Print Date & Time : 28 July 2025 Monday 2:56 am

শীতল ও শিথিল হচ্ছে ভারতের প্রতিবেশী সামীপ্য?

অয়নাংশ মৈত্র: ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রিত্ব গ্রহণ করার আগে বেশ ঢাকঢোল পিটিয়ে প্রতিবেশী রাষ্ট্রনেতা ও নেত্রীদের আমন্ত্রণের মাধ্যমে কূটনৈতিক ইনিংস শুরু করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। আন্তরিকতার সঙ্গে প্রতিবেশীকে প্রাধান্য দিয়ে নেবারহুড ফার্স্ট নীতি প্রবর্তন করে নানাভাবে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিলেও প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কে জমছে বরফ। ক্রমেই আবহাওয়া বদলাচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে। উত্তরে এভারেস্টের অলিন্দে নেপাল থেকে দাক্ষিণাত্যে ভারত মহাসাগরের দ্বীপরাষ্ট্র পর্যন্ত উত্তাপ হারিয়ে ভারতের অত্যন্ত উষ্ণ সম্পর্কগুলো হচ্ছে নাতিশীতোষ্ণ। হিন্দুত্ববাদী ডানপন্থি রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় আসায় ভারতের প্রতি বিরূপ ধারণা জন্মায় প্রতিবেশী মুসলিম দেশগুলোর জনগণের মধ্যে। অন্যদিকে দক্ষিণ এশিয়ায় রাজনীতির গতিপ্রকৃতির নির্ণয়নে তথা নির্ধারণে গুরুত্ব বাড়ছে চীনের।

চীনের দুর্নিবার গতিতে এগিয়ে চলা ভবিষ্যৎমুখী বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ ভারতের কাছে প্রতিবন্ধকতার ও আশঙ্কার। বাংলাদেশ ও নেপালের মতো সুহৃদ এবং সুপ্রতিবেশী এই বিআরআই বা বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভে চুক্তিবদ্ধ। ২০১৭ সালে ডোকলাহামে নিরাপত্তাজনিত উষ্মার পর গত জুন মাসে গালোয়ান উপত্যকায় চীনা সেনাবাহিনীর সঙ্গে হাতাহাতিতে ২০ ভারতীয় সৈনিকের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে অবক্ষয় হয় ভারত-চীন সম্পর্ক। চীন তাদের হতাহতের সংখ্যা প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকে। লাইন অব অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোলে শুরু হয় নিরাপত্তা দ্বিধার (সিকিউরিটি ডিলেমা)। ভারতে নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয় টিকটকসহ বেশ কিছু অ্যাপ।

২০১৯ সালে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের মহাবলিপুরম ও চেন্নাই ভ্রমণের পর দুটি দেশ অনড় ও অটল থেকেছে তাদের স্বীয় অবস্থানে। চীনের চাপ সত্ত্বেও ঘরোয়া দ্রব্যের বাজার ও মূল্যের অবক্ষয়ের আশঙ্কা করে বাণিজ্যমূলক মুক্ত আঞ্চলিক বাণিজ্য চুক্তি বা আরসিইপি সই করা থেকে বিরত থেকেছে নতুন দিল্লি।

ভারতের সুপ্রতিবেশী দেশগুলোয় বিপুল বিলগ্নি, আর্থিক সহায়তা, ঋণ ও সামরিক কূটনীতির চাল চেলে ভারতের প্রভাব লঘূকরণে সচেষ্ট বেজিং। কৌশলগতভাবে ভারতকে ঘিরে রাখতে চীন বাস্তবায়ন করছে স্ট্রিং অব পার্লস। নানা খাতে আর্থিক সহায়তা, বিলগ্নি ও ঋণের মাধ্যমে আফগানিস্তান, বাংলাদেশ, মালদ্বীপ, পাকিস্তান, নেপাল ও শ্রীলঙ্কায় প্রায় ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বেইজিং। দক্ষিণ এশিয়ায় পাকিস্তানের লগ্নি করা সিপিইসি এর মধ্যে সর্ববৃহৎ। বাংলাদেশ দ্বিতীয় স্থানে। মূলত বৈদ্যুতিক কেন্দ্র, সড়কপথ, রেলপথ, নৌ ও বিমানবন্দর তৈরিতে চীনের আর্থিক ও প্রকৌশলী সহায়তা পাচ্ছে দেশগুলো। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোয় চীনের বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ছে ক্রমেই। বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও নেপালে দ্রুত গতির ব্যবসা ও বিপণন দৃঢ় করেছে চীনের সঙ্গে তাদের রাজনৈতিক অন্বয়।

