শেখ হাসিনার অধীন নির্বাচন নয়: মির্জা ফখরুল

নিজস্ব প্রতিবেদক: বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আওয়ামী লীগের চরিত্রের মধ্যে দুটি জিনিস আছে; একটা হচ্ছে চুরি, আরেকটা সন্ত্রাস। সন্ত্রাস করবে আর চুরি করবে। তারা ২০১৪ সালে ভোট চুরি করেছে, ২০১৮ সালে ভোট চুরি করেছে। এখন আবার ভোট চুরির নতুন নির্বাচন দিয়ে কোনো রকমে ক্ষমতায় যাওয়ার চেষ্টা করছে। আমাদের কথা পরিষ্কার শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না। এ সরকারের অধীন কোনো নির্বাচন হবে না।

গতকাল বিকালে বরিশালের বঙ্গবন্ধু উদ্যানে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ আমাদের সব অর্জন ধ্বংস করে দিয়েছে। তারা অর্থনীতিকে ধ্বংস করেছে, রাজনীতিকে ধ্বংস করেছে। আজকে ১৪ বছর ধরে এদেশের মানুষের ওপর জুলুম-নির্যাতন চালাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, ‘বিদ্যুৎ নিয়ে সরকার খুব ঢাকঢোল পিটিয়েছে। এমন ঢাকঢোল পিটিয়েছে যেন বিদ্যুতে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে গেছে। সেই বিদ্যুৎ আর নেই। আজকে সকালে আমি যে হোটেলে ছিলাম, সেখানে কমপক্ষে ১০ বার বিদ্যুৎ গেল আর এলো। এর আগে ’৯৬ সালে যখন ক্ষমতায় ছিল, বিদ্যুৎ গেলে সবাই বলত এই হাসিনা গেল, বিদ্যুৎ আসলে বলত এই হাসিনা এলো। আজকেও একই অবস্থা। এই হাসিনা গেল, এই এই হাসিনা এলো।’

প্রধানমন্ত্রীর প্রতি ইঙ্গিত করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘২০০৮ সালে মাথায় হিজাব দিয়ে এসে বলেছিলেনÑআমি ১০ টাকা কেজিতে চাল খাওয়াব।

কত টাকায় চাল খাওয়াচ্ছেন এখন? ঘরে ঘরে চাকরি দেবেন বলেছিলেন। দিয়েছেন, আওয়ামী লীগের ছেলেপেলেদের। কিন্তু প্রত্যেকের কাছ থেকে ২০ লাখ টাকা করে নিয়েছেন। আর বলেছিলেন বিনা পায়সায় সার দেব। সেই সারের এখন দাম আমাদের সময় যা ছিল তার থেকে তিনগুণ বেশি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সরকারে ছিলাম। বিভাগ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া, বিশ্ববিদ্যালয় দিয়েছেন, অনেক কিছু দিয়েছেন খালেদা জিয়া। কিন্তু এই সরকার দিয়েছে দুর্ভিক্ষ। এখানে উন্নয়ন উন্নয়ন আর উন্নয়ন, উন্নয়ন ছাড়া কিছু দেখায় না চারদিকে। সেই উন্নয়নের অবস্থা এমন যে, বাংলাদেশে শতকরা ৪২ জন লোক এখন দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করেন। আজকে বাজারে যাওয়া যায় না। বাজারে গেলে হাত দেয়া যায় না কোনো জিনিসের ওপর। আমাদের কোনো বিকল্প নেই।’

বিএনপির এ জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক বা নিরপেক্ষ সরকারের অধীন নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে নির্বাচন করতে হবে। এখন উন্নয়ন ছাড়া কিছুই দেখা যায় না! কিন্তু বাস্তবে গেলে কোনো কিছুতে হাত দেয়া যায় না। আমরা মুক্তি চাই, এ থেকে পরিত্রাণ চাই। আমাদের এই আন্দোলন বিএনপির জন্য নয়; খালেদা জিয়ার জন্য নয়; তারেক রহমানের জন্য নয় কিংবা আমাদের নেতাদের জন্য নয়। এ আন্দোলন জাতি ও দেশের প্রয়োজনে সমগ্র জাতিকে রক্ষা করার জন্য।’

তিনি আরও বলেন, ‘সরকার হামলা আর মামলা করছে। ভোলায় লঞ্চে আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালিয়ে তাদের বিরুদ্ধেই আবার মামলা দিয়েছে। এখন দেশে কেউ নিরাপদ নয়।

বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশের প্রধান বক্তা দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘অনেকে বলবেন জনসমাবেশে লোক কম হয়েছে। কিন্তু আপনারা যে এত বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে জনসমাবেশকে জনসমুদ্রে রূপ দিয়েছেন এটাই প্রমাণ করে বিএনপির প্রতি, দেশের প্রতি আপনাদের ভালোবাসা কতটা। এখানে এসে দেখলাম ফোনে কথা বলতে পারছি না। ইন্টারনেট বন্ধ, তাই লাইভ টেলিকাস্ট নেই। রাজপথ, রেলপথ, আকাশপথ সব কিছুই বন্ধ। তারপরও আজ গোটা বরিশাল শহর জনসভার শহর, মিছিলের শহর। তাহলে সব বন্ধ করে কী লাভ হলো। সব বাধা উপেক্ষা করে বরিশালে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হলো। এ সরকারকে বিদায় জানাতে হবে ভোটের মাধ্যমে। না হলে দেশের আর কিছু বাকি থাকবে না। এ সরকারের অধীন নির্বাচন নয়, ইভিএমে নির্বাচন নয়। ১৫ বছর আগে আমার যে ভাই ভোটার হয়েছে, সে বলতে পারবে না ভোট কেমন।’

ব?রিশাল মহানগর বিএন?পির আহ্বায়ক ম?নিরুজ্জামান ফারুকের সভাপতিত্বে গণসমাবেশে আরও বক্তব্য দেনÑবিএন?পির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, আব্দুল মঈন খান, সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান এজেডএম ডা. জাহিদ হাসান, অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদিন, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ, শাহজাহান ওমর, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী সোহেল প্রমুখ।