আতাউর রহমান: ব্যবসা ও মুনাফায় ধসসহ নেতিবাচক ইকুইটিতে আছে দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি শ্যামপুর সুগার মিলস লিমিটেড। ফলে ক্ষতি ও উদ্বেগ বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে বিনিয়োগকারীদের। তাই কোম্পানির সামগ্রিক বিষয় নিয়ে বৈঠক করবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। আগামী ২৯ মার্চ এ সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় বিএসইসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম সভাপতিত্ব করবেন। সম্প্রতি এ বিষয়ে একটি চিঠি কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর পাঠিয়েছে কমিশন।
বিএসইসির চিঠিতে বলা হয়েছে, অপারেটিং পারফরম্যান্সের অবনতির কারণে কোম্পানিটি ব্যাপক পুঞ্জীভূত লোকসানের পাশাপাশি নেতিবাচক ইকুইটিতে রয়েছে, যা বিনিয়োগকারীদের উদ্বেগ ও ক্ষতি বৃদ্ধি করছে। তাই কোম্পানিকে আগামী ২৯ মার্চ বেলা সাড়ে ১১টায় আগারগাঁও, শের-এ-বাংলা নগর, প্রশাসনিক এলাকায় সিকিউরিটিজ কমিশন ভবনের সভা কক্ষে উপস্থিত থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বিএসইসি চেয়ারম্যান সভায় সভাপতিত্ব করবেন। কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের সঙ্গে ব্যবস্থাপনা পরিচালক, প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) এবং কোম্পানি সচিবকে সভায় অংশ নেয়ার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এদিকে শ্যামপুর সুগার মিলসের গত ৩১ ডিসেম্বর, ২০২২ সমাপ্ত দ্বিতীয় প্রান্তিকে (অক্টোবর ২০২২-ডিসেম্বর ২০২২) শেয়ার প্রতি লোকসান হয়েছে ৭ টাকা ৩৯ পয়সা। গত বছরের একই সময় শেয়ার প্রতি লোকসান হয়েছিল ২২ টাকা ৫৩ পয়সা। হিসাববছরের প্রথম দুই প্রান্তিকে (জুলাই ২০২২-ডিসেম্বর ২০২২) কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি লোকসান হয়েছে ২৬ টাকা ৬৯ পয়সা। গত বছরের একই সময়ে যা ছিল ৪৪ টাকা ১৫ পয়সা। গত ৩১ ডিসেম্বর, ২০২২ কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি নিট দায় ছিল ১ হাজার ১৯৪ টাকা ২৬ পয়সা।
এছাড়া গত ৩০ জুন, ২০২২ সমাপ্ত হিসাববছরে কোম্পানি কোনো লভ্যাংশ ঘোষণা করেনি। আলোচিত বছরের জন্য কোম্পানিটি শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ না দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। আলোচিত বছরে কোম্পানির শেয়ার প্রতি লোকসান হয় ৫৩ টাকা ০৩ পয়সা। আগের বছর কোম্পানিটির লোকসান ছিল ১২৫ টাকা ১৪ পয়সা।
শ্যামপুর সুগার মিলস বন্ধের ফলে অনিশ্চতায় পড়েন মিলের এক হাজারের বেশি শ্রমিক, কর্মচারী ও কর্মকর্তা। এ অনিশ্চয়তা কাটাতে ২০২১ সালের আগস্টে পাঁচটি প্রস্তাব সরকারের কাছে পাঠায় মিল কর্তৃপক্ষ। সেগুলো হলো মিলের নিজস্ব জায়গায় আলুর কোল্ড স্টোরেজ নির্মাণ, কৃষিভিত্তিক শিল্পকারখানা নির্মাণ, ফিলিং স্টেশন ও এলপি গ্যাস স্টেশন নির্মাণ, মিনারেল ওয়াটার প্ল্যান্ট স্থাপন এবং বিনোদন কেন্দ্র ও রিসোর্ট নির্মাণ।
উল্লেখ্য, রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার শ্যামপুর বন্দরে ১৯৬৪ সালে নির্মাণ হয় শ্যামপুর সুগার মিলস। ১১১ দশমিক ৪৫ একর জমির ওপর নির্মিত এ মিলে আনুষ্ঠানিকভাবে মাড়াই শুরু হয় ১৯৬৭ সালে। দৈনিক আখ মাড়াইয়ের সক্ষমতা রাখা হয় ১ হাজার ১৬ টন। বার্ষিক উৎপাদনক্ষমতা ধরা হয় ১০ হাজার ১৬১ টন। বছরে মিলের মেশিন চালু থাকে তিন মাস। চালুর পর থেকে লাভের মুখ দেখলেও ২০০০ সালের পর থেকে টানা লোকসানে পড়ে মিলটি। গত ১০ মাড়াই মৌসুমে লোকসান বেড়ে হয় প্রায় ৩৬৩ কোটি ২৯ লাখ ৯ হাজার টাকা।
এ পরিস্থিতিতে শিল্প, বাণিজ্য, অর্থ ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে গঠিত তদন্ত কমিটি মিলটির মাড়াই কার্যক্রম বন্ধের সুপারিশ করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০২০-২১ ডিসেম্বরে মাড়াই মৌসুমে মিলের কার্যক্রম বন্ধ করে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন।
অপরদিকে ২০১৯-২০ অর্থবছরের নিরীক্ষিত হিসাব অনুযায়ী, শ্যামপুর সুগার মিলসের পুঞ্জীভূত লোকসান ৫০৫ কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে পুঞ্জীভূত লোকসান বেড়েছে ৬০ কোটি ৬৯ লাখ টাকা অর্থাৎ ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে শ্যামপুর সুগার মিলসের পুঞ্জীভূত লোকসান ছিল ৪৪৪ কোটি ৮৩ লাখ টাকা।
তবে অন্যান্য ব্যয় চলমান থাকায় ২০২০-২১ সালে ৫০ কোটি টাকার বেশি লোকসান হয়েছে, যা কোম্পানিটির মোট আয়ের চেয়ে পাঁচগুণ বেশি লোকসান। মূলত পুরোনো মেশিনারিজের মাধ্যমে আখ থেকে রস আহরণ ও আশানুরূপ চিনি উৎপাদন না হওয়ায় আয়-ব্যয়ের সামঞ্জস্য ধরে রাখতে পারছে না শ্যামপুর সুগার মিলস।