নামকরণের পেছনে রয়েছে লোকমুখে চলে আসা নানা মিথ, রহস্য। এ পর্বে ‘কুষ্টিয়া’ জেলার লোককথা গদ্যে সাজিয়েছেন শরিফুল ইসলাম পলাশ
কুষ্টিয়ার উত্তর-পশ্চিম ও উত্তরে পদ্মা নদীর অপর তীরে রাজশাহী, নাটোর ও পাবনা, দক্ষিণে ঝিনাইদহ, পুবে রাজবাড়ী আর পশ্চিমে মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা এবং ভারতের নদীয়া ও মুর্শিদাবাদ জেলা। ভারতের সঙ্গে কুষ্টিয়ার ৪৬ দশমিক ৬৯ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত কুষ্টিয়ার শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতি বাংলাদেশকে করেছে সমৃদ্ধ। ‘বিষাদ সিন্ধু’র রচয়িতা মীর মশাররফ হোসেন ও বাউল সম্রাট লালনের তীর্থভূমি কুষ্টিয়া। গীতিকার, সুরকার ও কবি আজিজুর রহমানের বাস্তুভিটা ও কবর, কবি দাদ আলী, লেখিকা মাহমুদা খাতুন সিদ্দিকা, ‘এই পদ্মা এই মেঘনা’ গানের রচয়িতা আবু জাফর, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শাহ আজিজুর রহমান, কুষ্টিয়ার সাহিত্য ও সংস্কৃতির প্রতিষ্ঠাতা কাঙাল হরিনাথ, নীল বিদ্রোহের নেত্রী প্যারী সুন্দরী, স্বদেশী আন্দোলনের নেতা বাঘা যতিন, প্রকৌশলী কামরুল ইসলাম সিদ্দিকী, সংগীতশিল্পী মো. আবদুল জব্বার, ফরিদা পারভীনসহ অসংখ্য গুণীজনের পীঠস্থান কুষ্টিয়াকে সমৃদ্ধ করেছে।
কুষ্টিয়ার নামকরণ নিয়ে রয়েছে নানা লোকগাথা। এখানে এক সময় কোষ্টা (পাট) চাষ হতো বলে ‘কোষ্টা’ শব্দ থেকে ‘কুষ্টিয়া’ নামকরণ হয়েছে। হেমিলটনের গেজেটিয়ারে উল্লেখ আছে, স্থানীয় জনগণ একে ‘কুষ্টি’ বলে ডাকতো, পরে এর নাম হয়েছে ‘কুষ্টিয়া’। অনেকের মতে, ফরাসি শব্দ ‘কুশতহ’, যার অর্থ ‘ছাই দ্বীপ’ থেকে কুষ্টিয়ার নামকরণ হয়েছে। সম্রাট শাহজাহানের সময় ‘কুষ্টি বন্দর’কে কেন্দ্র করে ‘কুষ্টিয়া’ শহরের উৎপত্তি ঘটেছে বলে ধারণা করা হয়।
১৭২৫ খ্রিষ্টাব্দে কুষ্টিয়া নাটোর জমিদারির অধীনে ছিল। পরে এর পৃথক পরিচিতি আসে কাণ্ডানগর পরগণার রাজশাহী ফৌজদারির সিভিল প্রশাসনের অন্তর্ভুক্তিতে। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ১৭৭৬ সালে কুষ্টিয়াকে যশোরের অন্তর্ভুক্ত করে। কিন্তু ১৮২৮ সালে এটি পাবনা জেলার অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৮৬১ খ্রিষ্টাব্দে নীল বিদ্রোহের কারণে কুষ্টিয়া মহকুমা প্রতিষ্ঠা হয়। ১৮৭১ সালে কুমারখালী ও খোকসা থানা নিয়ে কুষ্টিয়া মহকুমা নদীয়ার অন্তর্গত হয়। ভারত উপমহাদেশ বিভক্তির আগে কুষ্টিয়া নদীয়া জেলার আওতায় একটি মহকুমা ছিল।
১৯৪৭ সালে কুষ্টিয়া জেলার অভ্যুদয় ঘটে। তখন তিনটি মহকুমা নিয়ে গঠিত ছিল এ জেলা। এগুলো হলো কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর। এরপর ১৯৮৪ সালে চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর জেলা হিসেবে আলাদা হয়ে গেলে কুষ্টিয়া মহকুমার ৬টি থানা নিয়ে বর্তমান কুষ্টিয়া জেলা গঠন হয়।