শেরপুরে বিষমুক্ত সবজি উৎপাদনে ‘পলি নেট হাউস’

রফিক মজিদ, শেরপুর: আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে শেরপুরের ঝিনাইগাতীতে কৃষিবিপ্লব ঘটাতে গড়ে তোলা হয়েছে ‘পলি নেট হাউস’। এ হাউসে রোপণ করা হয়েছে রাসায়নিক সার ও বিষমুক্ত ফুলকপি আর টমেটো। পরে এখানে অন্যান্য সবজিসহ বিভিন্ন ফসলের চারা তৈরি করা হবে। পলি নেট হাউসে সবজি উৎপাদনে সফলতার স্বপ্ন দেখছেন এখানকার কৃষকরা। নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে পলি নেট হাউসে কম খরচে বেশি লাভ হবে বলে জানান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।

ঝিনাইগাতি কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের ফসলের নিবিড়তা বৃদ্ধিকরণ প্রকল্পের আওতায় উপজেলার কাংশা ইউনিয়নের পশ্চিম বাকাকুড়া গ্রামে কৃষক ফজলুল হকের ১০ শতাংশ জমির ওপর গড়ে তোলা হয়েছে পলি নেট হাউস। এক ধরনের শক্ত পলি দিয়ে মোড়ানো ওই নার্সারি ঘর। এছাড়া ওই নার্সারির ভেতর তাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য রয়েছে মোটর দিয়ে পানি উত্তোলন করে এক ধরনের ফোয়ারার মাধ্যমে পানি ছিটিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা।

প্রথমবারের মতো পলি নেট হাউস গড়ে ওঠায় প্রতিদিন দেখতে আসছেন আশপাশের কৃষকরা। এখানে প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ নানা রোগবালাই থেকে সহজে রক্ষা পাবে। উৎপাদন খরচ হবে কম, লাভ হবে বেশি। বিক্রি হবে বিভিন্ন প্রজাতির চারা। তার এ পলি নেট হাউসে প্রাথমিকভাবে প্রায় ১০ হাজার চারা তৈরি করেছে। চাহিদা অনুপাতে পর্যায়ক্রমে আরও বৃদ্ধি করবে চারা উৎপাদন। তার এ পলি নেট হাউসে একসঙ্গে প্রায় এক লাখ চারা উৎপাদন করা যাবে বলে জানালেন কৃষক ফজলুল হক।

সম্প্রতি ফুল কপি আর টমেটোর চারা রোপণ করে শুরু হয়েছে পলি নেট হাউসে। সবজির পাশাপাশি ফুল ও ফলের চারা রোপণসহ যে কোনো সময়ে যে কোনো সবজির চারা রোপণ করা যাবে বলে জানান এ কৃষক। এদিকে এ পলি নেট হাউসের অসময়ের সবজি চাষ করে বেশি দাম পাওয়ার আশায় এবং সুস্থ ও সবল চারা দেখে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন স্থানীয় কৃষকরাও। তাদের অনেকেই চাচ্ছেন এখান থেকে চারা নিয়ে সবজি চাষ করবেন। 

স্থানীয় কৃষি বিভাগ জানায়, যে কোনো প্রতিকূল আবহওয়া বা পরিবেশের মধ্যে এ পলি নেট হাউস থেকে যে কোনো সবজির চারা উৎপাদন করা যাবে, এতে কৃষক উপকৃত হবে। এখানে চারা উৎপাদন করা হয় মূলত কোকোপিট দিয়ে। এ কোকোপিটে চারা উৎপাদনের পর কৃষক যখন মাটিতে চারাগুলো রোপণ করবেন, তখন ওই চারার মূল অক্ষত থাকে। আর মাটিতে উৎপাদিত চারা টেনে তুলে যখন জমিতে (ক্ষেতে) বা ফসলের মাঠে রোপণ করা হয়, তখন টেনে তোলার কারণে ওই চারার মূল থেকে বেশ কিছু মূল ছিঁড়ে যায়। এর ফলে ওই ছেঁড়া অংশ দিয়ে নানা ভাইরাস ঢুকে চারা বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেই গাছে নানা রোগবালাই ও পোকার আক্রমণ হয়। তবে কোকোপটে উৎপাদিত চারায় সেটা হওয়ার আশঙ্কা নেই। ফলে এ পলিনেটের চারা গুণগতভাবে ভালো থাকে এবং ফসল বা সবজিও উন্নত হয়। এছাড়া কোকোপিটের চারা দ্রুত বর্ধনশীল হওয়ায় কৃষকরাও দ্রুত সময়ের মধ্যে ফলন পেয়ে থাকে। এছাড়া পলি নেট হাউসে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ থাকায় চাষে নেই কীটনাশক খরচ। নেই কোনো প্রাকৃতিক ঝুঁকি। সময়ের আগেই সবজি পেয়ে কৃষক যেমন লাভবান হবে, সাধারণ মানুষরাও অসময়ে সবজি পেয়ে খুশি হবে। এমনটাই জানান ঝিনাইগাতি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হুমায়ুন দিলদার।

বৃহত্তর ময়য়নসিংহ অঞ্চলের ফসলের নীবিরতা প্রকল্প থেকে এ পলি নেট হাউস প্রায় ১৬ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করে দেয়া হয়েছে। এটি আগামী ২০২৫ সাল পর্যন্ত প্রকল্প থেকে দেখভাল করবে। প্রাথমিকভাবে শেরপুর জেলার পাঁচ উপজেলার মধ্যে নকলা, নালিতাবাড়ী ও ঝিনাইগাতি নির্মাণ করা হলেও পর্যায়ক্রমে তা জেলার সব উপজেলায় এবং বৃহত্তর ময়মনসিংহ এলাকার সব উপজেলায়ও এ পলি নেট হাউস নির্মাণ করা হবে বলে জানান প্রকল্পের পরিচালক কৃষিবিদ মোহাম্মদ জিয়াউর রহমান।

এদিকে কৃষি সম্প্রসারণের অর্থায়নে নির্মিত পলি নেট হাউসে বিপ্লব ঘটবে কৃষি উৎপাদনে। কৃষি ক্ষেত্রে যোগ হবে নতুন মাত্রা। এমনটাই মনে করেন স্থানীয় বাসিন্দাসহ সংশ্লিষ্টরা।