Print Date & Time : 9 September 2025 Tuesday 7:58 am

শিল্প খাতে ঋণ বিতরণ বাড়াতে উদ্যোগ নিন

চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে দেশে এক বছরের ব্যবধানে শিল্প খাতে ঋণ বিতরণ ২৩ দশমিক ১৪ শতাংশ বেড়েছে। একই সঙ্গে আদায় বেড়েছে ২২ দশমিক ৩৭ শতাংশ। এ খাতে ঋণের চাহিদাও বেড়েছে। ফলে বেড়েছে বিনিয়োগ, তৈরি হচ্ছে নতুন কর্মসংস্থান। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। গতকাল শেয়ার বিজে প্রকাশিত বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি প্রতিবেদন ‘শিল্প খাতে ঋণের চাহিদা বাড়ছে’ অর্থনীতির গতিশীলতাই তুলে ধরেছে।

বর্তমানে অর্থনীতি তথা ব্যাংক খাতের বড় সমস্যা খেলাপি ঋণ ও অর্থ কেলেঙ্কারি। খেলাপি ঋণ কমানো গেলে অন্য উদ্যোক্তাদের ঋণ পাওয়ার সুযোগ হবে। আবার কেলেঙ্কারিতে তো ব্যাংক আমানতই লোপাট হয়ে যায়। জনগণের আস্থা কমে। এসব সমস্যার সমাধান করতে পারলে ব্যাংক খাতই সমৃদ্ধ হবে, অর্থনীতি এগিয়ে যাবে।

শিল্পোদ্যোক্তাদের ঋণ বিতরণ বাড়ানো গেলে তারা ব্যবসা সম্প্রসারণ করতে পারবেন। সেটি করা গেলে জাতীয় পর্যায়ে কর্মসংস্থানে আরও অবদান রাখতে পারবেন তারা। তবে এটিও প্রদেয় ঋণ শিল্প খাতেই ব্যবহার হচ্ছে, তাও নিশ্চিত করতে হবে। বড় ঋণগ্রহীতাদের দায়িত্বহীনতা-অসততায় খেলাপি ঋণ ও অর্থ পাচার বাড়ছে।

বড় শিল্প গোষ্ঠীকে ঋণ দিলে অন্য খাতের ঋণপ্রাপ্যতা কমে যেন বৈষম্য না হয়; সে বিষয়েও সতর্ক থাকতে হবে। অভিযোগ রয়েছে, বৃহৎ প্রতিষ্ঠানে ঋণ বেড়ে যাওয়ায় মাঝারি মানের প্রতিষ্ঠানে ঋণ বিতরণ কমছে। এখন শিল্পায়নের যুগ। ঋণ দানে ন্যায্যতা না থাকলে কোনো খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে, সে বিষয়ও বিবেচনায় রাখতে হবে।

বড় ঋণগ্রহীতাদের অবশ্যই ‘খেলাপি’ ধারা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। খেলাপি ঋণ যাতে অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে না যায়, এ জন্য ঋণ পরিশোধে ছাড় আরও বাড়িয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। এখন কিস্তির ৫০ শতাংশ অর্থ জমা দিলেই কেউ খেলাপি হবেন না। আগে কিস্তির ৭৫ শতাংশ অর্থ জমা দিতে হতো। এ সুযোগ মিলবে চলতি মাস পর্যন্ত; অর্থাৎ ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। গত সপ্তাহে গভর্নরের সঙ্গে দেখা করে ঋণ পরিশোধে ছাড় চেয়েছেন ব্যবসায়ী নেতারা। তারা চেয়েছিলেন, ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত ঋণের কিস্তি পরিশোধ না করেও ব্যবসায়ীরা খেলাপি হওয়া থেকে মুক্ত থাকুন। পুরোটা না দিলেও তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে নতুন ছাড় দিয়েছে। ছাড় প্রায়ই তাদের দেয়া হয়। কিন্তু তারা সুযোগের সদ্ব্যবহার করেন না। তাদেরও ‘সুযোগের অব্যবহার’-এর প্রবণতা পরিহার করতে হবে। তাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে, নিয়ন্ত্রক সংস্থা এমন সময়ে ব্যবসায়ীদের নতুন ছাড় দিয়েছে, যখন নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে ইসলামি ধারার কয়েকটি ব্যাংকে অস্থিরতা চলছে। এখন ব্যবসায়ীদেরও প্রমাণ করতে হবে; ঋণ পরিশোধে আগ্রহ ও প্রচেষ্টা রয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাবে শিল্পের উৎপাদন ব্যয় বেড়ে। এতে ঋণগ্রহীতাদের প্রকৃত আয় কমেছে। দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড গতিশীল রাখতে তাদের সুযোগ দেয়া হয়েছে। এখন ব্যাংকগুলোকে যাচাই-বাছাই করে ঋণ দিতে হবে। যাতে খেলাপি নন, নিয়মিত ঋণ পরিশোধ করেন; এমন ভালো উদ্যোক্তাদের ঋণ প্রাপ্তিতে সহায়তা দিতে হবে।