শেয়ার বিজ ডেস্ক: শ্রীলঙ্কার স্বাস্থ্য খাতে ওষুধের সংকট এখনও কাটেনি। দেশটিতে দেড়শর বেশি প্রয়োজনীয় ওষুধের ঘাটতি রয়েছে। খবর: দ্য হিন্দু।
চরম অর্থনৈতিক সংকট কিছুটা কাটিয়ে উঠতে পেরেছে শ্রীলঙ্কার ধনিক শ্রেণি। তবে কর্তৃপক্ষ ও স্বাস্থ্য খাত-সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, স্বাস্থ্যসেবা খাতের সংকট এখনও কাটেনি, যে কারণে শঙ্কায় রয়েছে সব শ্রেণির মানুষ।
আন্তর্জাতিক ঋণদাতা সংস্থা ও দ্বিপক্ষীয় অংশীদারদের কাছ থেকে জরুরি তহবিল পাওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও সহসা ওষুধের সংকট থেকে বেরিয়ে আসতে পারছে না শ্রীলঙ্কা। দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মেডিক্যাল সরবরাহকারী বিভাগের উপ-মহাপরিচালক ড. ডি আর কে বলেন, আমরা সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি কিন্তু সংকট কাটছে না।
চলতি বছরের শুরু থেকে জ্বালানি, খাদ্যসামগ্রী ও ওষুধের মারাত্মক সংকটে পড়ে শ্রীলঙ্কা। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ তলানিতে চলে আসায় এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দেয়। সেই সমস্যা থেকে উত্তরণ হয়েছে দেশটির, বর্তমানে সরকার রেশন হিসেবে জ্বালানি সহায়তা দিচ্ছে, তহবিল পাচ্ছে এবং দ্বিপক্ষীয় অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে বিদেশিদের সহায়তা পাচ্ছে।
একই সঙ্গে শ্রীলঙ্কার অনেক মৌলিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ বিদ্যমান। অক্টোবরে মূল্যস্ফীতি ছিল ৬৬ শতাংশ, এ সময় খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ৮৫ দশমিক ৬ শতাংশ। চলতি বছরের শেষের দিকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বর্ধিত তহবিল সহায়তা (ইএফএফ) পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী দেশটি। ঋণ পুনর্গঠনে সহায়তার জন্য অর্থ দেবে সংস্থা।
ইতোমধ্যে ওষুধের সরবরাহ সংকট কাটিয়ে উঠতে হাসপাতালগুলো কেন্দ্রীয় পর্যায়ে সমন্বয় চালু করেছে। তবে ঘাটতি কমেনি। শ্রীলঙ্কা মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট ড. সুরন্থ পেরেরা বলেন, স্বাস্থ্য খাতের এ সমস্যা প্রতিদিনের। এ সমস্যা কাটিয়ে উঠতে আরও সময় লাগবে।
শ্রীলঙ্কায় সবচেয়ে বেশি অসুবিধায় রয়েছেন ক্যানসার আক্রান্ত রোগীরা। চিকিৎসকরা বলেছেন, ক্যানসার চিকিৎসার ওষুধ সরবরাহ ফুরিয়ে আসছে। মেডিক্যাল উপকরণ ও ল্যাবরেটরি পরীক্ষার উপকরণ কমে এসেছে। অস্ত্রোপচারের সরবরাহ অপর্যাপ্ত এবং চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহ কঠিন হয়ে পড়েছে। চিকিৎসকদের মতে, এই ঘাটতির অভাব পরিমাপ করা কঠিন, তবে মানসম্পন্ন চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে।
মেডিকেল পেশাজীবীরা বিদেশি দাতাদের কাছ থেকে তহবিল সংগ্রহের চেষ্টা করছেন এবং দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ও তাদের সহায়তা করছে।
শ্রীলঙ্কার ৮০ শতাংশ ওষুধ ও মেডিকেল সরঞ্জাম আমদানি করা হয়। ২০২১ সালে দ্বীপরাষ্ট্রটি ৮০০ মিলিয়ন (৮০ কোটি) ডলারের বেশি ফার্মাসিউটিক্যালস পণ্য আমদানি করে।
স্টেট ফার্মাসিউটিক্যালস করপোরেশনের চেয়ারম্যান সরাথ লিয়ানেজ বলেন, দীর্ঘদিন ধরে শ্রীলঙ্কার বেশিরভাগ ওষুধ সরবরাহ করছে ভারত। এমনকি এখনও দেশটি ভারতের প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে ওষুধ প্রাপ্তির আশা করছে। রনিল বিক্রমাসিংহে সরকার এজন্য ২০ কোটি ডলার ছাড় করেছেন। তবে কিছু আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে শিগগির ওষুধের সরবরাহ আসছে না।
উপরন্তু ভারতের কর্তৃপক্ষ আগের অর্থ পরিশোধ না হওয়ায় নতুন রপ্তানি অনুমোদন করছে না। তবে কলম্বোর এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, উভয়পক্ষ এ সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছে।
চলতি বছরের এপ্রিলে শ্রীলঙ্কার চিকিৎসকরা জীবনরক্ষাকারী ওষুধ ফুরিয়ে আসছে বলে কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করেছিল। তাদের আশঙ্কা, চিকিৎসার অভাবে কভিড-১৯ মহামারির চেয়ে বেশি মানুষ মারা যেতে পারেন। শ্রীলঙ্কা মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (এসএলএমএ) জানিয়েছিল, অস্ত্রোপচারের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও দরকারী ওষুধ ছাড়া আর কিছুই মজুত নেই। খুব প্রয়োজন না হলে তারা অস্ত্রোপচার করছেন না। কারণ দেশে অ্যানস্থেশিয়া দেয়ার ওষুধ নেই।
খাদ্যপণ্যের আকাশচুম্বী দাম, লোডশেডিং, জ্বালানি তেলের সংকট, পানি সংকট তীব্র হলেও দেশটি হিমশিম খাচ্ছে জরুরি খাদ্য ও জ্বালানি আমদানিতে। ওষুধ বিক্রেতারা জানিয়েছেন, দেশে অর্থনৈতিক সমস্যার কারণে ওষুধের আকাল দেখা দিয়েছে। এর মাঝে অনেকে চড়া দামে ওষুধ বিক্রি করছেন। পরিস্থিতি কবে স্বাভাবিক হবে তা কারও পক্ষে বলা সম্ভব নয়।