অবৈধভাবে দখল করে নেওয়া সংরক্ষিত বনভূমি উদ্ধারে ‘ক্রাশ প্রোগ্রাম’(সর্বাত্মক অভিযান) শুরু করার যে উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে সরকার, সাধারণ মানুষ সে উদ্যোগকে স্বাগত জানাবে বলেই বিশ্বাস। রোববার পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে মন্ত্রণালয়টি জানিয়েছে, আগামী ফেব্রুয়ারি ও মার্চের মধ্যে ১ লাখ ৩৮ হাজার ৬১৩ একর বনভূমি পুনরুদ্ধারের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
বনভূমি দখলের যে চিত্র প্রতিনিয়ত গণমাধ্যমে আসে, তা দেখে ধারণা হওয়া স্বাভাবিক যে, বনভূমি তদারকি ও সংরক্ষণে দায়িত্বশীল মন্ত্রণালয়ের যথাযথ দৃষ্টি ও মনোযোগের ঘাটতি রয়েছে। কারণ বিপুল পরিমাণ বনভূমি রাতারাতি বেদখল হয়ে যায়নি; বছরের পর বছর ধরে এ বেআইনি ও পরিবেশ-ধ্বংসাত্মক তৎপরতা চলে এসেছে। তবে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির ভূমিকায় আমরা আশাবাদী।
জাতিসংঘের বেঁধে দেওয়া লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী প্রতিটি রাষ্ট্রে মোট আয়তনের ২৫ শতাংশ বনভূমি থাকতে হবে। কিন্তু বাংলাদেশে বনভূমি উজাড় হতে হতে এখন ১৫ শতাংশের কাছাকাছি চলে এসেছে; অবশ্য এ হিসাব বন বিভাগের। বেসরকারিভাবে ধারণা করা হয়, আমাদের দেশে এখন প্রকৃত বনভূমির পরিমাণ এর চেয়ে কম।
সংসদীয় কমিটির বৈঠকে জানানো হয়, দেশে বর্তমানে বিভিন্ন শ্রেণির মোট বনভূমির পরিমাণ ৪৬ লাখ ৪৬ হাজার ৭০০ একর। এর মধ্যে দুই লাখ ৮৭ হাজার ৪৫২ একর বনভূমি বেদখলে আছে। বেদখলে থাকা বনভূমির ১ লাখ ৩৮ হাজার ৬১৩ একর সংরক্ষিত বনভূমি। ৮৮ হাজার ২১৫ জন দখলদার এসব সংরক্ষিত বনের জমি দখল করে আছেন। এর মধ্যে শিল্পপ্রতিষ্ঠানের দখলে আছে প্রায় ৮০০ একর। ওই বৈঠকের পর কমিটির সভাপতি গণমাধ্যমকে বলেছেন, অবৈধভাবে বনের জমি দখল করে জালিয়াতির মাধ্যমে রেকর্ড পরিবর্তন করে ব্যাংকঋণ নিয়েছে কি না, সেটিও দেখা হবে। এজন্য বাংলাদেশ ব্যাংক ও সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর সহায়তা নেওয়া হবে।
রোহিঙ্গাদের জন্য অস্থায়ী শিবির নির্মাণ করতে অসংখ্য বন ও গাছপালা কেটে ফেলা হয়েছে। তাছাড়া অর্থনৈতিক অঞ্চল, বিভিন্ন সরকারি অবকাঠামো নির্মাণে বনভূমি হ্রাস পাচ্ছে। বনভূমি দখলদাররা বিভিন্নভাবে রাষ্ট্র থেকে সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকে। এদের আরেকটি পরিচয়ও জনগণের কাছে স্পষ্ট করতে হবে। আমরা চাই, অবৈধ দখলদার ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের তালিকা জনসমক্ষে প্রকাশ করা হোক।
অবৈধ দখলদাররা স্থানীয়ভাবে ক্ষমতাবান, হয়তো রাজনৈতিকভাবেও প্রভাবশালী। কিন্তু কোনো ব্যক্তি রাষ্ট্রের চেয়ে শক্তিশালী নয়। তাছাড়া ওই বিশিষ্ট ব্যক্তিরা অবৈধ দখলদার। রাষ্ট্রের জমি দখলদারদের কিরুদ্ধে কঠোর না হলে এসব জমি দখলমুক্ত করা সম্ভব নয়। দেশকে বর্তমান জনগোষ্ঠীর ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বাস উপযোগী টেকসই পরিবেশ নিশ্চিতকরণে বনভূমি সংরক্ষণের বিকল্প নেই। টেকসই পরিবেশ ও বন উন্নয়নে প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ করতে হবে। পরিবেশকে বাসযোগ্য করতে নির্মল বায়ু, জীববৈচিত্র্য, জীব নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।