সংগ্রাম থেকে সমৃদ্ধির পথে দেশের বস্ত্রশিল্প

বাংলাদেশের বস্ত্রশিল্প তার যাত্রায় অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেছে, তবে এই শিল্প আজ বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় রপ্তানিকারক শিল্প হিসেবে পরিচিত। ২০২৩ সালে, বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি প্রায় ৪৭.৩৯ বিলিয়ন ডলার পৌঁছেছে, যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ১০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এই অর্জন শুধুমাত্র ব্যবসায়িক সাফল্য নয়, বরং আমাদের শিল্পের দৃঢ়তা ও সক্ষমতার প্রমাণ।

কভিড-১৯ মহামারী সারা বিশ্বকে স্থবির করে দিয়েছিল, এবং বাংলাদেশের বস্ত্রশিল্পও এর বাইরে ছিল না। ২০২০ সালে রপ্তানি প্রায় ১৮ শতাংশ কমে গিয়েছিল, কিন্তু শিল্প উদ্যোক্তারা অত্যন্ত দক্ষতার সাথে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছেন। সরকারী সহযোগিতা এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে উৎপাদন চালু করার ফলে, ২০২১ সালে রপ্তানি ১৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছিল। এছাড়া, ২০২২ সালে আন্তর্জাতিক অর্ডারের পরিমাণ প্রায় ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছিল, যা বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের পুনরুদ্ধারের একটি বড় উদাহরণ। এই সময়ে, আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডগুলি তাদের অর্ডার বাংলাদেশের দিকে ফিরিয়ে নিয়ে আসে, বিশেষ করে ইউরোপ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে।


বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের সাফল্য তার শক্তিশালী আন্তর্জাতিক সম্পর্কের মধ্যে নিহিত। ২০২৩ সালে, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প ৭৫০ মিলিয়ন পিস নতুন অর্ডার গ্রহণ করেছে, যা পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় ২০ শতাংশ বেশি। বিশ্বের বৃহত্তম ব্র্যান্ডগুলির মধ্যে যেমন নাইক, অ্যাডিডাস, হেনড্রিকস, ইউনিক্লো, এবং জিএইচএস -এর মতো প্রতিষ্ঠানগুলি বাংলাদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্ডার দিয়েছে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন্তএই দুই প্রধান বাজারে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি ২০২৩ সালে এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি প্রায় ১০.৭ বিলিয়ন ডলার পৌঁছেছে, যা দেশের মোট পোশাক রপ্তানির প্রায় ২৫ শতাংশ । ইউরোপীয় ইউনিয়নে এই বছর বাংলাদেশের রপ্তানি প্রায় ১৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যেখানে নতুন অর্ডারের পরিমাণ ৩ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে।

বাংলাদেশের বস্ত্রশিল্প শুধু ব্যবসায়িক ক্ষেত্রেই নয়, বরং টেকসই উদ্যোগের ক্ষেত্রেও শীর্ষস্থানীয় ভূমিকা পালন করছে। বর্তমানে ২০০টিরও বেশি গার্মেন্টস কারখানা পরিবেশবান্ধব “LEED” সনদ অর্জন করেছে। বাংলাদেশ এখন বিশ্বের শীর্ষ টেকসই পোশাক উৎপাদনকারী দেশগুলির মধ্যে অন্যতম। দেশের বস্ত্রশিল্পে প্রযুক্তির ব্যবহারের ক্ষেত্রেও উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। স্মার্ট টেক্সটাইল, ওয়্যারেবল প্রযুক্তি এবং ডিজিটাল উৎপাদন ব্যবস্থায় উন্নতি বাংলাদেশকে নতুন দিগন্তের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, বাংলাদেশে প্রথম স্মার্ট পোশাক উৎপাদনকারী ফ্যাক্টরি চালু হয়েছে, যা এখন বিশ্বব্যাপী রপ্তানি হচ্ছে।

বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প বর্তমানে শুধু একটি দেশের শিল্প নয়, বরং এটি বিশ্বের বৃহত্তম পোশাক সরবরাহকারী দেশে পরিণত হয়েছে। আগামী পাঁচ বছরে, বাংলাদেশ সরকারের লক্ষ্য ২০ শতাংশ রপ্তানি বৃদ্ধি এবং নতুন মার্কেট খোঁজা। ২০২৪ সালে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প ৫০ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ব্র্যান্ডগুলি, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন, বাংলাদেশকে তাদের প্রধান সরবরাহকারী হিসেবে বেছে নিয়েছে। এটি বাংলাদেশের বস্ত্রশিল্পের ভবিষ্যতের প্রতি অত্যন্ত আশাবাদী একটি দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করে। বাংলাদেশের বস্ত্রশিল্প আজ একটি শক্তিশালী, টেকসই এবং আন্তর্জাতিকভাবে সম্মানিত শিল্পে পরিণত হয়েছে। সংগ্রাম এবং চ্যালেঞ্জ ছিল, তবে আমরা সেগুলো জয় করে এগিয়ে চলেছি। বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের ভবিষ্যৎ আরও উজ্জ্বল, এবং এই শিল্পের মাধ্যমে আমরা শুধু অর্থনৈতিক উন্নয়নই নয়, বরং দেশের মর্যাদা এবং বৈশ্বিক অবস্থানও উন্নত করছি।