২০১৯ সালে ভারতের নাগরিক সংশোধনী বিল ও জাতীয় নাগরিক পঞ্জীকরণ নিয়ে অসন্তোষ ও ক্ষোভ দেখা দেয় বাংলাদেশে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন স্থগিত করেন দিল্লি সফর। জুনে বাংলাদেশকে প্রায় আট হাজার পণ্য রপ্তানির জন্য তাদের বাজার অবারিত করে চীন। সিলেটে ভারত সীমান্ত লাগোয়া একটি বিমানবন্দর নির্মাণের কাজ পায় চীনের একটি নির্মাণ সংস্থা। ভারতের সঙ্গে তিস্তার পানি নিয়ে বিবাদ অমীমাংসিত থেকে গেলে বাংলাদেশের পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় বেইজিংয়ের কাছে এক বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সহায়তা চায়।

অন্যান্য প্রতিবেশী দেশের মতো বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা, দুর্যোগকালীন সহায়তা, উচ্চশিক্ষা, চিকিৎসা, প্রযুক্তি প্রভৃতি ক্ষেত্রে ভারতের অবদান রয়েছে। তবে চীনের তুলনায় অনেক কম। গত আট বছরে সড়ক, রেলপথ, বন্দর ও পরিকাঠামো উন্নয়নে ভারত শুধু ঋণের সীমায় আট বিলিয়ন ডলারের আর্থিক সহায়তা দেয় বাংলাদেশকে। প্রায় ১৫৫ মিলিয়ন ডলার ভারত ব্যয় করেছে বাংলাদেশের নগর উন্নয়নসহ বেশ কিছু উন্নয়ন খাতে। বাংলাদেশে শরণার্থী রোহিঙ্গাদের জন্য অপারেশন ইনসানিয়াতের মাধ্যমে ত্রাণসামগ্রী পাঠায় ভারত। ভারতের আর্থিক আনুকূল্যে স্মল ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের আওতায় ছাত্রাবাস, অনাথ আশ্রম, বৃদ্ধাশ্রম ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের মতো প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে। সখ্যের খাতিরে গত কোরবানির ঈদে ১০টি লোকোমোটিভ রেল ইঞ্জিন বাংলাদেশকে উপহার দেয় ভারত। কভিডের প্রাদুর্ভাব প্রতিহত করতে ঢাকায় ওষুধপথ্য পাঠায় নতুন দিল্লি। ২০১৬ সালে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বাংলাদেশ সফরকালে প্রায় ২৭টি চুক্তি সই করে। ভারতকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশ অনেক ব্যাপারে প্রাধান্য দিচ্ছে চীনকে। পদ্মা সেতু বা চট্টগ্রামে নদী সুড়ঙ্গ নির্মাণ করা হচ্ছে চীনের সহায়তায়। পাকিস্তান ও বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি যুদ্ধাস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম কিনেছে চীন থেকে। ঢাকা ও করাচির স্টক এক্সচেঞ্জে অংশীদারিত্ব নিয়েছে চীন।

