Print Date & Time : 12 September 2025 Friday 10:07 pm

শূন্য সহনশীলতায় খেলাপি ঋণ আদায়ে দ্রুত ব্যবস্থা নিন

‘অর্থঋণ আদালতে ৭২ হাজার ১৮৯ মামলা: এক লাখ ৬৬ হাজার কোটি টাকার বেশি খেলাপি ঋণ আটকা’ শীর্ষক যে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে, তা পাঠকের মনোযোগ কাড়বে বলেই ধারণা। অনেকেই হতাশ হবেন। কেননা সাধারণ মানুষ মনে করে খেলাপি ঋণ আদৌ আদায়ই হয় না।  

নিয়মিত একাধিক পত্রিকা পড়েন; এমন পাঠক জানেন প্রায়ই অর্থঋণ আদালতের আইন ২০০৩-এর ১২ ধারায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে খেলাপি ঋণ আদায়ে স্বতন্ত্র কর্তৃপক্ষ গঠনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিতে পারে। মামলা নিষ্পত্তিতে দীর্ঘসূত্রতায় খেলাপি ঋণ অনাদায়ী থাকছে। দীর্ঘ অপেক্ষার পর আদালতে কিছু মামলা নিষ্পত্তি হলেও খেলাপি ঋণ আদায় কম হচ্ছে। ঋণদানে যথাযথ সতর্কতা অবলম্বন করা হয় না বলেই ঋণ খেলাপি হচ্ছে। অনিয়ম, জালিয়াতি ও চাপে পড়ে পর্যাপ্ত জামানত ছাড়া ও ভুয়া দলিলপত্রে ঋণ দেয়ায় মামলা নিষ্পত্তি হওয়ার পরও টাকা আদায় হচ্ছে না।

বড় ঋণ দানে আমাদের ব্যাংকারদের আগ্রহ বেশি। তারা আদায়ের কথা মাথায় রাখেন না। এক্ষেত্রে মালিকপক্ষ বা রাজনৈতিক চাপ থাকে। এসব ঋণের বিপরীতে পর্যাপ্ত জামানত থাকে না। আবার অনেক ক্ষেত্রে জাল কাগজের বিপরীতে যোগসাজশ করে ঋণ দেয়া হয়, কিংবা বন্ধকী সম্পত্তির প্রকৃত মূল্যের চেয়ে অনেক বেশি দর দেখিয়ে ঋণ দেয়া হয়। জাল কাগজের ফলে অনেক সময় সম্পদ বিক্রির ঝামেলাও থাকে। প্রকৃত মূল্যের চেয়ে অনেক বেশি দর দেখিয়ে ঋণ না দিলে ব্যাংকারদের মৃত্যুঝুঁকিতে থাকেন সেটিও আমরা প্রত্যক্ষ করেছি।

নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংকের উচিত হবে শূন্য সহনশীলতায় ঋণ আদায়ে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া। ইচ্ছাকৃত খেলাপিরা পরিশোধ করার জন্য ঋণ নেন না। তারা প্রয়োজন হলে অর্থঋণ আদালতের পুরো বিচার প্রক্রিয়াকে থামিয়ে দেয়ার ক্ষমতা রাখেন। তারা নি¤œ আদালত থেকে মামলা উচ্চ আদালতে নিয়ে যায়। উচ্চ আদালতে মামলাজট থাকায় শুনানিতে দেরি হয়। আবার রিট মামলা করেন। রিটের চূড়ান্ত শুনানিতেও অনেক সময় লেগে ব্যাংকাররা বাধ্য হয়ে কিংবা সমঝোতার মাধ্যমে বড় গ্রাহকদের ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করেন না। তাই দাখিল করা কাগজপত্র হয় অপর্যাপ্ত কিংবা জাল। ফলে অর্থঋণ আদলতে মামলা নিষ্পত্তি হলেও ব্যাংক টাকা ঋণ আদায় করতে পারে না। ধুরন্ধর খাতক ঋণ পরিশোধ না করার মওকা খোঁজেন, ব্যাংক কর্মকর্তাদের যোগসাজশ থাকলে তো পোয়াবারো! মালিকপক্ষ ঋণ নিলে ব্যাংকারদের ওপর চাপ প্রয়োগ করা হয়। তাই প্রতিটি ঋণ যাচাই করলে দেখা যাবে, বেশিরভাগ বড় ঋণই চাপ নয়, যোগসাজশে বিতরণ করা হয়েছে। দায় এক পক্ষের নয়। বলা যায় নৈতিকতা ও স্বচ্ছতা থাকলে খেলাপি ঋণ এত বেশি হওয়ার কথা নয়।

ব্যাংকাররা বলছেন, অর্থঋণ আদালতে মামলায় যেসব অর্থ আটকে আছে; তা মূলত জনগণের টাকা। ঢাকায় কমপক্ষে আরও দুটি এবং চট্টগ্রামে একটি অর্থঋণ এবং বিভাগীয় শহর ও জেলায় সুনির্দিষ্ট অর্থঋণ আদালত প্রতিষ্ঠা করা গেলে সুফল মিলবে। আমরা অর্থঋণ আদালত প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করছি না, তবে এটি বলছি, ব্যাংকাররা শুদ্ধাচার চর্চা করলে ঋণ খেলাপিও হবে না এবং আদায়ও বাড়বে।