প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে রাজনৈতিক দলের সংলাপ

সংস্কারের পর দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচন চায় গণফোরাম

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাষ্ট্র সংস্কারের পর দ্রুত সময়ের মধ্যে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন চেয়েছে গণফোরাম। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সংলাপের পর এ কথা জানিয়েছেন দলটির সমন্বয় কমিটির চেয়ারম্যান মোস্তফা মহসীন মন্টু। সংবিধান, বিচার বিভাগ, আইনশৃঙ্খলা নিয়ে সংলাপে গণফোরামের ইমেরিটাস সভাপতি ড. কামাল হোসেন কথা বলেছেন বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বাজারে পরিস্থিতি নিয়ে জোর দিয়েছি। সিন্ডিকেটকে অবশ্যই ভাঙতে হবে।’
প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনার সামনে গতকাল শনিবার বিকাল পৌনে ৪টায় সাংবাদিকদের এ কথা বলেন মোস্তফা মহসীন মন্টু।

তিনি বলেন, পতিত স্বৈরাচার ও তাদের বিদেশি এজেন্টরা বাংলাদেশটাকে ধ্বংস করার প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে। এ থেকে উদ্ধারের জন্য আমাদের সবাইকে জাতীয়ভাবে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। গণফোরাম অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন চায় জানিয়ে তিনি বলেন, সবাইকে ঐকমত্য হয়ে দেশকে এগিয়ে নিতে হবে। এ সরকার জনগণের সরকার। এ সরকারকে রক্ষার স্বার্থে অর্থাৎ আমাদের নিজেদের রক্ষার স্বার্থে ভবিষ্যতে সুষ্ঠু নির্বাচন করতে হবে। মোস্তফা মহসীন মন্টু বলেন, ‘আমরা সরকারকে সার্বিক সহযোগিতা করব। তিনি (প্রধান উপদেষ্টা) যে কোনো বিষয়ে আমাদের সহযোগিতা চাইবেন। আমরা যেটা উপলব্ধি করব, সেটাই পরামর্শ দেব। জনগণের জন্য দরজা খোলা আছে বলে প্রধান উপদেষ্টা আমাদের বলেছেন।’ তিনি বলেন, পাচার হয়ে যাওয়া লাখো কোটি টাকা ফেরত আনতে হবে। দেশের অর্থনীতি বিপর্যস্ত অবস্থায় আছে। সেটা উত্তরণে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। সেটা কোনো দলীয় চিন্তা-চেতনা নয়, জাতীয় ঐকমত্যের চিন্তায় এগোতে হবে।

নির্বাচন নিয়ে কথা হয়েছে জানিয়ে মোস্তফা মহসীন মন্টু বলেন, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে, এটার জন্য সার্চ কমিটি বা কিছু করার প্রয়োজন আছে, ভালো লোক নিয়োগ দেয়ার দরকার আছে; যাতে অতীতের মতো কোনো সমস্যা না হয়।
রোডম্যাপ নিয়ে আলোচনা হয়েছে কি নাÑএমন প্রশ্নে মোস্তফা মহসীন মন্টু বলেন, ‘আমরা কোনো তারিখ উল্লেখ করিনি। বলেছি সংস্কার শেষে অতিদ্রুত নির্বাচন দেয়ার জন্য। তবে সংস্কার শেষ না হলে সব একই হবে। নির্বাচনের আগে থাকি রাম, নির্বাচনের পরে হই রাবণ। ওই ধরনের নির্বাচন কমিশন চাই না। অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশন কমিশন চাই।’
সংবিধান সংশোধনের জন্য প্রস্তাব দিয়েছেন কি নাÑএমন প্রশ্নে তিনি বলেন, দু-এক দিনের মধ্যে আলোচনা করে লিখিত আকারে দেব।

আটটি দিবস বাতিল করা হয়েছে, এ নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি নাÑএমন প্রশ্নে মোস্তফা মহসীন মন্টু বলেন, জাতীয় দিবস ছাড়া কোনো দিবসই রাখা উচিত নয়। সংলাপ ফলপ্রসূ হয়েছে উল্লেখ করে গণফোরাম সমন্বয় কমিটির সদস্য সচিব মিজানুর রহমান বলেন, বৈঠকে নির্বাচনব্যবস্থা, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও নিয়ন্ত্রণ, আইনশৃঙ্খলা পুনরুদ্ধারসহ স্বাধীন নির্বাচন কমিশন সংস্কারসহ বেশ কিছু ব্যাপারে পরমার্শ দিয়েছি। সরকার সেটা ইতিবাচক হিসেবে গ্রহণ করেছে বলে জানান মিজানুর রহমান। সরকার গঠিত কমিশনের বিষয়ে লিখিত প্রস্তাব কয়েক দিনের মধ্যে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে দেয়ার কথা জানান মিজানুর রহমান।
এদিন ধারাবাহিক সংলাপের অংশ হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কয়েকটি রাজনৈতিক দল ও জোটের সংলাপে বসছেন। এতে প্রথমে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গণফোরামের ৯ সদস্যের প্রতিনিধি দল সংলাপে অংশ নেয়। প্রতিনিধি দলের অন্য সদস্যরা হলেনÑগণফোরামের সমন্বয় কমিটির চেয়ারম্যান মোস্তফা মহসীন মন্টু, কো-চেয়ারম্যান এসএম আলতাফ হোসেন, সুব্রত চৌধুরী, সদস্য সচিব মিজানুর রহমান, সদস্য এ কে এম জগলুল হায়দার আফ্রিক, মহিউদ্দিন আবদুল কাদের, মোশতাক আহমেদ ও সুরাইয়া বেগম।

চতুর্থ দফা সংলাপে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, জাতীয় পার্টি-বিজেপি (পার্থ), ১২ দলীয় জোট, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল, লেবার পার্টিসহ আরও কয়েকটি দলকে সংলাপে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে বলে জানা গেছে।
এর আগে গত ৫ অক্টোবর বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, গণতন্ত্র মঞ্চ, হেফাজতে ইসলাম, বাম গণতান্ত্রিক জোট, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, এবি পার্টি, গণঅধিকার পরিষদের সঙ্গে সংলাপ করেন প্রধান উপদেষ্টা। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটে গত ৫ আগস্ট। ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তার সরকার এরই মধ্যে তিন দফা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করেছে।
তবে আগের দুই দফা ও ভবিষ্যতেও ‘ফ্যাসিবাদী শাসন’ ও ‘গণহত্যায়’ অভিযুক্ত আওয়ামী লীগকে সংলাপে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি এবং হবে না বলে আগেই জানিয়েছে সরকার। আর আওয়ামী লীগের সময় ‘গৃহপালিত’ বিরোধী দল তকমা পাওয়া জাতীয় পার্টিকে প্রথম দফায় সংলাপে ডাকা হলেও পরে এবার বাদ পড়েছে।