনা সভায় জীবাশ্ম জ্বালানিতে ভর্তুকি কমানোর দাবি উত্থাপিত হয়। জি-২০ দেশগুলো প্রতিবছর এক ট্রিলিয়ন ডলার জীবাশ্ম জ্বালানিতে ভর্তুকি দিচ্ছে। জীবাশ্ম জ্বালানিতে ভর্তুকির ৫০ ভাগ অর্থাৎ ৫০০ বিলিয়ন ডলার অনুন্নত দেশগুলোর ক্লাইমেট অ্যাকশন খাতে বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়। যার অর্ধেক অর্থাৎ ২৫০ বিলিয়ন ডলার ব্যবহƒত হবে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাত বিকাশের জন্য এবং বাকি ২৫০ বিলিয়ন ডলার ব্যয় হবে জলবায়ু সহনশীলতা, জলবায়ু অভিযোজন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবজনিত ক্ষতিপূরণ খাতে।

অনুষ্ঠানের সূচনাপর্বে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ুবিষয়ক মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য বাংলাদেশ দায়ী না হলেও এর ভুক্তভোগী আমরাই। প্রতি বছর ক্লাইমেট চেঞ্জ ফান্ডে আমাদের প্রচুর টাকা বরাদ্দ দেয়া লাগে। অন্যান্য দেশের তুলনায় জলবায়ু পরিবর্তনের যে অভিযোজন সক্ষমতা, সেটা আমাদের কম। ফলে এই বিপুল পরিমাণ টাকা আমরা অন্যান্য সেবা খাতে বিনিয়োগ করতে পারতাম কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে তা করা যাচ্ছে না; যা আমাদের টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রাকে কঠিন করে তুলছে। মন্ত্রী বাংলাদেশের নবায়নযোগ্য জ্বালানি গ্রহণের প্রতিশ্রুতি তুলে ধরে বলেন যে বাংলাদেশ আগামী ৭-৮ বছরে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রযুক্তিগত অগ্রগতি গ্রহণ করতে প্রস্তুত। তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের উন্নয়নের সাথে সাথে কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে, সম্ভবত আগামী বছরে বৈশ্বিক কার্বন নিঃসরণের ১ শতাংশে পৌঁছে যেতে পারে বৃদ্ধি পাবে, তাই নবায়নযোগ্য জ্বালানি গ্রহণের মাধ্যমে নির্গমন হ্রাসের গুরুত্ব অনেক বেশি। জলবায়ু অর্থায়নের সংজ্ঞা নির্ধারণ নিয়ে আক্ষেপ করে বলেন, আন্তর্জাতিকভাবে সম্মত কোনো জলবায়ু অর্থায়নের সংজ্ঞা নেই, বিনিয়োগ নির্দেশনা এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্য একটি স্পষ্ট কাঠামোর প্রয়োজন। তিনি জলবায়ু নিয়ে বৈশ্বিক লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, আমরা ১.৫ ডিগ্রি তাপমাত্রা বৃদ্ধি মধ্যে থাকাকে লক্ষ্যমাত্রা হিসেবে নিয়েছি, কিন্তু ১.১ ডিগ্রি তাপমাত্রা বৃদ্ধিতেও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব গুরুতর।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের বাংলাদেশে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত আব্দুল্লাহ আলী আব্দুল্লাহ আসিফ আল মৌদি, মাহিম রাজ্জাক এমপি, পররাষ্ট্রবিষয়ক পার্লামেন্টারি স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য ড. মো. মুস্তাফিজুর রহমান, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য (সচিব) মনিরা সুলতানা, শ্রেডার চেয়ারম্যান এবং ফাইন্যান্সিয়াল এক্সিলেন্সের চেয়ারম্যান মামুন রশিদ।

স্বাগত বক্তব্যে সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের জলবায়ু লক্ষ্যমাত্রা সমর্থনে সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বাংলাদেশের প্রচেষ্টাকে স্বীকৃতি দিয়ে তিনি উল্লেখ করেন, ‘প্রশমন, অভিযোজন এবং বহুমুখী জলবায়ু কর্মকাণ্ডের প্রতিশ্রুতি প্রদর্শনে বাংলাদেশ একটি অনন্য উদাহরণ।’ ড. মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বেসরকারি খাতের সম্পৃক্ততা উৎসাহিত করতে একটি নীতিমালা খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে। শ্রেডার চেয়ারম্যান মনিরা সুলতানা বলেন, টেকসই জ্বালানি লক্ষ্য অর্জনের জন্য নবায়নযোগ্য জ্বালানি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং এর বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে, জমির অভাবের বিষয়টি বিবেচনা করে, রুফটপ সোলার একটি বিশেষভাবে কার্যকর বিকল্প।”

বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানি অর্থায়নের রূপরেখা ও জীবাশ্ম জ্বালানির ভর্তুকি পুনর্নির্দেশ-সংক্রান্ত ৪টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে প্যানেল আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। এতে অংশ নেবেন সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অভিজ্ঞ ব্যক্তিবর্গ। অনুষ্ঠানের সমাপনী অংশে প্রধান অতিথি থাকবেন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান, পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসেন প্রমুখ। এছাড়া চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভসহ ১২টি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও তরুণ সংগঠনের উদ্যোগে আয়োজিত হয়ে যাওয়া নবায়নযোগ্য জ্বালানি সপ্তাহের (২৬ মে-১ জুন) কর্মবিবরণী প্রকাশ করা হয়। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের প্রধান নির্বাহী এম জাকির হোসেন খান।