তালেবান শাসনের পরবর্তী সময়ে আফগানিস্তানের পুনর্নির্মাণে ভারতের অবদান অসীম। দেশটিতে গণতন্ত্রের ভিত মজবুত করতে, মানবসম্পদের উন্নয়নে ও প্রতিরক্ষা থেকে পরিকাঠামো উন্নয়নে তিন বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি অর্থ ব্যয় করেছে নতুন দিল্লি। দেশটিতে তালেবানের পেশি প্রদর্শন এবং যুক্তরাষ্ট্রে সেনা প্রত্যর্পণ ভারতের কাছে বিশেষ উদ্বেগের। ইন্ট্রা আফগান আলোচনার পর তালেবানের ক্ষমতা বাড়লে আফগানিস্তান ও ভারতের মৈত্রী বিঘিœত হবে। আফগানিস্তানের শান্তি প্রক্রিয়ায় পাকিস্তানের গুরুত্ব বাড়লে অস্বস্তিতে পড়ে ভারত।

ভারতের পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশী পাকিস্তানের সঙ্গে বিবাদ জন্ম লগ্ন থেকেই। প্রায়ই গুলিবিনিময় হয় লাইন অব কন্ট্রোলে। বারুদ ও বৈরিতায় বাতাস ভারী থাকে ভারত-পাক সীমান্তের আকাশে। কাশ্মীরকে কেন্দ্র করে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক হিমশীতল। রাস্তা বন্ধ বাণিজ্যের। মোদির পাকিস্তান ভ্রমণের পর ২০১৬ সালে ভয়াবহ হামলা চালায় পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদী সংগঠন। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে ভারতশাসিত কাশ্মীরের পুলওয়ামায় সন্ত্রাসবাদী হামলার প্রতিশোধ নিতে পাকশাসিত কাশ্মীরের ভূখণ্ডে জইশ-ই-মহম্মদের শিবিরে বেসামরিক প্রতিরক্ষামূলক হামলা চালায় ভারত। কাশ্মীরের স্বশাসন ৩৭০ ধারা এবং ৩৫(এ) উচ্ছেদ করলে ইসলামাবাদে নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূতকে বিতাড়ন করে পাকিস্তান। দুটি দেশের সম্পর্ক এখন শীতলতম। প্রধানমন্ত্রী মোদির আহ্বানে গত মার্চে করোনার প্রকোপ রুখতে সার্কের ভার্চুয়াল সমাবেশে কোনো গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ থেকে বিরত থাকে ইসলামাবাদ।

১৯৫০ সালের শান্তি ও বন্ধুত্বের চুক্তিতে আবদ্ধ নেপালকে নানা প্রয়োজনে, পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে সহায়তা করে আসছে ভারত। গত ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে ভারতীয় মুদ্রায় এক হাজার ২০০ কোটি টাকা নেপালকে সহায়তা দেয় মোদি সরকার। ২০১৮ সালে নেপালে প্রধানমন্ত্রী অলির প্রত্যাবর্তনের পর থেকে অর্থনৈতিক অবরোধ ও দেশি ইস্যুতে দিল্লি থেকে দূরে সরতে থাকে কাঠমান্ডু। মে মাসে নেপালের প্রধানমন্ত্রী অলি ভারতের উত্তরাখন্ড রাজ্যের কালাপানি, লিম্পিয়াধুরা ও লিপুলেখকে নেপালের রাজনৈতিক ম্যাপে প্রকাশ করে নেপালের সুদূর পশ্চিম প্রদেশের ভূখণ্ড বলে দাবি করেন। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এটিকে ভিত্তিহীন বলে দাবি করে। অতঃপর ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং তিব্বত সীমান্তে ধরচুলা থেকে লিপুলেখ অবধি ৮০ কিমি রাস্তা উদ্বোধন করেন। ভূগোল থেকে দ্বন্দ্ব এসে পৌঁছায় ইতিহাসে। রাম ও গৌতম বুদ্ধের জš§স্থান নিয়েও মন্তব্য করে বামপন্থি প্রধানমন্ত্রী অলি। তবে সম্প্রতি দুটি দেশের সরকার আলোচনায় শামিল হয়েছে।

