Print Date & Time : 5 July 2025 Saturday 7:57 pm

শূন্য সহনশীলতায় লোপাট করা অর্থ উদ্ধার করুন

পতিত সরকারের সময় ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে দেশের ব্যাংক খাতে বড় ধরনের ধাক্কা লেগেছে। যেসব ব্যাংক বেশি অর্থ লোপাটের শিকার হয়, সেগুলো এখন বড় অঙ্কের মূলধন ঘাটতিতে পড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০২৪ সালের ডিসেম্বরভিত্তিক প্রতিবেদনে তথ্য পাওয়া গেছে, ১৯ ব্যাংকেরই মূলধন ঘাটতি পৌনে দুই লাখ কোটি টাকা। শুধু তা-ই নয়, একসময়ের সবচেয়ে শক্তিশালী ভিত্তির ইসলামী ব্যাংকে প্রথমবারের মতো মূলধন ঘাটতি দেখা দিয়েছে, যা পরিমাণ প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকা।
সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ বিবেচিত এক ব্যবসায়ীর নিয়ন্ত্রণে থাকা শরিয়াহ ও প্রচলিত ধারার সব ব্যাংকই বড় অঙ্কের মূলধন ঘাটতিতে রয়েছে। সেই সঙ্গে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের নিয়ন্ত্রণে থাকা আইএফআইসি ব্যাংকও বড় ধরনের মূলধন ঘাটতিতে পড়েছে। এসব ব্যাংকে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ করে পুনর্গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
দেশের ব্যাংক খাত কয়েক বছর ধরেই তারল্যসংকটে ভুগছে। তারল্যসংকট এতই তীব্র যে, আমানত সংগ্রহে আগ্রাসী হয়ে উঠেছে ব্যাংকগুলো। কোনো ব্যাংককর্মী আমানত সংগ্রহের জন্য অ্যাকাউন্ট খোলার আহ্বান জানিয়ে লেমিনেটিং করা কাগজের পোস্টার বাসাবাড়ির দেয়ালে কিংবা বিদ্যুতের খুঁটিতে লাগিয়েছেন। এমন কাজে ব্যাংকারদের কারও কারও আত্মসম্মানেও লেগেছে, এমনও শোনা গেছে। দেশের অর্থনৈতিক  প্রবৃদ্ধি বেড়েছে, মাথাপিছু আয়ও বেড়েছে। অথচ প্রকট হয়েছে ব্যাংক খাতের তারল্যসংকট। কমেছে বিনিয়োগযোগ্য তহবিল। বাস্তবতা হচ্ছে, যেসব ব্যাংক দুই বছর আগেও সাধারণ মানুষের আমানত রাখতে আগ্রহী ছিল না, সেসব ব্যাংকই এখন হন্যে হয়ে আমানত খুঁজছে।
আগের সরকারের সময় অনিয়মের মাধ্যমে যেসব ঋণ বের করে নেয়া হয়, সেগুলো এখন খেলাপি হয়ে পড়েছে। এর বিপরীতে চাহিদামতো নিরাপত্তা সঞ্চিতি রাখতে পারছে না ব্যাংকগুলো। ফলে মূলধন হারিয়ে ফেলছে এসব ব্যাংক, যা দেশের পুরো আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতাকে ঝুঁকিতে ফেলে দিয়েছে। বেক্সিমকো গ্রুপ, এস আলম গ্রুপ, এননটেক্স, ক্রিসেন্ট, থার্মেক্স ও গ্লোব জনকণ্ঠ গ্রুপের মতো আলোচিত কয়েকটি বড় খেলাপি থেকে অনাদায়ী ঋণ আদায় করা গেলে ব্যাংক খাতের প্রতি মানুষের আস্থা ফিরবে।
দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখা গেলে সাধারণ মানুষের খরচ কমবে। তখনই সঞ্চয় করতে পারবেন তারা। প্রান্তিক ও সীমিত আয়ের মানুষকে মোবাইল ব্যাংকিং সুবিধা ব্যবহার করে ব্যাংকসেবার আওতায় নিয়ে আসা গেলে আমানত বাড়তে পারে। নিম্ন আয়ের মানুষ সঞ্চিত অর্থ জমা রাখার জন্য ব্যাংকের কথা চিন্তা করেন না। তারা নগদ অর্থ (হার্ড ক্যাশ) পকেট, পার্স ও ওয়ালেটে রাখেন অথবা ঘরের সিন্দুকে অলসভাবে ফেলে রাখেন। তবে তাদের অনেকেই এখন বিকাশের মতো মোবাইল ব্যাংকিং হিসাব পরিচালনা করতে সমর্থ। তাই বিকাশ, রকেট, নগদ এবং অন্য মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) প্রোভাইডারদের মাধ্যমে ব্যাংকিংয়ের আওতাবহির্ভূত মানুষের  প্রতিদিনের উদ্বৃত্ত আয় ব্যাংকের সঞ্চয়ী বা স্কিম হিসেবে জমা দেয়ার ব্যবস্থা করা গেলে ব্যাংকগুলোর তারল্য অনেকাংশে বাড়িয়ে তোলা সম্ভব হবে। অব্যবস্থাপনা ও আস্থার অভাবে তারল্যসংকট যাতে প্রকট না হয়, সে লক্ষ্যে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে ব্যবস্থা নিতে হবে।