Print Date & Time : 5 July 2025 Saturday 11:42 am

শ্রীলঙ্কায় ডিসিসিআই বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান

শেয়ার বিজ ডেস্ক : ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি তাসকীন আহমেদ শ্রীলঙ্কার বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশ সফর করে এখানে অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোর (ইজেড) অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধাগুলো প্রত্যক্ষ করার আহ্বান জানিয়েছেন। এ ছাড়া বাংলাদেশ সরকার বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বিভিন্ন প্রণোদনা দিচ্ছেÑউল্লেখ করে এই সুযোগ-সুবিধাগুলো কাজে লাগিয়ে শ্রীলঙ্কার বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোয় বিনিয়োগ করার আহ্বান জানান তিনি।

গতকাল বুধবার কলম্বোর ন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স অব শ্রীলঙ্কায় আয়োজিত ‘অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সম্প্রসারণে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কার বাণিজ্যিক সম্পর্কের উন্নয়ন’ শীর্ষক বিজনেস প্লেনারি সেশনে বক্তৃতাকালে তিনি একথা বলেন। এ সেশনে শ্রীলঙ্কায় সফররত ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) প্রতিনিধি দলের সদস্যবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন। শ্রীলঙ্কায় বাংলাদেশ হাইকমিশনের সার্বিক সহযোগিতায় অনুষ্ঠানটি আয়োজন করা হয়।

ডিসিসিআই সভাপতি তাসকীন আহমেদ তার বক্তব্যে বলেন, ‘বিগত কয়েক দশকে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ এবং ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বেশ স্থিতিশীল ছিল।’ তিনি বলেন, ‘এ অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশের তৈরি পোশাক, ওষুধ, চামড়াজাত পণ্য, কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ পণ্য, ইলেকট্রনিক্স ও হালকা প্রকৌশল এবং তথ্য-প্রযুক্তি প্রভৃতি খাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।’

ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, ‘শ্রীলঙ্কার উদ্যোক্তারা ইতোমধ্যে বাংলাদেশে ব্যাংকিং ও আর্থিক খাত, টেক্সটাইল ও তৈরি পোশাক, জ্বালানি ও অবকাঠামো প্রভৃতি খাতে ৪৩৮ দশমিক ১১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে। তাসকীন আহমেদ বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় খাতগুলোয় আরও বেশি হারে বিনিয়োগের আহ্বান জানান। এছাড়া দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের অধিকতর উন্নয়নে প্রায় তিন দশক পূর্বে স্বাক্ষরিত ‘ডাবল ট্যাক্সেশন এভয়ডেন্স এগ্রিমেন্ট’ যুগোপযোগীকরণের ওপরও গুরুত্ব আরোপ করেন ঢাকা চেম্বার সভাপতি।

ঢাকা চেম্বারের প্রতিনিধি দলকে স্বাগত জানিয়ে ন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স অব শ্রীলঙ্কার সভাপতি আনূরা ওয়ারনাকুলাসুরিয়া বলেন, ‘বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণে পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাস জরুরি এবং দুই দেশের বেসরকারি খাতের মধ্যকার এ ধরনের সমন্বয় দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।’

শ্রীলঙ্কা-বাংলাদেশ বিজনেস কো-অপারেশন কাউন্সিলের সভাপতি আন্দ্রে ফার্নান্দো তার দেশের ওষুধ শিল্পের উন্নয়ন ও বিনিয়োগে এগিয়ে আসার জন্য বাংলাদেশের উদ্যোক্তাদের প্রতি আহ্বান জানান। শ্রীলঙ্কা এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের চেয়ারম্যান মানগালা ওয়াইজেসিঙ্গহি বলেন, ‘শ্রীলঙ্কার জিডিপিতে রপ্তানি খাতের অবদান ১৯ দশমিক ৬ শতাংশ ও ২০২৪ সালে মোট রপ্তানি ছিল ১৬ দশমিক ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।’

