নিজস্ব প্রতিবেদক: বিশ্ব অর্থনৈতিক ব্যবস্থা চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের দিকে ধাবিত হচ্ছে। প্রাকৃতিক ফাইবারের (তন্তুর) পাশাপাশি কৃত্রিম ফাইবার তৈরি হচ্ছে। এর চাহিদাও বাড়ছে। এজন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (আর্টিফিশিয়াল) মেশিনারিজের প্রয়োজন হবে। বাংলাদেশকেও সেদিকে বিনিয়োগ শুরু করতে হবে। ভবিষ্যতে এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান।
দেশের অর্থনীতি, সরকারের নীতি পরিকল্পনা ও বর্তমান বাণিজ্যিক পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। ‘মিট দ্য রিপোর্টার্স’ অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে ঢাকা রিপোর্টারস ইউনিটি (ডিআরইউ)।
তিনি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের পাশাপাশি কভিডে অর্থনীতি, বিদেশি বিনিয়োগ, জিডিপি, কর ব্যবস্থাপনা ও নীতিমালা সংশোধন, টিকা আমদানি ও উৎপাদন, স্বাস্থ্য খাত, পুঁজিবাজার, পরিবহন খাতের শৃঙ্খলা, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট, বন্ধ হয়ে যাওয়া জিএমজি এয়ারলাইনস ও বেক্সিমকো সিনথেটিকস কোম্পানি, ব্যাংক খাত নিয়ে কথা বলেন।
নতুন বাংলাদেশের দিকে যাচ্ছি বলে মন্তব্য করেন বেক্সিমকো গ্রুপের এ প্রতিষ্ঠাতা বলেন, একটি নতুন বাংলাদেশের দিকে যাচ্ছি আমরা। এজন্য প্রস্তুত নিতে হবে ব্যবসায়ীসহ সবাইকে। তাই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।
ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের প্রয়োগ নিয়ে তিনি বলেন, শুধু সাংবাদিক নয় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন যাতে কোনো নির্দিষ্ট গ্রুপ বা গোষ্ঠীকে লক্ষ্য করে বাস্তবায়ন করার বিপক্ষে আমি। আশা করি আইনমন্ত্রী বিষয়টি দেখবেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির জন্য সব রাষ্ট্র ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন করছে। এটি আমাদেরও প্রয়োজন।
এক প্রশ্নে উত্তরে সালমান এফ রহমান বলেন, ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে বাংলাদেশের কেনা কভিডের টিকার বাকি চালানগুলো আগামী মাস থেকে আসবে। অবশিষ্ট টিকার ডোজ আগামী বছরের প্রথম প্রান্তিক অর্থাৎ মার্চের মধ্যেই চলে আসবে।
দেশেই কভিডের টিকা উৎপাদনের উদ্যোগের অগ্রগতি নিয়ে তিনি বলেন, ইনসেপ্টার টিকা তৈরি করার সব সক্ষমতা রয়েছে। চীনের সঙ্গে টার্মস অ্যান্ড কন্ডিশনস ঠিক হয়ে গেলে তারা উৎপাদনে যেতে পারবে। বেক্সিমকো ফার্মার টিকা উৎপাদনের সক্ষমতায় যাচ্ছে। আগামী চার-পাঁচ সপ্তাহের মধ্যে আমরা সে ক্ষমতায় চলে যাব।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বর্তমানে বিদেশি বিনিয়োগের যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। এজন্য চলতি মাসের শেষের দিকে বিডার উদ্যোগে একটি সম্মেলনের আয়োজন করা হচ্ছে। বিদেশিরা দেশ থেকে বছরে বিশ
থেকে ২৫ কোটি ডলার রেমিট্যান্স হিসেবে নিয়ে যাচ্ছে। এটি খুব একটা বেশি নয়। এর বাইরে যদি কেউ অর্থ নিয়ে যায়, সেটি হুন্ডির মাদ্যমে যেতে হবে। কিন্তু এর পরিমাণ খুবই কম।
আমাদের বিদেশি কর্মী প্রয়োজন। বিশেষ করে বস্ত্র খাতে বিদেশি দক্ষ কর্মীর প্রয়োজন রয়েছে। কারণ, আমাদের
প্রতিনিয়ত নতুন খাতের বাণিজ্যিক ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে। যেমন-আমরা ওষুধ শিল্পের কাঁচামাল আমদানি করতাম এতদিন। এখন কাঁচামাল তৈরির দিকে যাচ্ছি। এজন্য মেশিনারিজ চালাতে ও মান নিয়ন্ত্রণে বিদেশি কর্মীর প্রয়োজন।
স্বাস্থ্য খাত-সংক্রান্ত এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমরা সাধারণ চিকিৎসায় উন্নত হয়েছি। ক্যানসার ও নিউরো ছাড়া অন্যান্য খাত বিশেষ করে হার্টের চিকিৎসা ভালো করেছি। এখন পইলট প্রকল্প হিসেবে স্বাস্থ্য বিমা নিয়ে সরকার চিন্তা-ভাবনা শুরু করেছে যাতে চিকিৎসা খরচ কমে যায়। বিমা ছাড়া এটি সম্ভব নয়।
বেক্সিমকোর সৌরবিদ্যুৎ প্লান্ট আগামী বছর বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। পুঁজিবাজারের দুটি মৌলিক সমস্যা রয়েছে এজন্য বাজারটি বড় হচ্ছে না জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের পুঁজিবাজারের গভীরতা বেশি নয়। দেশের পুঁজিবাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী নেই বললে চলে।
এখানে যে লেনদেন হয় তার ৮০ শতাংশ আসে রিটেইল বা সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে। বাকি ২০ শতাংশ আসে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে। এজন্যই বাজার বড় হচ্ছে না। কিন্তু হওয়া উচিত ছিল মাত্র ২০ শতাংশ সাধারণ বিনিয়োগকারী। আর আমাদের পুঁজিবাজার ইকুইটিভিত্তিক। এখানে বন্ড মার্কেট নেই। বন্ড মার্কেটের উন্নয়নে আমরা কাজ করছি। বিএসইসি বন্ড মার্কেট উন্নয়নে কাজ করছে। এটি ট্রেডিংয়ে আসলে বাজার ভালো হবে।
জিএমজি এয়ারলাইনসের ফিরে আসা ও বেক্সিমকো সিনথেটিকসের উৎপাদন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা যদি ওই সময়ে জিএমজি বন্ধ না করতাম, তাহলে ভারতের কিং ফিশারের মতো অবস্থা হতো। আমাদের গ্রুপের ব্যবসায় সমস্যা হতো। আমরা তো শেয়ার ফিরিয়ে আনার জন্য বিএসইসিকে বলেছি। ১৮ থেকে ২০ কোটি টাকা লাগবে এসব শেয়ার কিনে নিতে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ নীতিমালা করে দিলেই আমরা বাজারের সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ারগুলো কিনে নেব।
ঋণখেলাপি-সংক্রান্ত এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, দেশের ব্যাংকগুলো স্বল্প সময়ের জন্য আমানত নিয়ে দীর্ঘ সময়ের বিনিয়োগ করে। ভবিষ্যতে কয়েকটি ব্যাংককে মার্জার (এক ব্যাংকের সঙ্গে অন্য ব্যাংকের একীভূত) করা লাগবে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিআরইউর সভাপতি মুরসালিন নোমানী। সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক মসিউর রহমান খান।