শুল্ক বৃদ্ধি ও বিলম্বিত সংস্কারে ধুঁকছে লেবাননের নাগরিকরা

শেয়ার বিজ ডেস্ক: লেবাননের রাজধানী বৈরুতে ক্যাব চালান ৬২ বছর বয়সী আবেদ ওমাইরাত। প্রতিবার মার্সিডিজ গাড়িটির ব্রেক নষ্ট হয়ে যাওয়ার পর তিনি চিন্তায় পড়েন নতুন বিলাসী গাড়ি আমদানি করবেন না কি ভাড়া বাড়াবেন। গাড়ি আমদানি করার জন্য তাকে ঋণ নিতে হবে এবং ভাড়া বাড়ালে যাত্রী হারাবেন, কেননা মারাত্মক সংকটে ভুগছে দেশের জনগণ।

তুরস্কের গণমাধ্যম ডেইলি সাবাহ এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, আবেদের মতো এমন উভয় সংকটে রয়েছে লেবাননের নাগরিকরা। বিশেষ করে সাম্প্রতিক মাসগুলোয় লেবানন সরকার বিদেশি পণ্য আমদানির ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করেছে। অথচ দেশটির ৮০ শতাংশের বেশি পণ্য আমদানি করতে হয়। এমনকি আবেদের মতো নাগরিকদের গাড়ির খুচরা যন্ত্রাংশও আনতে হয় বিদেশ থেকে।

আবেদ বলেন, আমার গাড়ির টায়ার শেষ, কেটেছিঁড়ে একাকার। বৃষ্টি শুরু হলে আতঙ্কে থাকি। শিগগির টায়ার বদলানো দরকার কিন্তু নতুন টায়ার কেনার সামর্থ্য নেই।

জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, লেবাননে চার বছর ধরে অর্থনৈতিক দুরবস্থা চলছে। লেবানিজ পাউন্ডের (দেশটির মুদ্রা) অবমূল্যায়ন হয়েছে ৯৫ শতাংশের বেশি। এতে প্রতি দশজনের মধ্যে ৮ জন নাগরিক দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করছে।

বিদেশি মুদ্রার ভাণ্ডার হ্রাস পেয়েছে। এ কারণে জ্বালানি ও বেশিরভাগ ওষুধের ওপর থেকে ভর্তুকি তুলে নিয়েছে দেশটির সরকার। যে হারে শুল্ক ফি বাড়ানো হয়েছে তাতে রাষ্ট্রের রাজস্ব আয় বাড়বে এবং বিভিন্ন বিনিময় হার একত্র করবে বলে মনে করছেন কর্মকর্তারা। ইন্টারন্যাশনাল মনিটারি ফান্ড (আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল, সংক্ষেপে আইএমএফ) লেবাননকে ৩ বিলিয়ন (৩০০ কোটি) ডলার বেলআউট পাওয়ার জন্য যেসব নির্দিষ্ট পূর্বশর্ত দিয়েছিল তার মধ্যে এগুলো রয়েছে। গত এপ্রিলে আইএমএফ পূর্বশর্তগুলো আরোপ করে। তবে সংস্থা জানিয়েছে, লেবাননের নেয়া আর্থিক পুনরুদ্ধার (বেলআউট) কর্মসূচির সংস্কারগুলো বেশ ধীর গতির। এ বিলম্বিত সংস্কারে ধুঁকছে লেবাননের নাগরিকরা।

গত ১ ডিসেম্বর থেকে নতুন শুল্ককর চালু করা হয়েছে। এ কারণে ডলারের বিপরীতে লেবানিজ পাউন্ডের দাম কমেছে। ১ ডিসেম্বর থেকে প্রতি ডলারের বিনিময় মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১৫ হাজার লেবানিজ পাউন্ড, আগে যা ছিল ১ হাজার ৫০৭ পাউন্ড। ফলে গৃহস্থালি পণ্য থেকে শুরু করে টেলিফোন কিংবা গাড়ির যন্ত্রাংশ কিনতে ব্যবসায়ীদের অতিরিক্ত ব্যয় করতে হচ্ছে।

এতে চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাওয়া লেবাননের জনগণের ওপর আরও চাপ সৃষ্টি হয়েছে। আবেদ বলেছেন, অনেক যাত্রী ইতোমধ্যে স্ট্যান্ডার্ড ভাড়া ২৬ ডলার (৪০ হাজার লেবানিজ পাউন্ড) থেকে ছাড় (ডিসকাউন্ট) চেয়েছেন। কোনো যাত্রীর কাছে ১ লাখ পাউন্ড ভাড়া চাওয়া যায়? তাই আমি যাত্রীদের বলি, আমার গাড়িতে ওঠার দরকার নেই। তার সামর্থ্যওে কুলোবে না, আমারও না। তিনিও খেতে পারবেন না, আমিও না।

উত্তর লেবাননে রাবিহ ফারেস নামের একজন স্থপতি ব্যবসা স্থিমিত হয়ে আসার সময় ব্যবহƒত গাড়ি আমদানি শুরু করেন। তিনি বলেন, নতুন শুল্ককরের কারণে হয় ডিলারশিপ ছেড়ে দিতে হবে, না হয় ব্যবসা গুটিয়ে নিতে হবে। এখন থেকে একটি গাড়ির শুল্ক কর মেটানোর জন্য চার থেকে পাঁচ বছর কাজ করতে হবে। তার হিসাবে একটি ব্যবহƒত গাড়ি আমদানির জন্য প্রায় ৯৪ মিলিয়ন লেবানিজ পাউন্ড খরচ করতে হবে, যা দেশটির একজন কর্মীর ন্যূনতম মাসের বেতনের ১৫৬ গুণ বেশি।

অর্থ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সিদ্ধান্ত নেয়ার আগের ১৫ দিনের রাজস্বের হিসাব রাখা হয়েছে। এর পরের ১৫ দিনের রাজস্বের ‘বিশাল পার্থক্য’ দেখা গেলে চলতি মাসের শেষের দিকে পরিসংখ্যান প্রস্তুত করা হবে।

দেশটির পার্লামেন্ট গত সেপ্টেম্বরে এ শুল্কহারের বিষয়ে একমত হলেও ডিসেম্বরের আগে চালু করতে সম্মত হয়নি। এ প্রসঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক অর্থমন্ত্রী আমি সালাম বলেছিলেন, শুল্ক বৃদ্ধির আগে ব্যবসায়ীদের আমদানির সুযোগ দেয়া উচিত যাতে তারা মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারে। তবে এর ফায়দা নিচ্ছে অনেক ব্যবসায়ী এবং এ কারণে আমদানিতে যতই দেরি হচ্ছে, ভুগছে দেশবাসী।