শুল্ক প্রশাসনের পূর্ণাঙ্গ অটোমেশনে বিশ্বব্যাপী ব্যবহার হচ্ছে অটোমেটেড সিস্টেম ফর কাস্টমস ডেটা ডেভেলপমেন্ট (অ্যাসাইকুডা) সফটওয়্যার। এর মাধ্যমে রাজস্ব আদায় বৃদ্ধির পাশাপাশি কম সময়ে পণ্য খালাস প্রক্রিয়া সম্পন্ন করাসহ শুল্ক স্টেশন, শুল্ক কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে তথ্যের অবাধ প্রবাহ নিশ্চিত করা যায়। কিন্তু অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের আইডি সচল থাকায় এটির মাধ্যমে জালিয়াতি করে পণ্য খালাসের ঘটনা ঘটছে। ফলে একদিকে রাষ্ট্র হারাচ্ছে রাজস্ব, অন্যদিকে আমদানি নিষিদ্ধ পণ্য দেশে ঢুকে পড়ার ঝুঁকিও রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি সাবেক কর্মীরা যাতে কোনোভাবেই শুল্ক বিভাগের কোনো তথ্যে প্রবেশের সুযোগ না পান, তা নিশ্চিত করতে হবে।
অ্যাসাইকুডা সফটওয়্যারে সবকিছু অনলাইনে থাকায় অংশীজন আমদানি-রফতানি শুল্ক স্টেশনে না এসে বিশ্বের যে কোনো দেশে বসে কাজ করতে পারে। এর মাধ্যমে প্রায় ৪০টি ডেস্কের কাজ এক ডেস্কে করা যায় অনেকটা ওয়ানস্টপ সেবার মতো। প্রায় ১০০ দেশে অ্যাসাইকুডার সর্বশেষ সংস্করণ অ্যাসাইকুডার ওয়ার্ল্ড সফটওয়্যারের মাধ্যমে শুল্কায়ন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হচ্ছে।
বাংলাদেশে এ সফটওয়্যার চালুর প্রাক্কালে বলা হয়েছে এর মাধ্যমে বাংলাদেশ কাস্টমস নতুন যুগে প্রবেশ করবে। দ্রুত পণ্য খালাস, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করবে। কিন্তু অ্যাসাইকুডা থেকে সুফল তো পায়ইনি বরং বলা যায় অনিয়ম বেড়েছে। গতকাল শেয়ার বিজে প্রকাশিত প্রতিবেদন সেটিই প্রমাণ করেছে যেন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কর্মকর্তা অবসরে গেলেও তার আইডি সচল থাকে। অবসরপ্রাপ্ত দুই কর্মকর্তার আইডিতে খালাস হয়েছে প্রায় চার হাজার চালান। রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থান থেকে এ আইডি ব্যবহার করা হয়েছে। একটি প্রতিষ্ঠানের মিথ্যা ঘোষণার স্থগিত করা চালান কীভাবে খালাস নেওয়া হয়েছে, তা অনুসন্ধান করতে গিয়ে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর এ চমকপ্রদ ও ভয়াবহ জালিয়াতি উদ্ঘাটন করেছে।
বদলি হওয়া এবং অবসরে যাওয়া কর্মকর্তার আইডি ব্যবহার করে রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া যুগপৎ বিস্ময়কর ও হতাশাব্যঞ্জক। অবশ্য শুধু কনটেইনার খালাস নয়, চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে এ বন্দর থেকে আমদানি পণ্যভর্তি ২৯৪ কনটেইনার গায়েবের খবরও গণমাধ্যমে এসেছে।
আমাদের প্রধান সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রাম। এর পরিচালনা সংস্থা চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের (চবক) থিম সেøাগান হচ্ছে ‘কান্ট্রি মুভস উইথ আস (আমরা দেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তি)’। জাতীয় আমদানি-রফতানি প্রবাহের ৯২ শতাংশই সম্পন্ন হয় এ বন্দরের মাধ্যমে। জাহাজের পণ্য নামানো থেকে শুরু করে বন্দর চত্বর থেকে পণ্য খালাসের দালিলিক কার্যক্রম অনলাইনে সম্পন্ন হয়। এখানে অনলাইন পদ্ধতির সীমাবদ্ধতার ওপর দায় চাপানোর সুযোগ নেই। তাই অনিয়মে জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে এবং এমন ঘটনা যাতে আর না ঘটে, সেটি নিশ্চিত করতে হবে।