তিনি বলেন, ‘শ্রীলঙ্কা তার রপ্তানি পণ্যের বাজার সম্প্রসারণ ও পণ্যের বহুমুখীকরণের ওপর অধিক হারে প্রধান্য দিচ্ছে। ২০২৪ সালে বাংলাদেশ থেকে ওষুধ, তৈরি পোশাক, ফেব্রিক্স ও কেমিক্যাল প্রভৃতি পণ্য আমদানি করেছে। এছাড়া সুতা ও টেক্সটাইল, ফেব্রিক্স, মসলা, পশু খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, বাদাম ও কৃষিপণ্য প্রভৃতি খাতে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বৃদ্ধির সুযোগ রয়েছে বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।

শ্রীলঙ্কার ওষুধ, প্যাকেজিং, লজিস্টিক ও রপ্তানিমুখী পণ্য উৎপাদন খাতে বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশের উদ্যোক্তাদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। বোর্ড অব ইনভেস্টমেন্ট অব শ্রীলঙ্কা রেনুকা এম ওয়াইরাকুনে বলেন, ‘দুই দেশের মধ্যকার এফটিএ স্বাক্ষরের মাধ্যমে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ অনেকাংশে বৃদ্ধির পাশাপাশি শুল্কবিষয়ক প্রতিবন্ধকতাও নিরসন হবে।’
তিনি বলেন, ‘শ্রীলঙ্কান ওষুধ, মেডিকেল যন্ত্রপাতি ও ফেব্রিক্স খাতে বিদেশি বিনিয়োগের জন্য বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন করা হয়েছে, সেখানে বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা বিনিয়োগ করতে পারে।’ সেই সঙ্গে অবকাঠামো, পর্যটন, তথ্য-প্রযুক্তি ও শিক্ষা প্রভৃতি খাত শ্রীলঙ্কায় বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য অত্যন্ত সম্ভাবনাময় বলে তিনি মন্তব্য করেন। তিনি আরও বলেন, ‘শ্রীলঙ্কার বিনিয়োগ বোর্ড উদ্যোক্তাদের সুবিধার্থে সব সেবা সংবলিত ১৫টি রপ্তানি প্রক্রিয়া অঞ্চল পরিচালনা করছে, যেখানে বাংলাদেশি উদ্যোক্তারা বিনিয়োগ করতে পারেন।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেনÑশ্রীলঙ্কায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার আন্দালিব ইলিয়াস ও বাংলাদেশে নিযুক্ত শ্রীলঙ্কা হাইকমিশনার ধর্মপালা বীরাক্কোদি। হাইকমিশনার আন্দালিব ইলিয়াস বলেন, ‘বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার মধ্যকার বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্র্রসারণে অতিদ্রুত এফটিএ স্বাক্ষর জরুরি।’ ডিসিসিআই সাবেক সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, ‘দ্বিপক্ষীয় ব্যবসা ও বিনিয়োগ বাড়াতে এফটিএ স্বাক্ষরে দুই দেশের সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। এছাড়া উভয় দেশের সমুদ্র অর্থনীতির সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে একযোগে কাজ করার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।’

উভয় দেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণে দুই দেশের শুল্কবিষয়ক প্রতিবন্ধকতা নিরসনের পাশাপাশি নীতির যুগোপযোগী সংস্কারের ওপর তিনি গুরুত্ব আরোপ করেন। অনুষ্ঠানে ঢাকা চেম্বারের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে ৭০টি শ্রীলঙ্কান ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধির মধ্যকার ১৫০টি বিটুবি ম্যাচ-মেকিং অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে দুই দেশের উদ্যোক্তারা নিজেদের ব্যবসা ও বিনিয়োগবিষয়ক তথ্য আদান-প্রদানের সুযোগ পান, যা ভবিষ্যতে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্প্রসারণে কার্যকর ভূমিকা পালন করবে। ডিসিসিআই ঊর্ধ্বতন সহসভাপতি রাজিব এইচ চৌধুরী, সহসভাপতি মো. সালিম সোলায়মান এবং প্রতিনিধিদলের সদস্যরা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন।