Print Date & Time : 18 August 2025 Monday 2:02 am

শীর্ষ ১০ ওষুধ কোম্পানির মার্কেট শেয়ার ৬৯ শতাংশ

নিয়াজ মাহমুদ: স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে দিন দিন চাহিদা বাড়ছে বাংলাদেশে উৎপাদিত ওষুধের। ওষুধের বাজারে প্রায় ৬৯ শতাংশ স্থান দখলে রয়েছে শীর্ষ ১০ কোম্পানির। স্বাভাবিকভাবেই ওষুধ বিক্রি করে কোম্পানিগুলোর মুনাফা অনেক বাড়ছে। এসব কোম্পানিগুলোর মধ্যে মাত্র পাঁচটি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত, বাকি পাঁচটিকে তালিকাভুক্ত করতে নেই কোনো উদ্যোগ। তালিকাভুক্ত হতে কোম্পানিগুলোরও কোনো আগ্রহ নেই বলে অভিযোগ উঠেছে।

পুঁজিবাজার বিশ্লেষকদের মতে, সম্ভাবনাময় ওষুধ খাতের শীর্ষ ১০ কোম্পানি তালিকাভুক্ত হলে বাজারের মূলধন আরও বাড়ত। কোম্পানির পাশাপাশি বিনিয়োগকারীরাও লাভবান হতেন। কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজার থেকে সাশ্রয়ী মূলধন সংগ্রহ করে দীর্ঘ মেয়াদে ব্যবসা সম্প্রসারণ করার সুযোগ নিতে পারে। এজন্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকেও আরও উদ্যোগী হতে হবে বলে তারা মনে করেন।

লংকাবাংলা ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের সম্প্রতি প্রকাশিত বাংলাদেশ বিনিয়োগ গাইড-২০১৭-এর তথ্যমতে, ডিসেম্বর ২০১৬ শেষের হিসাব অনুযায়ী, শীর্ষ ১০ ওষুধ কোম্পানির হাতে রয়েছে ৬৮ দশমিক ৯২ শতাংশ শেয়ার। এ তালিকায় প্রথমেই রয়েছে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত এ কোম্পানিটির বাজার শেয়ার রয়েছে ১৮ দশমিক ৪৮ শতাংশ। ওষুধ বিক্রিতে এরপরই রয়েছে ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস। বাজার শেয়ারের ১০ দশমিক ২৯ শতাংশ থাকলেও পুঁজিবাজারে নেই কোম্পানিটি।

শীর্ষ ১০ কোম্পানির তালিকায় রয়েছে যথাক্রমে বেক্সিমকো ফার্মা, অপসোনিন ফার্মা, রেনাটা লিমিটেড, এসকেঅ্যান্ডএফ, অ্যারিস্টো ফার্মা, এসিআই লিমিটেড, হেলথকেয়ার ফার্মা ও এক্মি ল্যাবরেটরিজ। এর মধ্যে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত রয়েছে বেক্সিমকো ফার্মা, রেনাটা লিমিটেড, এসিআই লিমিটেড ও এক্মি ল্যাবরেটরিজ। বাকি কোম্পানিগুলোর মধ্যে অধিকাংশ মুনাফায় থাকলেও তালিকাভুক্ত হতে কোনো আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না।

এ প্রসঙ্গে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান শেয়ার বিজকে বলেন, দীর্ঘ মেয়াদে বাজার স্থিতিশীল করার জন্য ভালো শেয়ারের কোনো বিকল্প নেই। পুঁজিবাজারে ভালো কোম্পানির শেয়ারের সংকট থাকলে জাঙ্ক কোম্পানির আধিপত্য তৈরি হয়; যা বিনিয়োগকারীদের ক্ষতিগ্রস্ত করে। ওষুধ খাতসহ অন্যান্য খাতের মৌলভিত্তির কোম্পানিগুলোকে তালিকাভুক্ত করতে হলে ট্যাক্স সুবিধা দিতে সরকারকে উদ্যোগী হতে হবে। একই সঙ্গে পারিবারিক কোম্পানিসহ সব কোম্পানিকে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির আওতায় আনতে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে বলে মনে করেন এই বিশ্লেষক।

এদিকে শীর্ষ ১০ কোম্পানির মধ্যে যারা পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়নি, সেসব কোম্পানির দায়িত্বশীলদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ব্যাংক ও বৈদেশিক ঋণের মাধ্যমে মূলধন সংগ্রহ করে তারা ব্যবসার পরিধি বাড়াচ্ছেন। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হলে একাধিক সংস্থার নিয়মনীতি অনুসরণ করতে হয়। হিসাব ও করপোরেট সুশাসন পরিপালনে এসব কোম্পানি বেশি আগ্রহী না হওয়ায় তালিকাভুক্ত হচ্ছে না।

লংকাবাংলার প্রকাশিত গবেষণায় দেখা যায়, বেক্সিমকো ফার্মার বাজার শেয়ার রয়েছে ৮ দশমিক ৪৩ শতাংশ। ১৯৮৬ সালে তালিকাভুক্ত এ কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন ৪০৫ কোটি টাকা। শীর্ষ ১০ কোম্পানির তালিকায় চতুর্থ স্থানে রয়েছে অপসোনিন ফার্মা। বাজারে ৫ দশমিক ৬৫ শতাংশ শেয়ার রয়েছে এ কোম্পানিটির। ৪ দশমিক ৯১ শতাংশ বাজার শেয়ার দখল করে পঞ্চম স্থানে রয়েছে রেনাটা লিমিটেড।

এছাড়াও দেশের ওষুধের বাজারে ৪ দশমিক ৪৯ শতাংশ শেয়ার রয়েছে এসকেঅ্যান্ডএফের। অ্যারিস্টো ফার্মার রয়েছে ৪ দশমিক ৪১ শতাংশ। এসিআই লিমিটেডের বাজার শেয়ার রয়েছে ৪ দশমিক ৩১ শতাংশ। ৩ দশমিক ৯৮ শতাংশ বাজার শেয়ার রয়েছে হেলথকেয়ার ফার্মার। এক্মি ল্যাবরেটরিজের বাজার শেয়ার রয়েছে ৩ দশমিক ৯৭ শতাংশ।

এদিকে পুঁজিবাজার ওষুধ ও রসায়ন খাতের ২৮টি কোম্পানি তালিকাভুক্ত। এর মধ্যে তিনটি বহুজাতিক কোম্পানি। অর্ধবার্ষিকীতে (জুলাই-ডিসেম্বর’১৬) অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ২৫টি কোম্পানি। এর মধ্যে ১৯টি কোম্পানির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) গত বছরের তুলনায় বেড়েছে। অর্থাৎ অর্ধবার্ষিকীতে ওষুধ ও রসায়ন খাতের আয় বেড়েছে ৭৬ শতাংশ কোম্পানির।

ক্রমেই বাড়ছে ওষুধ ও কেমিক্যালের ব্যবহার। অন্যদিকে দেশের অনেক কোম্পানিই এখন আন্তর্জাতিক মানের ওষুধ তৈরি করছে। উন্নত বিশ্বের দেশগুলোর সার্টিফিকেশন সনদও পেয়েছে বেশ কিছু কোম্পানি। এছাড়া বর্তমানে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। এ খাতটির অবস্থান রফতানি আয়ের দিক থেকে পোশাক খাতের পরপরই রয়েছে।

জানা গেছে, ২০২১ সাল নাগাদ ওষুধ রফতানি থেকে বাংলাদেশের আয় প্রায় শতভাগ বেড়ে ৬০০ কোটি ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার। সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় বাজার ও পণ্য বহুমুখীকরণের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। সে পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ওষুধ রফতানি বাড়াতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা অব্যাহত রেখেছে বাংলাদেশ সরকার। বর্তমানে দেশে উৎপাদিত ওষুধ রফতানি হচ্ছে বিশ্বের ১৬০টি দেশে।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী শেয়ার বিজকে বলেন, দিন দিন প্রসারিত হচ্ছে ওষুধের বাজার। দেশের বাইরেও বাংলাদেশি ওষুধের বাজার প্রসারিত হয়েছে। ফলে ওষুধ খাতের কোম্পানির মুনাফায় ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে।

খাতসংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, বাংলাদেশসহ স্বল্পোন্নত দেশগুলোর (এলডিসি) জন্য ২০৩৩ সাল পর্যন্ত ওষুধের মেধাস্বত্বে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডাব্লিউটিও) ছাড়ের সুযোগ রয়েছে। এটাকে কাজে লাগাতে হবে। সরকারের পক্ষ থেকেও ওষুধশিল্প বিকাশে সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে। তারা জানান, বর্তমান উৎপাদনক্ষমতা আর বিশ্ববাজারের সুযোগ কাজে লাগাতে পারলে ওষুধ রফতানিতে এশিয়ার শীর্ষে উঠে আসবে বাংলাদেশ। এ খাতের ব্যাপক সম্ভাবনা থাকায় স্বাভাবিকভাবেই পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত অধিকাংশ কোম্পানির আয় বাড়ছে।

এ খাতের তালিকাভুক্ত ২৮ কোম্পানির মধ্যে ১৯টির ইপিএস বেড়েছে। শেয়ারপ্রতি আয় কমেছে চারটির। এগুলো হলো: ওরিয়ন ইনফিউশন, লিবরা ইনফিউশন, এমবি ফার্মা ও ফার কেমিক্যাল। অন্যদিকে বেক্সিমকো সিনথেটিকসের লোকসান বেড়েছে। আর লোকসান কমেছে ইমাম বাটনের।

অর্ধবার্ষিকীতে ইপিএস বাড়া কোম্পানিগুলো হলো: এক্মি ল্যাব, সালভো কেমিক্যাল, সেন্ট্রাল ফার্মা, বেক্সিমকো ফার্মা, ফার্মা এইডস, এসিআই, ইবনে সিনা, বিকন ফার্মা, স্কয়ার ফার্মা, গ্লোবাল হ্যাভি কেমিক্যাল, রেনাটা, জেএমআই সিরিঞ্জ, এএফসি এগ্রো, এসিআই ফর্মুলেশন, ওরিয়ন ফার্মা, অ্যাকটিভ ফাইন কেমিক্যাল, ওয়াটা কেমিক্যালস, কেয়া কসমেটিকস ও কোহিনুর কেমিক্যাল লিমিটেড।