Print Date & Time : 10 September 2025 Wednesday 9:53 am

শীর্ষ খেলাপি থেকে ঋণ আদায়ে ব্যবস্থা নিন

ঋণ নিতে হলে গ্রহীতাকে বাধ্যতামূলকভাবে প্রথমেই সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে একটি অ্যাকাউন্ট (হিসাব) খুলতে হয়। জামানত, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরোর (সিআইবি) ছাড়পত্র এবং গ্রাহকের ব্যবসার অস্তিত্ব, ধরন ও ঋণপ্রাপ্তির যোগ্যতা যাচাই করা হয়। ঋণপ্রস্তাব যথাযথ হলে ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ঋণ অনুমোদনের জন্য পরিচালনা পর্ষদের কাছে সুপারিশ করেন। পর্ষদ সভায় এটি যাচাই করা হয়। সব প্রক্রিয়া শেষ করে একজন গ্রাহকের ঋণ পেতে কয়েক মাস সময় লেগে যায়।

এত নিয়মের পরও ঋণ কেলেঙ্কারিতে জর্জরিত রাষ্ট্রায়ত্ত বিভিন্ন ব্যাংকে বেশ কয়েকটি ঋণ অনুমোদনে বিস্ময়করভাবে নিয়মের ব্যত্যয় ঘটেছে। দ্রুত ঋণ হস্তান্তরের অবিশ্বাস্য ঘটনাও ঘটেছে। এরপর ঋণের সেই অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে।

বহুল আলোচিত বেসিক ব্যাংকে নিয়মকানুন উপেক্ষা করে ঋণের নামে কীভাবে সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে, তা সবার জানা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদন্তেই বেরিয়ে এসেছে তথ্য-প্রমাণ। পরে দুদকের তদন্তেও তা উঠে এসেছে। এরপর আরও অনেক কোম্পানির জাল-জালিয়াতির বিস্ময়কর প্রমাণ পেয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও দুদক। সে হিসেবে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়ার কথা। কিন্তু আমাদের সে ধরনের কোনো দৃষ্টান্ত নেই।

গতকাল শেয়ার বিজে ‘শীর্ষ খেলাপি থেকে ঋণ আদায়ে ব্যর্থ রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংক?’ শীর্ষক প্রতিবেদন পড়ে অনেকের মনে হবে খেলাপি ঋণ প্রতিরোধে সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রক সংস্থাসহ রাষ্ট্রের নেওয়া ব্যবস্থা যথেষ্ট নয়।  

খবরে বলা হয়, শীর্ষ ৮০ খেলাপির কাছে জিম্মি সোনালী, অগ্রণী, জনতা ও রূপালী ব্যাংক। শীর্ষ খেলাপিদের তালিকায় রয়েছে টিঅ্যান্ড ব্রাদার্স গ্রুপ, হলমার্ক গ্রুপ, মডার্ন স্টিল, ফেয়ার ট্রেড ফেব্রিকস, রহিম গ্রুপ, এননটেক্স গ্রুপ, ক্রিসেন্ট গ্রুপ, বিসমিল্লাহ গ্রুপ, থার্মেক্স গ্রুপ ও মুন গ্রুপ।

২০১৩ সাল থেকে এখন পর্যন্ত কোনো বছরই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো ঋণখেলাপিদের থেকে অর্থ আদায়ের লক্ষ্য অর্জন করতে পারেনিÑএমন খবর আমাদের ব্যাংক ব্যবস্থার দীনতাকেই তুলে ধরে। রাষ্ট্রকে এর প্রতিবিধানে ব্যবস্থা নিতে হবে।

প্রতি বছরই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি বার্ষিক চুক্তি হয়। ওই চুক্তিতে নির্ধারণ করে দেওয়া হয় পরবর্তী বছরের কর্মপরিকল্পনা।  যেমনÑআমানত সংগ্রহ, ঋণ বিতরণ, খেলাপি ঋণ হ্রাস, লোকসানি শাখা কমানো, শীর্ষ ২০ খেলাপি থেকে আদায়, ঋণ পুনঃতফসিলসহ বিভিন্ন লক্ষ্যমাত্রা প্রভৃতি। কিন্তু বছর শেষে গুণগত পরিবর্তন লক্ষ করা যায় না। এতে প্রতীয়মাণ হয়, ব্যাংকগুলো পরিকল্পনা বাস্তবায়নে তৎপর নয়। হয়তো ব্যাংকের কর্তাব্যক্তিরা মনে করেন, চুক্তি নিছক আনুষ্ঠানিকতা। নির্দিষ্ট সময় অন্তর  অগ্রগতি মূল্যায়ন ও পর্যবেক্ষণ করা হলে খেলাপি ঋণ আদায়ে ব্যর্থ হতো না রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো।

ঋণ বিতরণে ব্যাংকগুলো কতটা স্বচ্ছ, তা নিশ্চিত করতে হবে। ব্যাংকারের যোগসাজশ ছাড়া কোনো কোনো ঋণগ্রহীতার খেলাপি হওয়ার সুযোগ নেই। তাই অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা, সুশাসন ও জবাবদিহির ওপরও গুরুত্ব দিতে হবে।