২০১০ সালের ধসের পর থেকেই দেশের পুঁজিবাজারে এক ধরনের অস্থিরতা চলছে। বিভিন্ন সময় পদক্ষেপ নিয়েও বাজারে সংবিৎ ফেরানো যাচ্ছে না। একের পর এক কোম্পানির শেয়ারদর চলে যাচ্ছে অভিহিত দরের নিচে। এমন পরিস্থিতিতে বাজারে নতুন নতুন ইস্যু আনার উদ্যোগ নিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এর অংশ হিসেবে তালিকাভুক্তির বাইরে থাকা বিমা কোম্পানিগুলোকে বাজারে আসার নির্দেশনা নিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে এ ধরনের কোম্পানিগুলোর বাজারে আসার সময় সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। কিন্তু এখনও অধিকাংশ কোম্পানি তালিকাভুক্তির কোনো প্রক্রিয়াই শুরু করেনি। সরকারের নির্দেশনাকে বিমা কোম্পানির এমন অগ্রাহ্য করাটা গ্রহণযোগ্য নয় বলে মনে করি। তালিকার বাইরে থাকা কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে আনতে আশু পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি বলে মনে করি।
দৈনিক শেয়ার বিজে গতকাল এ বিষয়ে ‘পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তি: নির্ধারিত সময়ে আসছে না ১৮ জীবন বিমা কোম্পানি’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। প্রতিবেদনের তথ্যমতে, জীবন বিমা ও সাধারণ বিমা মিলিয়ে ২৭ বিমা কোম্পানি এখনও পুঁজিবাজারের বাইরে রয়েছে। এর মধ্যে ৯টি সাধারণ বিমা কোম্পানি এবং ১৮টি জীবন বিমা কোম্পানি। তবে সাধারণ বিমা কোম্পানিগুলো তালিকাভুক্ত হওয়ার বিষয়ে প্রক্রিয়া শুরু করেছে। কিন্তু বিমা কোম্পানিগুলো এখনও শর্ত পূরণের দোহাই দিয়ে বাজারে আসার ক্ষেত্রে কালক্ষেপণ করে চলেছে। এ ধরনের কালক্ষেপণ কোনোভাবেই দায়িত্বশীল আচরণ হতে পারে না বলে মনে করি।
বিমা কোম্পানিগুলোর বিষয়ে বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমে যেসব প্রতিবেদন প্রকাশ হয়, তাতে তাদের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার যথেষ্ট অবকাশ রয়েছে বলে মনে করি। আর পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে হলে যেহেতু অনেক স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হয়, তাই পুঁজিবাজারে আসতে কারা অনীহা প্রকাশ করেন বলেই বিশ্লেষকরা মনে করেন। যদি তাই হয়ে থাকে তাহলে ওই ধরনের কোম্পানির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি বলে মনে করি। খবরেই উল্লেখ করা হয়েছে, বিমা খাতের বেশকিছু কোম্পানির করপোরেট সুশাসন, স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও প্রতিশ্রুতি পালন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সে সঙ্গে আয়-ব্যয়ে অসংগতি ও তারল্য সংকটের কারণে কিছু কোম্পানি গ্রাহকের বিমা দাবি পরিশোধ করতে পারছে না। তাই কোম্পানিগুলোকে নিয়ে বিতর্ক চলছে। এ পরিস্থিতিতে কোম্পানির প্রকৃত অবস্থা গোপন রাখা এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থা, নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠান ও বিনিয়োগকারীর কাছে জবাবদিহি এড়াতে আইন মেনে পুঁজিবাজারে আসছে না। এমন পরিস্থিতিতে কোম্পানিগুলোর বাস্তব চিত্র বিশ্লেষণ করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে বলেই আমাদের বিশ্বাস।