শেরপুরে সরকারি ঘর পাচ্ছে তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠী

প্রতিনিধি, শেরপুর: শেরপুর জেলায় বসবাসকারী তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠী পাচ্ছে সরকারি ঘর। সদর উপজেলার কামারিয়া ইউনিয়নের কবিরপুর মৌজার আন্ধারিয়া সুতিরপাড় এলাকায় দুই একর সরকারি খাসজমিতে তাদের জন্য গড়ে উঠেছে ‘স্বপ্নের ঠিাকানা’ গুচ্ছগ্রাম। সেই গুচ্ছগ্রামে জেলার তৃতীয় লিঙ্গের ৪০ জনের নামে বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে জমিসহ ঘর। সঙ্গে রয়েছে রান্নাঘর ও স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সহায়তায় জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে তাদের এ ঘর দেয়া হচ্ছে।

জানা গেছে, আবাসন প্রকল্পে বসবাসকারী হিজড়াদের আয়বর্ধনমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য থাকছে সেখানে প্রায় ৪০ শতক জমির ওপর একটি পুকুর। এছাড়া শাকসবজি ও ফসল আবাদের জন্য রাখা হয়েছে খোলা জায়গা এবং আত্মকর্ম প্রশিক্ষণের জন্য নির্মিত হচ্ছে একটি মাল্টিপারপাস কক্ষ। গুচ্ছগ্রামের সঙ্গেই রয়েছে আট একরের বড় একটি সরকারি খাস বিল। সেটিও সেখানে বসবাসকারী হিজড়াদের লিজ দেয়ার চিন্তাভাবনা চলছে।

গত শনিবার বিকালে শেরপুরে তৃতীয় লিঙ্গ (হিজড়া) জনগোষ্ঠীর আবাসন-বিষয়ক মতবিনিময় সভায় এমন তথ্য জানান সদরের কামারিয়া ইউনিয়ন ভূমি উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. হুরমুজ আলী। তিনি জানান, জেলা প্রশাসক আনার কলি মাহবুবের আন্তরিক প্রচেষ্টায় হিজড়াদের এ গুচ্ছগ্রাম প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ঘর ও স্থাপনা নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। এখন কবুলিয়তনামা তৈরি ও জমির নামজারির প্রক্রিয়া চলছে। খুব শিগগিরই নিবন্ধিত তৃতীয় লিঙ্গের সদস্যদের মধ্যে জমিসহ এসব ঘর হস্তান্তর করা হবে।

তিনি জানান, কেবল জমিসহ ঘরই নয়, ওই গুচ্ছগ্রাম প্রকল্পে সমাজের অবহেলিত ও অপাঙ্ক্তেয় তৃতীয় লিঙ্গ হিজড়া জনগোষ্ঠীর জীবনমান এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের মাধ্যমে স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণও প্রদান করা হবে। এতে তারাও সমাজের মূল স্রোতে একীভূত হতে পারবেন।

নাগরিক প্ল্যাটফর্ম জনউদ্যোগ শেরপুর ও জেলা হিজড়া কল্যাণ সংস্থার যৌথ আয়োজনে শহরের মডেল গার্লস ডিগ্রি কলেজ মিলনায়তনে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে ইনস্টিটিউট ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইইডি) সার্বিক সহযোগিতা করে। এসময় শেরপুর জেলা হিজড়া কল্যাণ সংস্থার সভাপতি নিশি সরকার, সাধারণ সম্পাদক মোর্শেদা ও সদস্য আরোহী জাহান মৌমিতা গুচ্ছগ্রামের মাধ্যমে তাদের বাসস্থানের ব্যবস্থা করায় জেলা প্রশাসক আনার কলি মাহবুবের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। 

সভায় উপস্থিত আইডিয়াল প্রিপারেটরি অ্যান্ড হাইস্কুলের অধ্যক্ষ মো. মাহবুবর রহমান সুজা মৌমিতা হিজড়ার ড্রাইভিং শেখার সব খরচ বহন এবং ড্রাইভিং শেষে তার প্রতিষ্ঠানে চাকরির প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন। এছাড়া উদীচী জেলা সংসদের সভাপতি অধ্যক্ষ তপন সারোয়ার হিজড়াদের নিয়ে একটি সাংস্কৃতিক দল তৈরি ও বিনামূল্যে নাচ-গান শেখানোর পদক্ষেপ নেয়ার আশ্বাস দেন।

পাশাপাশি জেলা জাতীয় মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান নাসরিন রহমান ফাতেমা ও সদস্য সদর উপজেলার সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান শামীম আরা শামীমা সেলাই, বিউটিফিকেশন, রান্নাবান্না, নকশিকাঁথাসহ বিভিন্ন ট্রেডে হিজড়াদের আত্মকর্মী প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে বলে উল্লেখ করেন। তাদের ঘূর্ণায়মান তহবিলের ঋণ প্রদানের কথাও তিনি জানান। নারী উদ্যোক্তা আইরীন পারভীন হিজড়াদের বিনামূল্যে দক্ষ সূচিশিল্পী হিসেবে গড়ে তুলতে তার প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার কথা জানান।