প্রতিনিধি, শেরপুর: শেরপুরের সীমান্তবর্তী গারো পাহাড়ে হাতি হত্যায় এই প্রথম মামলা করেছে বন বিভাগ। বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন, ২০১২ ধারায় চারজনের নামে গত ১১ নভেম্বর এ মামলা করা হয়।
রেঞ্জ কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম বৃহস্পতিবার (১৮ নভেম্বর) মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। আসামিরা হলেন, মালাকুচা এলাকার দুই ভাই আমেজ উদ্দিন ও সমেজ উদ্দিন, মো. আশরাফুল ও মো. শাহজালাল।
জানাগেছে, গত ৯ নভেম্বর শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার গারো পাহাড়ে বিদ্যুৎ লাইনের সঙ্গে সংযুক্ত জিআই তারে জড়িয়ে একটি হাতির মৃত্যু হয়। প্রাথমিকভাবে বিদ্যুতায়িত হয়ে হাতির মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হলে রেঞ্জ কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম এ ঘটনায় প্রথমে শ্রীবরদী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। পরে ১১ নভেম্বর চারজনের নামে মামলা করেন।
এ বিষয়ে রবিউল ইসলাম বলেন, ‘নির্বিচারে বনভূমি দখল করে চাষাবাদ করায় হাতি লোকালয়ে এসে পড়ছে। আমরা অনেক চেষ্টা করেও কোনো সমাধান করতে পারছি না। হাতি হত্যায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে শেরপুরে এই প্রথম মামলা করল বন বিভাগ। আসামি চারজনকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।’
গারো পাহাড় একসময় বিরাট এলাকাজুড়ে বিস্তৃত ছিল। ধীরে ধীরে তা সংকুচিত হয়ে এসেছে। বেশির ভাগ বন্যপ্রাণী এলাকা থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। অবশিষ্ট আছে শুধু হাতি।
গত দুই দশকে হাতির আক্রমণে নিহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক মানুষ। আর আহত হয়ে পঙ্গু হয়ে গেছেন শতাধিক। বাড়িঘর, ফসল, গাছপালার ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে কয়েক কোটি টাকার ওপরে। একই সময়ে নানা কারণে মারা গেছে ১৮টি হাতি। এসব হাতি হত্যার বিষয়ে এতোদিন স্থানীয়রা উল্লাস প্রকাশ করলেও সম্প্রতি সর্বশেষ ৯ নভেম্বর সীমান্তের শ্রীবর্দী উপজেলায় এক বন্য হাতিকে নির্মম ভাবে বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে হাতিকে হত্যা করা হলে সোচ্চার হয়ে উঠে স্থানীয় পরিবেশবাদী এবং সচেতন মানুষ। শুরু হয় হাতি হত্যার বিচার চেয়ে মানববন্ধন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও উঠে নিন্দার ঝর, দাবি উঠে হাতি হত্যায় দোষীদের বিচারের। বনের কিছু সচেতন মানুষও সোচ্চার হয় হাতি রক্ষায়। ইতিপূর্বের সরকারী হিসেবের ১৮ হাতি হত্যার বিচার বা মামলা না হওয়ায় বিক্ষুব্ধ সীমান্তবাসী হাতি হত্যায় উৎসাহীত হয়ে উঠে বলে সচেতন মহল মনে করেন।