নিজস্ব প্রতিবেদক: বিভিন্ন ইস্যুতে দুই মাসের কিছু বেশি সময় ধরে নেতিবাচক ধারায় চলছে দেশের শেয়ারবাজার। তবে বছরের শেষ কার্যদিবসে গতকাল ইতিবাচক থেকে লেনদেন সম্পন্ন হয়েছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সব মূল্য সূচকের উত্থান হয়েছে। বেড়েছে টাকার অঙ্কে লেনদেন।
গতকালের লেনদেন বিশ্লেষণে দেখা যায়, চলতি বছরের প্রথম দিনের মতো শেষ দিনেও সবচেয়ে বেশি ভালো করেছে বিমা খাত। প্রায় ছয় মাস ধরে মন্দাভাব কাটিয়ে সম্প্রতি এই খাতটি আবার ঊর্ধ্বমুখী হতে শুরু করেছে।
হঠাৎ করেই চাঙ্গা হয়ে ওঠা কাগজ ও প্রকাশনা খাতেও গেছে ভালো দিন। টেলিকমিউনিকেশন ও ভ্রমণ খাতেও সব কোম্পানির দর বেড়েছে। অন্য প্রধান খাতগুলোর মধ্যে ব্যাংক, ওষুধ ও রসায়ন, প্রকৌশল, আর্থিক, খাদ্য খাতে দেখা গেছে মিশ্র প্রবণতা। অন্যদিকে বস্ত্র ও বিদ্যুৎ জ্বালানি খাতে কমেছে বেশিরভাগ শেয়ারের দাম।
বৃহস্পতিবার ডিএসইতে ৯২১ কোটি ৮১ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে, যা আগের দিনের চেয়ে ১৮৬ কোটি ৪৩ লাখ টাকা বেশি। বুধবার লেনদেন হয়েছিল ৭৩৫ কোটি ৩৭ লাখ টাকার। এতে সবচেয়ে বেশি অবদান রাখে বিমা খাত। এ খাতের ৩২টি কোম্পানির শেয়ারদর বাড়ার দিনে লেনদেনে অবদান রাখে ১৭ দশমিক ৫০ শতাংশ। এছাড়া শেয়ারদর কমেছে ছয়টি কোম্পানির ও অপরিবর্তিত ছিল মাত্র একটির।
ছয়টি কোম্পানির লেনদেন নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল কাগজ খাত। এর মধ্যে পাঁচটি কোম্পানির শেয়ারদর বৃদ্ধি ও একটির অপরিবর্তিত থাকতে দেখা গেছে। লেনদেনে ১৩ দশমিক ৮০ শতাংশ অবদান রাখে খাতটি।
তৃতীয় অবস্থানে ছিল আলোচিত কোম্পানি বেক্সিমকো লিমিটেডকে নিয়ে গঠিত বিবিধ খাত। ৯ দশমিক ৮২ শতাংশ অবদান রাখে খাতটি। তবে এ খাতের বেশিরভাগ কোম্পানির দরপতন দেখা গেছে। ৯টি কোম্পানির শেয়ারের দাম কমার বিপরীতে বেড়েছে তিনটির ও অপরিবর্তিত ছিল একটির।
চতুর্থ অবস্থানে থাকা ব্যাংক খাতের অবদান ছিল ৯ দশমিক ০৮ শতাংশ। এ খাতের ১৬টি কোম্পানির শেয়ারদর বাড়ার বিপরীতে কমেছে ৯টির ও অপরিবর্তিত ছিল সাতটির। আর পঞ্চম স্থানে ছিল ওষুধ ও রসায়ন খাত। সমান ১৫টি করে কোম্পানির শেয়ারদর বেড়েছে ও কমেছে। এছাড়া একটি কোম্পানির শেয়ারদর অপরিবর্তিত থাকার মধ্য দিয়ে এ খাতের অবদান দাঁড়ায় সাত দশমিক ৩৩ শতাংশ।
বছরের শেষ কার্যদিবস বৃহস্পতিবার ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ২৫ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ছয় হাজার ৭৫৬ পয়েন্টে। এর মধ্যে ২০ পয়েন্টই বেড়েছে শেষ ৩৩ মিনিটে। আগের দিনের ধারাবাহিকতায় সকাল ১০টায় লেনদেন শুরু হয় সূচক বাড়ার মধ্য দিয়ে। সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে আগের দিনের চেয়ে ৫১ পয়েন্ট সূচক বেড়ে বছরের শেষ দিনটা ভালো যাওয়ার ইঙ্গিতই দেয় পুঁজিবাজার। তবে গত প্রায় তিন মাস ধরে যে চিত্র, সেটি আবার দেখা দেয়, শুরুতে সূচক বাড়লেও পরে কমে যায়। বেলা ১টা ৫৭ মিনিটে সূচকের অবস্থান আগের দিনের চেয়ে বেশি ছিল ৫ পয়েন্ট। এর আগের ২০ মিনিটে সূচক কমে ১৯ পয়েন্ট। তবে দিনের শেষ আধা ঘণ্টায় এরপর থেকে শেয়ারদর বাড়তে থাকে, সেই সঙ্গে বাড়তে থাকে সূচক। লেনদেনও গতি পায় এই সময়টায়। এছাড়া অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএসইএস সূচক তিন পয়েন্ট ও ডিএস৩০ সূচক বেড়েছে ১০ পয়েন্ট।
দিন শেষে বেড়েছে ১৭৮টি কোম্পানির শেয়ারদর, কমেছে ১৪৯টির। আর শেয়ারদর ধরে রাখতে পেরেছে ৫০টি কোম্পানি। সূচক বাড়াতে যেসব কোম্পানি বেশি ভূমিকা রেখেছে, সেই তালিকার ওপরে ছিল রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি আইসিবি। কোম্পানিটির দর পাঁচ দশমিক ৬৩ শতাংশ বাড়ায় সূচকে যোগ হয়েছে ৬ দশমিক ২৪ পয়েন্ট। এছাড়াও সবচেয়ে বেশি পয়েন্ট যোগ করা শীর্ষ ১০ কোম্পানির তালিকায় ছিল গ্রামীণফোন, ব্র্যাক ব্যাংক, ইউনিলিভার, ব্যাংক এশিয়া, ইস্টার্ন ব্যাংক, অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ, বাটা শু, ওয়ালটন ও এক্মি ল্যাবরেটরিজ।