ভুটানের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক রয়েছে অক্ষুন্ন। ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী মোদি ও ২০১৯ সালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয় শঙ্করের প্রথম বিদেশ সফরের গন্তব্য ছিল ভুটান। দেশটির পরিকাঠামো উন্নয়ন, জলশক্তি উৎপাদন, নিরাপত্তাসহ নানা খাতে ভারত আর্থিক সহায়তাসহ নানা সহায়তা দিয়ে আসছে। ডোকলাহামের ঘটনায় চীনের আগ্রাসন থেকে রক্ষা পাওয়ায় ভারতের ওপর নির্ভরতা ও আস্থা অটুট থাকে ভুটানের। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের জন্মের পর ভুটানই প্রথম কোনো রাষ্ট্র, যে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়।

মূলত কৌশলগত কারণে দক্ষিণ এশিয়ার দুই দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপকে পাশে রাখতে নানা প্রচেষ্টা নিয়েছে চীন। শ্রীলঙ্কার রাজপাটে রাষ্ট্রপতি রাজপক্ষ ক্ষমতাসীন হওয়ায় চীনের চাপে ভারতের প্রভাব শিথিল হয়। চীন সুকৌশলে লঙ্কার হাম্বানটোটা নৌবন্দর ৯৯ বছরের জন্য দখল করে। নির্বাচনের পরপরই গোটাবায়ে রাজাপক্ষ দিল্লি এসে ৪৫০ মিলিয়ন ডলার সহায়তা চান। মোদি ও গোটাবায়ে সরকারের সম্পর্কে স্থিতাবস্থা আসে।

মালদ্বীপের মসনদে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ইব্রাহীম মহম্মদ সলি ক্ষমতাসীন হলে সুসম্পর্কের বাঁধ জুড়ে দেয় ভারত ও এই দ্বীপপুঞ্জের দেশকে। কোরাল পাথরে নির্মিত ফ্রাইডে মসজিদের সংরক্ষণ, ক্রিকেট স্টেডিয়াম নির্মাণসহ নানা খাতে সহায়তায় এগিয়ে আসে ভারত। মালদ্বীপের অনুরোধে এক দশমিক চার বিলিয়ন মার্কিন ডলারের এবং পৃথকভাবে আর্থিক মন্দা থেকে অব্যাহতি পাওয়ার জন্য ৪০০ মিলিয়ন সহায়তা দেয় ভারত। গ্রেটার মালে কানেক্টিভিটি প্রকল্পের জন্য সম্প্রতি ৫০০ মিলিয়নের যোগাযোগ প্রকল্প ঘোষণা করে দিল্লি। ছোট কয়েকটি প্রকল্পে সাত মিলিয়ন ডলারের সহায়তা ছাড়াও হাই ইমপ্যাক্ট কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের জন্য মালদ্বীপকে ভারত প্রায় পাঁচ দশমিক ছয় মিলিয়ন ডলার অর্থ সহায়তা করে। ভারত প্রদত্ত ৮০০ মিলিয়নের ঋণের সীমায় সাতটি বড় পরিকল্পনা ও নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। কভিডের দাপটে অর্থনীতি দীর্ণ হয়ে যাওয়া নৈসর্গিক সৌন্দর্যের অধিকারী এই দেশে ভ্রমণকেন্দ্র, মৎস্য চাষ ও প্রতিরক্ষা খাতে উন্নয়নে সাহায্য দিয়েছে ভারত।

বৈশ্বিক মহামারি ছড়িয়ে পড়ার প্রাক্কালে চীনের উহান শহর থেকে মালদ্বীপের নাগরিকদের ফিরিয়ে আনা, মালেতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের একটি দলের সঙ্গে সঙ্গে পাঁচ দশমিক পাঁচ টনের অতিপ্রয়োজনীয় ওষুধপথ্য, ৫৮০ টনের খাদ্য ত্রাণসামগ্রী পাঠানোসহ নানাভাবে সহায়তা দেয় মোদি সরকার। সরাসরি পণ্য পরিবহনের জন্য ফেরি পরিষেবা ব্যতীত এই দ্বীপরাষ্ট্রে পর্যটনের মাধ্যমে অর্থনীতিকে দ্রুত পুর্ণোদ্যমে সচল করতে ভারত দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম কোনো দেশের সঙ্গে ‘এয়ার বাবল’ পর্যটন পরিষেবা চালু করে।

