Print Date & Time : 27 July 2025 Sunday 12:34 pm

শিশুমৃত্যু বৃদ্ধির কারণ খুঁজতে উদ্যোগ নিন

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নবজাতক ও শিশু ওয়ার্ডে এক সপ্তাহে ৯৬ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে নবজাতক ওয়ার্ডে ৭৪ জন এবং শিশু ওয়ার্ডে ২২ জন মারা গেছে। মারা যাওয়া বেশিরভাগ শিশু জš§গত শারীরিক ক্রটি ও ঠান্ডাজনিত রোগে ভুগছিল। মমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে আমাদের প্রতিনিধি জানান, গত এক সপ্তাহে নবজাতক ওয়ার্ডে (এসআইসিইউ) ওয়ার্ডে স্থান সংকুলান না হওয়ায় মেঝে ও বারান্দায় চিকিৎসা দিতে হচ্ছে অনেক শিশুকে। রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসকদের।

কভিড মহামারির সংক্রমণকালে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোয় চিকিৎসাসেবা বঞ্চিত হাজার হাজার মা ও শিশুর জীবন হুমকিতে ছিল। সবচেয়ে নাজুক অবস্থায় ছিল বাংলাদেশের। সে সময় ছয় মাসের মধ্যে ২৮ হাজার শিশুর মৃত্যুর আশঙ্কা করেছিল জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ। জন হপকিনস ব্লুমবার্গ স্কুল অব পাবলিক হেলথের গবেষণার বরাত দিয়ে ইউনিসেফ এ আশঙ্কা প্রকাশ করে।

শিশুমৃত্যু নিয়ে ইউনিসেফের আশঙ্কা অমূলক প্রমাণিত হয়েছে। কিন্তু কভিডের অভিঘাত সফলভাবে মোকাবিলা করেছে বাংলাদেশ। শিশুমৃত্যুর হার রোধে বাংলাদেশের সাফল্য বিশ্ববাসীর কাছে সুবিদিত। অতীতে ধারাবাহিকভাবে এক বছর বয়সী শিশুর মৃত্যুহার কমে এলেও কয়েক বছরে তা থেমে আছে। এ অবস্থায় ময়মনসিংহের ঘটনা এ খাতে আমাদের সীমাবদ্ধতা সামনে এনেছে।  

আমরা জানি, শিশু ও নবজাতক মৃত্যুর কারণ ও প্রতিকার নির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত। কেন তা মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় মনোযোগ কমেছে, তা ভাবতে হবে। নবজাতকের  মৃত্যু রোধে প্রধান করণীয় হলো স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রসব ঘটানো এবং তা করাতে হবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত স্বাস্থ্যকর্মীদের দ্বারা। থাকতে হবে প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা উপকরণও। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেন, এখনও প্রায় ৪৫ শতাংশ শিশু জš§ নিচ্ছে বাড়িতে। বলা হয়ে থাকে তিনটি মূল কারণে নবজাতকের মৃত্যুহার কমছে না।

প্রথমত, বার্থ এক্সপেকশিয়া বা এককালীন শ্বাস জটিলতা। মায়ের পেট  থেকে বেরিয়ে অনেক শিশু নিজে শ্বাস নিতে পারে না। তখন তাদের অক্সিজেন মাস্কের দরকার পড়ে। বাড়িতে জš§ নেয়া শিশুকে মাস্ক দেয়া সম্ভব হয় না। দ্বিতীয়ত, নিউমোনিয়া ধরনের কিছু সংক্রমণ, যাকে বলে সেপসিস। তৃতীয়ত, জš§কালে ওজন কম থাকা। এসব পরিস্থিতি মোকাবিলায় ন্যূনতম প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মী দেশে নেই; স্বাস্থ্যকেন্দ্রও আছে প্রয়োজনের তুলনায় কম।

শিশু ও নবজাতক মৃত্যুর বড় কারণ বাল্যবিয়ের প্রবণতা। এখানে মা-বাবা দুজনই কম বয়সী হওয়ায় তাদের সচেতনতা কম। ফলে নবজাতকের স্বাস্থ্যঝুঁকি বড় উদ্বেগের কারণ থাকে। দেশে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার বিষয় প্রকট। যেখানে চরম দরিদ্র পরিবারগুলো দিনে তিন বেলা খাবারের সংস্থান করতে পারছে না, সেখানে প্রসূতি মায়ের যথাযথ স্বাস্থ্যসেবা নেয়া তাদের জন্য কঠিনই বটে। ময়মনসিংহে মারা যাওয়া কম বয়সী শিশুরা জšে§র আগে-পরে ন্যূনতম সরকারি চিকিৎসাসেবা নিতে পেরেছে কি না, সেটিও বড় প্রশ্ন। শিশুমৃত্যু রোধে সাফল্য যাতে প্রশ্নবিদ্ধ না হয়, সে লক্ষ্যে শিশুমৃত্যুর কারণ খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। শিশুস্বাস্থ্যকে অগ্রাধিকার দিয়ে সব শিশু এবং সন্তান জš§দানের আগ-পরে টিকাদান নিশ্চিত করাসহ চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে হবে।