শ্রীমঙ্গল নিলামে কেদারপুর চা বাগানের পাতা সর্বোচ্চ দামে বিক্রি

প্রতিনিধি, মৌলভীবাজার : মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলে ১২ তম চায়ের নিলাম অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ বুধবার শ্রীমঙ্গল চা নিলাম কেন্দ্রের অস্থায়ী অফিস জেলা পরিষদ অডিটোরিয়ামের হলরুমে এ নিলাম অনুষ্ঠিত হয়। এবার চায়ের কোয়ালিটি ভালো থাকায় কেদারপুর চা বাগানের চা পাতা সর্বোচ্চ দামে বিক্রি হয়। যার প্রতি কেজি মূল্য ছিল ৩৬৮ টাকা।

তবে, চট্টগ্রামের বড় বড় বায়াররা আসায় দাম যেমন ভালো ছিল তেমন প্রচুর চা পাতাও বিক্রি হয়েছে। এদিকে চা সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, লোকাল বায়াররা সিন্ডিকেট করে চা পাতা কিনছেন না। তারা শ্রীমঙ্গল থেকে পাতা না কিনে চট্টগ্রাম থেকে চা পাতা কিনছেন। অন্যদিকে চট্টগ্রামের ব্রোকার্সরা শ্রীমঙ্গল নিলামে শুধু চা পাতা বিক্রি করে যাচ্ছেন, কিনছেন না যার কারণে খুব কম পাতা বিক্রি হচ্ছে, এবং এতে হুমকির মুখে শ্রীমঙ্গলের নিলাম কেন্দ্রটি।

জানা যায়, শ্রীমঙ্গলের ৪টি ও চট্রগ্রামের ৬ টি ব্রোকারস হাউস মিলিয়ে প্রায় ৫০ জন বায়ার নিলামে অংশগ্রহণ করেন। এতে ২ লক্ষ তেষট্টি হাজার ৫৩৫ দশমিক ৯০ কেজি চা পাতা নিলামে ওঠে, যার বাজারমূল্য আনুমানিক ৫ কোটি ২৭ লক্ষ ৭ হাজার ১৮০ টাকা। এর আগে গত ২১ সেপ্টেম্বর ৮০ হাজার ৫২৪ দশমিক ৪০ কেজি চা পাতা নিলামে ওঠে এবং বিক্রি হয় ৪০ হাজার ৩০৭ দশমিক ৬০ কেজি চা, যার বাজারমূল্য ছিল ৬২ লক্ষ ৭৫ হাজার ৪৯০ টাকা।

এদিকে দেশে গত বছর রেকর্ড পরিমাণ চা উৎপাদন হয়, যা ছিল ৯৬ দশমিক ৫১ মিলিয়ন কেজি। এ বছর লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১০০ মিলিয়ন কেজি। চায়ের সিংহভাগ উৎপাদিত হয় মৌলভীবাজার জেলায়। এখানে অধিকাংশ চা কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাড়াও চা বিক্রির জন্য অনুমোদিত পাঁচটি ব্রোকার্স হাউস ও স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জড়িত রয়েছেন।

শ্রীমঙ্গল চা ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি চেরাগ আলি বলেন, ‘নিয়মিত চট্টগ্রামের ব্রোকার্সরা আসলে ভালো চা পাতা পাওয়া যায় এবং ব্রোকাররা চা পাতা কিনতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে।’

শ্রীমঙ্গলস্থ টি ট্রেডার্স অ্যান্ড প্ল্যান্টার্স অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের সদস্য সচিব জহর তরফদার শেয়ার বিজকে জানান, ‘আজ ১২ তম চা নিলামে চট্টগ্রাম ও শ্রীমঙ্গল মিলিয়ে ২ লক্ষ ৬৬ হাজার ৪৫৭ দশমিক ২০ কেজি চা পাতা নিলামে উঠে। অধিকাংশই বিক্রি হয়ে গেছে এবং মোটামুটি দাম ভালোর দিকে যাচ্ছে, দাম বাড়ছে। তবে, গত ৩-৪ টা নিলামের তুলনায় এই নিলামে চা পাতার কোয়ালিটিটা ও ভালো ছিল। আজকের নিলামে ক্রেতাদের মধ্যে আগ্রহ ছিল, বেশ পরিমাণ চা পাতা কিনেছে। এই নিলামে প্রতি কেজি চা পাতা সর্বোচ্চ ৩৫০ টাকা এবং সর্বনিম্ন ১১০-১৫ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।’

শ্রীমঙ্গল টি ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এসএমএন ইসলাম (সৈয়দ মুনির) শেয়ার বিজকে বলেন, ‘চট্টগ্রামের বায়াররা এই নিলামে এসে শুধু চা পাতা বিক্রি করে, চা কিনছেন না। কিন্তু শ্রীমঙ্গলের বায়ররা তাদের কাছ থেকে চা পাতা কিনছেন। চট্টগ্রামের বায়াররা শুধু তাদের স্বার্থই বুঝে। কেউ যদি ব্যক্তিগত ভাবে অন্যায় করে তাদের কাছে, যদি মনে হয় তাহলে তাদেরকে তারা ইগনোর করুক, কিন্তু চা নিলাম কেন্দ্রকে যেনো তারা ইগনোর না করেন, চা নিলামে যেনো তারা অংশগ্রহণ করেন। আমরা আশাবাদী এ অকশনে বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি চা প্রস্তাব হবে। ভবিষ্যতে এই নিলাম কেন্দ্রটি বাংলাদেশের সেরা নিলাম কেন্দ্র হবে।’

জানা যায়, ‘২০২২-২৩ অর্থ বছরে শ্রীমঙ্গল চা নিলাম কেন্দ্রে মোট ২৩ দিন চা নিলাম অনুষ্ঠিত হবে। চলতি বছর অর্থাৎ ২০২২ সালে ১৭টি এবং আগামী বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালে ৬টি নিলাম হবে। উল্লেখ্য, আনুষ্ঠানিকভাবে চায়ের দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক নিলাম কেন্দ্র যাত্রা করে ২০১৮ সালের ১৪ মে। পাঁচ বছর ধরে চলছে নিলাম কেন্দ্রটি।’