গত ১৫ আগস্ট ভারতের ৭৪তম স্বাধীনতা দিবস উদ্যাপনে জাতির উদ্দেশে ভাষণে ???প্রতিবেশী সম্পর্ক রক্ষায় বিশেষ মাত্রা পাওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করেন। ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিবেশী দেশগুলোয় সহায়তার জন্য ভারতীয় মুদ্রায় আট হাজার ৪১৫ কোটি রুপি বরাদ্দ করে ভারতের অর্থ মন্ত্রণালয়। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ইন্ডিয়ান টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কোঅপারেশন প্রকল্পে নানা খাতে আর্থিক সাহায্য পায় দক্ষিণ এশিয়াসহ বিশ্বের নানা উন্নয়নশীল দেশ। ক্রমেই পরিবর্তনশীল রাজনৈতিক আবহে শুধু রাজনৈতিক মূলধন বা পলিটিকাল ক্যাপিটাল বিনিয়োগ করে পরম প্রিয় প্রতিবেশীদের সবসময় পাশে পাবে না নতুন দিল্লি। দক্ষিণ এশিয়ার মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চলে বাণিজ্য ও বিপণন বাড়াতে ভারতের আন্তরিক প্রয়াস বিশেষ প্রয়োজন। প্রতিবেশীর আর্থিক সমৃদ্ধি বৃদ্ধি পেলে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক হবে উষ্ণতর। ভারতের ইসরো থেকে উৎক্ষেপিত দক্ষিণ এশিয়ার উপগ্রহ বিশেষ উপকারে লেগেছে কৃষিনির্ভর প্রতিবেশীদের। সার্কের বাইরে ইরান, মিয়ানমার, সেসেলস, মরিশাসের মতো প্রতিবেশীকে যোগাযোগব্যবস্থা, বাণিজ্য, নিরাপত্তা ও কৌশলগত কারণে নানা সহায়তার মাধ্যমে পাশে রেখেছে নতুন দিল্লি। আসিয়ান, বিবিআইএন বা বিমসটেকের আলোচনায় প্রতিবেশী দেশগুলোর উচিত বাণিজ্যকে প্রাধান্য দেওয়া। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে প্রতিবেশী দেশগুলোয় ভারতের রপ্তানির পরিমাণ ছিল ২৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি। এটিই সর্বকালের সর্বোচ্চ। ভারতের মোট রপ্তানির সাত দশমিক আট শতাংশ। দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অবনতির কারণে এই হার নেমে দাঁড়ায় সাত শতাংশে।

নিশিথের অবসানে আত্মপ্রকাশ করে ঊষা। কভিড-উত্তর শতাব্দীতে দক্ষিণ এশিয়ায় শিল্প, বাণিজ্য ও বিনিয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে বেশ কিছু ক্ষেত্রে। প্রাদুর্ভাবে স্থবির থাকা বিশ্ব স্বচ্ছন্দে ফিরছে ধীরে ধীরে। ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যিক ঘাটতি মেটাতে সার্ক দেশগুলোকে হতে হবে সুনিবিড়। নিষ্ক্রিয় ও মিথোজীবী সংগঠন সার্কের অনিশ্চয়তায় আফগানিস্তানে অচলাবস্থার অবসান, দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা সুনিশ্চিতকরণ, মানবসম্পদ উন্নয়ন, স্বাস্থ্য ও সুচিকিৎসা, অর্থনীতির গতি ত্বরান্বিত করা এবং সর্বোপরি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে সুদৃঢ় হতে হবে সব আঞ্চলিক দেশের পারস্পরিক সুসম্পর্ক।

ভারতীয় ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক

গণমাধ্যম ও পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক গবেষক