ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন প্রকল্প নিয়ে গতকালের শেয়ার বিজে প্রকাশিত খবরের শিরোনাম ছিল ‘পাঁচ মাস না যেতেই রক্ষণাবেক্ষণে ৮০০ কোটি টাকার প্রকল্প প্রস্তাব’। অবকাঠামোটি অত্যন্ত আলোচিত বিধায় প্রতিবেদনটি বহু পাঠকের দৃষ্টিগোচর হওয়াই স্বাভাবিক। সেসব পড়ে পাঠকদের বিরক্তির উদ্রেক হলে তাদের দোষ দেওয়া যাবে কি? এ প্রকল্পের কাজে তো গত বছর কিংবা তারও আগের বছর হাত দেওয়া হয়নি। এক দশক ধরে চলেছে এ নির্মাণযজ্ঞ। গত বছর জুলাইয়ে প্রধানমন্ত্রী যখন আনুষ্ঠানিকভাবে যান চলাচলের জন্য মহাসড়কটি খুলে দেন, তখন অনেকেই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছিলেন। বহুদিন পরে বিপুল ব্যয়ে চার লেনটি ভারমুক্ত হলো অবশেষে। অথচ ভাগ্যের পরিহাস, ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন যেন আজও অর্থের মায়া কাটাতে পারছে না। চালুর পরও এটি যেন ফাঁস হয়ে বসতে চাইছে উন্নয়ন বাজেটের গলায়। আলোচিত সংবাদ শিরোনামটি তারই ধারাবাহিকতা বৈকি। এ দৈনিকের প্রতিবেদক জানিয়েছেন, সম্প্রতি মহাসড়কটি রক্ষণাবেক্ষণে প্রায় ৮০০ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয় ধরে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগে পাঠিয়েছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ)। প্রস্তাব হচ্ছে, সরকারি তহবিল থেকে উদ্দিষ্ট অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হোক। ন্যায্য হলে দাবি তথা প্রস্তাবটি অনতিবিলম্বে পূরণ করা হোক, এটা অনেকেরই মনোভাব। তবে ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেনের বেলায় ভাবনা হলো, এটি শেষ পর্যন্ত শ্বেতহস্তীতে পরিণত হয়েছে কি নাÑসে দুশ্চিন্তা প্রচুর। সেক্ষেত্রে প্রকল্পটিতে করের অর্থ আরও ঢালা ঠিক হবে কি না, এ নিয়েও মতবিরোধ রয়েছে। সবাই চাইবেন, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে একটা বস্তুনিষ্ঠ পন্থা অনুসরণ করা হোক।
অস্বীকার করা যাবে না, উপযুক্ত রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে দেশের সিংহভাগ সড়ক-মহাসড়কেরই দুরবস্থা বিদ্যমান। এ চিত্র কেবল ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন নয়, সারা দেশের। ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেনের মতো তাৎপর্যপূর্ণ অবকাঠামোর বেলায় অধিকতর সমস্যা হলো, এগুলোর ওপর স্বভাবতই যানবাহনের চাপ পড়ে বেশি। তদুপরি বর্ষায় প্রাকৃতিক ক্ষয় তো আছেই। এক্ষেত্রে ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেনের মহাসড়কটি উদাহরণ হিসেবে চমৎকার। ২০২৩ সালে এটিকে যতটা ভার বহন করতে হবে (আদর্শ এক্সেল লোড) বলে প্রাক্কলন করা হয়েছিলÑদেখা যাচ্ছে, মহাসড়কটি ওই সীমা অতিক্রম করে ফেলেছে ২০১৬ সালেই। তাতে ক্ষতির ঝুঁকির সম্মুখীন হয় মহাসড়কটি। আবার এ একই লোড যখন বর্ষা মৌসুমেও পড়ল, তাতে ঝুঁকির মাত্রা বেড়েছে নিঃসন্দেহে। এদিকে চালুর পর লেনটি যখন পুনঃপরীক্ষা হয়, তখন বিশেষজ্ঞরা বলেছিলেনÑএর নির্মাণসামগ্রীর কিছু দুর্বলতা রয়েছে। খতিয়ে দেখা দরকার, সেটি ইচ্ছাকৃত নাকি অজ্ঞতাবশত হয়েছে। যদি কারও স্বেচ্ছা পদক্ষেপের কারণে মহাসড়কটির রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় বেড়ে গিয়ে থাকে, তবে প্রথমেই উচিত হবে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া। একই সঙ্গে পরিকল্পনা পর্যায়ে কোনো দুর্বলতা ছিল কি না, তার অনুসন্ধানও জরুরি। অবশ্য এমনও ঘটতে পারে, দেশের অভূতপূর্ব উন্নয়নের গতির সঙ্গে তাল মেলাতে পারছেন না নীতিনির্ধারকরা। এখন প্রকৃত কারণ কী, তা চিহ্নিত করা দরকার। বৃহৎ অবকাঠামোর সংরক্ষণ প্রয়োজন এবং সেজন্য বরাদ্দ ছাড় করতে হবে, এ বিষয়ে বিতর্ক থাকার কথা নয়। কথা হলো, অতিরিক্ত শুধু নয়Ñযে কোনো ব্যয়ই সঠিক খাতে উপযুক্ত জবাবদিহিতার সঙ্গে করা হচ্ছে কি না এবং তার সুফল জনগণ পাচ্ছে কি না। এ অবস্থায় ওই প্রকল্প প্রস্তাব ছাড়ের আগে নীতিনির্ধারকদের অবশ্যই এ মর্মে সন্তুষ্ট হতে হবে যে, এই পরিমাণ অর্থ আসলেই ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন রক্ষণাবেক্ষণে প্রয়োজন।