শীতলক্ষ্যায় জাহাজের চাপায় লঞ্চডুবি ছয়জনের মরদেহ উদ্ধার

প্রতিনিধি, নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জে শীতলক্ষ্যা নদীতে সিটি গ্রুপের মালিকানাধীন একটি মালবাহী জাহাজের ধাক্কায় লঞ্চডুবির পর ছয়জনের মৃতদেহ উদ্ধারের কথা জানিয়েছে পুলিশ। নারায়ণগঞ্জ সদর নৌ থানার ওসি মনিরুজ্জামান বলেন, এখন পর্যন্ত (গতকাল সন্ধ্যা) ছয়জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে দুজন শিশু, দুজন নারী ও একজন পুরুষ। ঠিক কতজন নিখোঁজ আছেন, তা এখনও স্পষ্ট নয় বলে জানান ওসি।

এ ঘটনায় নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব আ ন ম বজলুর রশীদকে আহ্বায়ক করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে কমিটিকে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল (যাত্রী পরিবহন) সংস্থার নারায়ণগঞ্জ জোনের সভাপতি বদিউজ্জামান বাদল বলেন, রোববার নারায়ণগঞ্জ লঞ্চ টার্মিনাল থেকে যাত্রী নিয়ে মুন্সীগঞ্জের উদ্দেশে রওনা হয়েছিল এমএল আশরাফ উদ্দিন-২ নামের লঞ্চটি। বেলা ২টার দিকে সোনাকান্দা এলাকায় কয়লা ঘাটের কাছে রূপসী-৯ জাহাজটি পেছন থেকে চাপা দিয়ে ডুবিয়ে দেয়। ডুবে যাওয়া লঞ্চটি উদ্ধারে কাজ করছে। এছাড়া লঞ্চডুবির ঘটনায় জরুরি যোগাযোগের জন্য বিআইডব্লিউটিএ একটি ‘হটলাইন’ খুলেছে; যার নম্বর-১৬১১৩।

ওসি মনিরুজ্জামান বলেন, রূপসী-৯ সিটি গ্রপের মালিকানাধীন একটি কার্গো জাহাজ। জাহাজ চলাচাল সম্পর্কিত ওয়েবসাইট ভেসেলফাইন্ডারে রূপসী-৯ এর মালিক হিসেবে সিটি সিড ক্রাশিং ইন্ডাস্ট্রিজের নাম রয়েছে। এ বিষয়ে কথা বলার জন্য সিটি গ্রুপের পরিচালক বিশ্বজিত সাহাকে ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি।

রাকিব আল রাজু নামে একজন কাছের আরেকটি লঞ্চ থেকে ওই ঘটনার ভিডিও মোবাইল ফোনে ধারণ করে ফেসবুকে দিলে তা ভাইরাল হয়ে যায়। সেখানে দেখা যায়, রূপসী-৯ জাহাজটি একপাশ থেকে চলন্ত লঞ্চটির ওপর চেপে বসে। লঞ্চের আতঙ্কিত যাত্রীরা নদীতে লাফিয়ে পড়তে শুরু করেন। এ অবস্থা চলে প্রায় ২৫ সেকেন্ড। একপর্যায়ে লঞ্চটি ডুবে যায়। 

তদন্ত কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেনÑক্যাপ্টেন আবু সাইদ মোহাম্মদ দেলোয়ার রহমান ও বিআইডব্লিউটিএ’র পরিচালক (নৌনিরাপত্তা ও ট্রাফিক)। নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের এক অফিস আদেশে বলা হয়, কমিটি দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে দুর্ঘটনার কারণ উদঘাটন এবং দুর্ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তি বা সংস্থাকে শনাক্ত করবে। এছাড়া দুর্ঘটনা প্রতিরোধে করণীয় নির্ধারণ করে সুনির্দিষ্ট সুপারিশ করবে।

ওসি মনিরুজ্জামান জানান, ‘রূপসী-৯’ কার্গোর ধাক্কায় মাঝ নদীতে ডুবে যাওয়া লঞ্চটিতে অর্ধশত যাত্রী ছিল। তাৎক্ষণিকভাবে তিনজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। ‘এমএল আশরাফ উদ্দিন-২’ নামের লঞ্চটি নারায়ণগঞ্জ লঞ্চ টার্মিনাল থেকে যাত্রী নিয়ে মুন্সীগঞ্জ যাচ্ছিল। বেলা ২টার দিকে সোনাকান্দা এলাকায় কয়লা ঘাটের কাছে রূপসী-৯ জাহাজটি পেছন থেকে এটিকে চাপা দিয়ে ডুবিয়ে দেয়।

একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলছেন, আশপাশের নৌযান থেকে লোকজন চিৎকার করছিল, কিন্তু লঞ্চের ওপর উঠে পড়া জাহাজটি গতি কমায়নি। ঘটনার বর্ণনায় তিনি বলেন, ‘২টা ১০ মিনিটের দিকে নারায়ণগঞ্জ নতুন ব্রিজের পাশে পৌঁছার পর দেখি একটি লঞ্চের ওপর জাহাজ তুলে দিয়েছে। লঞ্চের উপরে ওঠার পরও শিপটা সেøা করে নাই। এর কারণ হতে পারে, শিপের পাইলট হয়ত এটা দেখেও নাই। আমরা অনেক চিৎকার করেছি। তাতেও কোনো কাজ হয় নাই।’

ওসি মনিরুজ্জামান বলেন, দুর্ঘটনার পর পরই জাহাজটি নিয়ে পালিয়ে যায় মাস্টার। তারপর জাহাজটিকে মুন্সীগঞ্জের হোসনিবাগ ডকইয়ার্ডে রেখে সবাই পালিয়ে যায়। সেখান থেকেই জাহাজটি আটক করা হয়েছে।