Print Date & Time : 24 July 2025 Thursday 3:24 am

সংযোগ সড়কের অভাবে অলস পড়ে আছে সেতু

প্রতিনিধি, শরীয়তপুর: সংযোগ সড়কের অভাবে অলস পড়ে আছে আধুনিক নির্মাণশৈলীর একটি ব্রিজ। ব্রিজটি নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে ছয় বছর আগে। সংযোগ সড়ক না থাকায় যাতায়াত ও কৃষি পণ্য পরিবহনে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে স্থানীয় কৃষকসহ সবাইকে। স্থানীয় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা নৌকা দিয়ে নদী পার হতে গিয়ে পড়ছে বিভিন্ন দুর্ঘনায়। এলজিইডি বলছে, ভূমি জটিলতার কারণে সংযোগ সড়ক নির্মাণ সম্ভব হয়ে উঠছে না। সম্প্রতি শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার ভোজেশ্বর ইউনিয়নের কীর্তিনাশা নদীর ওপর নির্মিত ভোজেশ্বর-জপসা ব্রিজে গিয়ে এমন চিত্র দেখা গেছে।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কীর্তিনাশা নদীর ওপর নির্মিত ভোজেশ্বর-জপসা ব্রিজটি আধুনিক নির্মাণশৈলীতে তৈরি হলেও নেই যান চলাচল। দীর্ঘ ছয় বছর ধরে ৯৯ মিটারের ব্রিজটি অলস পড়ে আছে। জেলার সবচেয়ে বড় বন্দর ভোজেশ্বরের সঙ্গে জপসার সংযোগ স্থাপনের লক্ষ্যে ২০১৬ সালে ব্রিজটির নির্মাণকাজ শুরু করে এলজিইডি। ২০১৮ সালে ব্রিজের নির্মাণকাজ শেষ হলেও সংযোগ সড়ক নির্মাণ না করেই চলে যায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কামারজানি ব্রোজেন আনোয়ারা জিভি। এরপর ২০১৯ সালের ১৮ জুলাই ১৩ কোটি ২১ লাখ টাকা ব্যয়ে নতুন করে সংযোগ সড়ক নির্মাণকাজ শুরু করে এলজিইডি। ২০২১ সালের জুন মাসে সংযোগ সড়ক নির্মাণের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত শেষ হয়নি। ফলে ব্রিজের ওপর দিয়ে যাতায়েতের সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন পথচারী ও স্থানীয় বাসিন্দারা। অনেকটা বাধ্য হয়েই নদী পারাপারের জন্য নৌকার ওপর ভরসা করছেন তারা। ভুক্তভোগী ও স্থানীয় বাসিন্দারা দ্রুত সংযোগ সড়ক নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন।

আরব আলী নামে স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার আগেই আমাদের ব্রিজটি নির্মাণ হয়ে গেছে। ব্রিজ নির্মাণ হলে কী হবে, রাস্তা নির্মাণ করেনি সরকার। রাস্তা না থাকার কারণে প্রতিদিনই দুর্ঘটনা ঘটছে। অনেক মানুষের হাত-পা ভেঙেছে। বৃষ্টি হলেই রাস্তায় পানি জমে যায়। বাড়ি থেকে বের হতে পারি না।
আকলিমা বেগম নামে আরেকজন বলেন, আমাদের দাবি ব্রিজটি দিয়ে চলাচলের জন্য রাস্তা নির্মাণ করা হোক। ছেলে-মেয়েকে নিয়ে স্কুলে যেতে পারি না। প্রতিনিয়ত আমাদের কষ্ট ভোগ করতে হয়। নৌকা দিয়ে পারাপার হতে হয়।
আহমেদ চৌকিদার বলেন, পাঁচ থেকে ছয় বছর ধরে ব্রিজটি পড়ে আছে। আমরা চলাচল করি নৌকায়। মানুষ মালপত্র নিয়ে ব্রিজ দিয়ে চলাচল করতে পারে না।

মনোয়ারা বেগম নামে এক বৃদ্ধা তার নাতি-নাতনিদের মাদরাসায় পৌঁছে দিতে ব্রিজের নিচ দিয়ে প্রতিদিন নৌকায় নদী পার হন। তিনি বলেন, প্রতিদিন নাতি-নাতনিদের নিয়ে মাদরাসায় যাই নৌকা দিয়ে। যদি নদী পথে কোনো দুর্ঘটনা ঘটে যায়, তাহলে দায় নেবে কে? দ্রুত রাস্তা নির্মাণের দাবি জানাই। সাদিয়া ইসলাম নামে স্থানীয় এক নারী বলেন, কিছুদিন পরপর সরকারি লোকজন এসে দেখে যায়। কিন্তু রাস্তার কোনো কার্যক্রম হয় না। মানুষজন যাতায়াত করলে প্রতিদিন দুর্ঘটনায় পড়ে। আমাদের বাড়ি-ঘরের ওপর গাড়ি উল্টে পড়ে। বাড়িঘড় ভেঙে যায়। আমরা চাই দ্রুত রাস্তাটা নির্মাণ করে দিক সরকার।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর শরীয়তপুরের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম রাফেউল ইসলাম বলেন, ভোজেশ্বর-জপসা ব্রিজটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ব্রিজ। মূল ব্রিজের নির্মাণকাজ সমাপ্ত হয়েছে। দুই বছর আগে অ্যাপ্রোচ সড়কের জন্য একটি টেন্ডার হয়েছিল। ভূমি জটিলতার সমস্যা সমাধান করতে না পাড়ার কারণে এক পর্যায়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ করতে অনীহা প্রকাশ করে। পরবর্তী সময়ে ওই টেন্ডার বাতিল করে নতুন টেন্ডার প্রক্রিয়া করা হয়। টেন্ডারটির অনুমোদন করেনি অধিদপ্তর। পরবর্তী সময়ে আবার টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। আশা করছি, ডিসেম্বর-জানুয়ারির মধ্যে অ্যাপ্রোচ সড়কের কাজ সম্পন্ন করা যাবে।