নিজস্ব প্রতিবেদক: স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, ‘করোনার সংক্রমণের হার গত মাসেও যেখানে এক শতাংশের নিচে ছিল, সেটি বর্তমানে দুই শতাংশে উঠে গেছে। সংক্রমণ যদি এভাবে বাড়তে থাকে, আবারও হাসপাতালগুলো রোগীতে পূর্ণ হয়ে আসবে, জায়গা হবে না।’ গতকাল বিকালে রাজধানীর মহাখালীর আইসিডিডিআর,বি অডিটোরিয়ামে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বিভিন্ন দেশে করোনা বেড়েছে, সেখান থেকে সংক্রমিত হয়ে রোগীরা বাংলাদেশেও ঢুকে পড়ছে। আগে আর্টিফিশিয়াল টেস্টের যে বিষয় ছিল, দেশে আসার ৪৮ ঘণ্টা আগে টেস্ট করে সার্টিফিকেট নিয়ে আসতে হবেÑসেটি তো আমরা এখন করছি না। শুধু ভ্যাকসিন সার্টিফিকেট দেখছি। যদি অন্যান্য দেশে খুব বেশি সংক্রমণ বেড়ে যায় এবং দেশেও বাড়ে, তাহলে আবার আর্টিফিশিয়াল টেস্ট শুরু করব।’
জাহিদ মালেক বলেন, ‘করোনার সংক্রমণ আমরা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছিলাম। কিন্তু দেশে এখন আবার করোনা বাড়ছে। গত এক মাস দেশে সংক্রমণের হার ছিল শূন্য দশমিক ছয় শতাংশ, এখন সেটি দুই শতাংশে উঠেছে। প্রতিদিন যেখানে দৈনিক ৩০ থেকে ৩৫ জন রোগী শনাক্ত হচ্ছিলেন, এখন সেটি বেড়ে ১৩০ থেকে ১৫০ জনে দাঁড়িয়েছে। আশঙ্কা করছি, যদি এ মুহূর্তে পরীক্ষা বাড়ানো হয়, তাহলে সংক্রমণের সংখ্যা আরও বেড়ে যাবে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের জন্য একটি ভালো খবর হলো, প্রায় সব হাসপাতালে এখন ২০ জনের বেশি রোগী নেই। কিন্তু আমরা যেভাবে অসতর্ক হয়ে চলাচল করছি, তাতে হাসপাতালে রোগী বাড়তেও সময় লাগবে না। আমাদের স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে আরও সতর্ক হতে হবে। আপনারা সবাই স্বাস্থ্যবিধি মেনেই সব কাজকর্ম করবেন, এটি আমরা আশা করব।’
স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘সংক্রমণ প্রতিরোধে আমরা বুস্টার ডোজের ক্যাম্পেইন করেছি। আমরা এখন পর্যন্ত আড়াই কোটি মানুষকে বুস্টার ডোজ দিয়েছি। এখনও অনেক মানুষ বাকি আছেন। যারা দুটি ডোজ নিয়েছেন, কিন্তু বুস্টার ডোজ বাকি আছে, তারা দ্রুতই বুস্টার ডোজ নিয়ে নেবেন। তাহলে সুরক্ষিত থাকবেন।’
মাঙ্কিপক্স প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ‘কিছু কিছু দেশে মাঙ্কিপক্স পাওয়া গেছে। আমাদের দেশে এখনও পাওয়া যায়নি। বিমানবন্দরগুলোয় সবাই সতর্ক আছেন। কোনো ধরনের লক্ষণ নিয়ে কেউ এসেছেনÑতারা যদি এমন কাউকে দেখেন, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।’
শিশুদের করোনার টিকা দেওয়ার প্রসঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের হাতে এখনও শিশুদের টিকা আসেনি। কবে শিশুদের টিকা দেয়া হবে, সে সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত এখনও নেয়া হয়নি।’ আগামী ২৬ জুন কলেরার টিকা কার্যক্রম উদ্বোধন করা হবে বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
জাহিদ মালেক বলেন, ‘স্বাস্থ্য খাতে গবেষণা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে আরও এগিয়ে নিতে ও চিকিৎসাব্যবস্থাকে আধুনিকীকরণে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। অনেক পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি এবং বাস্তবায়ন করছি। এটি চলমান প্রক্রিয়া।’
অনুষ্ঠানে মুজিব শতবর্ষে গবেষণার জন্য ১০ নারীকে গবেষণা অ্যাওয়ার্ড দেয়া হয়। তাদের প্রত্যেককে ৩৫ লাখ টাকা করে দেয়া হবে। এ অ্যাওয়ার্ড প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ‘নারীরা এগিয়ে যাচ্ছেন। মেডিকেল কলেজগুলোয় শিক্ষার্থীদের অধিকাংশই নারী। অ্যাওয়ার্ডের জন্য যারা আবেদন করেছেন, তাদের ৭০ শতাংশই নারী।’
তিনি আরও বলেন, ‘মেয়েরা এখন কোনো ক্ষেত্রেই পিছিয়ে নেই। রাজনীতি, স্বাস্থ্য ও খেলাধুলায়ও তারা ভালো করছেন। খেলাধুলায় পুরুষদের চেয়েও তারা অনেক এগিয়েছেন। নারী ক্রিকেট টিম অনেক ভালো করছে। নারীরা হিমালয় পর্বতেও উঠেছেন। আশা করব তারা আরও ভালো করবেন।’
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম, আইসিডিডিআর,বি’র নির্বাহী পরিচালক ডা. তাহমিদ আহমেদ ও বিজ্ঞানী ড. ফেরদৌসী কাদরী প্রমুখ।
আইসিডিডিআর,বি’র কৌশলগত লক্ষ্য ও জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আটটি বিষয়ের আওতায় পুরস্কার বিজয়ীদের এই গবেষণা অনুদান দেয়া হয়েছে। বিষয়গুলো হলোÑমা ও শিশুর স্বাস্থ্য, আন্ত্রিক ও শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ, উদ্ভবশীল ও পুনরুদ্ভবশীল সংক্রমণ, অপুষ্টি, সর্বজনীন স্বাস্থ্য, স্বাস্থ্যের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, অসংক্রামক রোগ এবং যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্যসংশ্লিষ্ট অধিকার। পুরস্কার বিজয়ীদের তাদের প্রস্তাবনা এবং প্রকল্প প্রধানের সনদের গুণমানের ওপর ভিত্তি করে মূল্যায়ন করা হয়েছে। সারাবিশ্বের বিজ্ঞানী ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গঠিত আইসিডিডিআর,বি’র সায়েন্টিফিক অ্যাডভাইজরি গ্রুপ (স্যাগ) প্রকল্পগুলোর মূল্যায়ন করেছে।
১০ পুরস্কারবিজয়ী হলেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডা. মোসাম্মৎ কামরুন নেসা, চট্টগ্রামের চেস্ট ডিজিজেস হসপিটালের ডা. তানজিলা করিম, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ম্যানেজমেন্টের তাহমিনা সুলতানা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়াসিফা তাসনিম শাম্মা, মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মোসাম্মৎ নুরজাহান খাতুন, আইসিডিডিআর,বি’র ডা. নওশিন পাপড়ি, ডা. শাহরিয়া হাফিজ কাঁকন, ডা. কামরুন নাহার কলি, ডা. নুরুন নাহার নায়লা ও গুলশান আরা।