Print Date & Time : 9 July 2025 Wednesday 2:07 am

শুঁটকিতে স্বাবলম্বী শতাধিক পরিবার

গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলায় রয়েছে অনেক খাল-বিল। প্রায় ১২ মাসই পানি থাকে অধিকাংশ বিলে। এ কারণে এসব বিলে প্রচুর দেশি মাছ পাওয়া যায়। এ মাছকে কেন্দ্র করে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছে শতাধিক শুঁটকিখোলা। শীতকালে এসব শুঁটকিখোলায় মাছ শুকানো হয়। শত শত নারী-পুরুষ এখানে কাজ করে তাদের সংসার চালান। অনেক স্কুলগামী ছাত্রছাত্রীও লেখাপড়ার পাশাপাশি শুঁটকিখোলায় মাছ ধোয়া, বাছাই ও শুকানোর কাজ করে।
উপজেলার কান্দি ইউনিয়নের ধারাবাশাইল, মাচারতারা, তালপুকুরিয়া, ভেন্নাবাড়ি, নয়াকান্দি, গজালিয়া, আমবাড়ি, পিঞ্জুরী ইউনিয়নের দেওপুরা, ছত্রকান্দা, সোনাখালী, কোনেরবাড়ি, তারাইল, রামশীল ইউনিয়নের রামশীল, রাজাপুর, মুশুরিয়া, জহরেরকান্দি, ত্রিমুখী, সাদুল্লাপুর ইউনিয়নের লাটেঙ্গা, লখণ্ডা,
নৈয়ারবাড়ি, ভাঙ্গারহাট; কলাবাড়ী ইউনিয়নের কালীগঞ্জ, রামনগর, রুথিয়ারপাড়, মাছপাড়া, বুরুয়া, হিজলবাড়ি, শিমুলবাড়ি, তেতুলবাড়ি, বৈকণ্ঠপুর, কুমুরিয়াসহ প্রায় অর্ধশত গ্রামে
ছোট-বড় শতাধিক শুঁটকিখোলায় এখন মাছ শুকানোর কাজ শুরু হয়েছে। এসব এলাকার নিম্ন জলাভূতিতে প্রচুর দেশি মাছ পাওয়া যায়। মৎস্যজীবীরা এলাকার নিম্ন জলাভূমি বা বিল থেকে মাছ ধরে ছোট ছোট হাটবাজারে বিক্রি করেন। এই মাছ কিনে অনেকে শুকিয়ে উপজেলার বিভিন্ন বাজারের আড়তে বিক্রি করেন। অনেক মৎস্যজীবী আবার বিল থেকে মাছ ধরে নিজেরাই বাড়িতে শুকান। মিঠাপানির মাছ হওয়ায় কোটালীপাড়ার শুঁটকি খুব সুস্বাদু। তাই এই শুঁটকির দেশে-বিদেশে রয়েছে ব্যাপক চাহিদা। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে ভারতসহ বিভিন্ন দেশে যাচ্ছে কোটালীপাড়ার শুঁটকি। এমনটাই জানালেন কালীগঞ্জ বাজারের আড়তদার কৃষ্ণ কান্ত বাড়ৈ। তিনি বলেন, আমরা এখানের বিভিন্ন শুঁটকিখোলার মালিকের কাছ থেকে শুঁটকি কিনে চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিলেট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহীতে বিক্রি করি। এসব জেলার অনেক ব্যবসায়ী এই শুঁটকি ভারতসহ বিভিন্ন দেশে পাঠান। কলাবাড়ী ইউনিয়নের কুমুরিয়া গ্রামের স্কুলছাত্র দীপ্র বিশ্বাস জানায়, আমার বাবা বিল থেকে মাছ ধরে বাড়িতে শুকান। আমি লেখাপড়ার পাশাপাশি বাবাকে মাছ শুকানোর কাজে সহযোগিতা করি। কলাবাড়ী ইউনিয়নের কালীগঞ্জ গ্রামের শুঁটকিখোলার মালিক গৌতম হাজরা বলেন, আমরা গ্রাম থেকে চার-পাঁচ হাজার টাকা করে প্রতিমণ কাঁচা পুঁটি ক্রয় করি। এই পুঁটি শুকিয়ে ১২-১৪ হাজার টাকা করে প্রতিমণ বিক্রি করি। এছাড়াও খৈলশা, শোল, গজার, টেংরাসহ নানা প্রজাতির স্বাদুপানির মাছ এখানে শুকিয়ে থাকি। একই এলাকার শুঁটকিখোলার অপর এক মালিক অজয় হালদার বলেন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, সংরক্ষণ ও পুঁজির অভাবে আমরা অনেক সময় শুঁটকির ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হই। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে আমরা এ ব্যবসায় আরও লাভবান হতে পারতাম। উপজেলা মৎস্য অফিসার প্রশান্ত কুমার সরকার বলেন, শুঁটকি প্রক্রিয়াকরণ বা সংরক্ষণের জন্য এ উপজেলায় সরকারি কোনো প্রকল্প নেই। সরকার যদি এখানে কোনো প্রকল্প গ্রহণ করে, তা হলে এ এলাকার শুঁটকি ব্যবসায়ী বা প্রস্তুতকারীরা আর্থিকভাবে লাভবান হবেন।

দুলাল বিশ্বাস